বাসব রায়: ‘রেজিস্ট্রার জেনারেল অব ইন্ডিয়া স্বাক্ষর করেননি, তাই অসমের এনআরসি তালিকার এখনও কোনও মূল্য নেই। ফলত উনিশ লক্ষ নামহীন কবে নোটিশ পাবেন সেটা বলা যাবে না।… সিএএ বা কা যাই বলুন না কেন, এখনও আইন হয়নি। সরকার নোটিফিকেশন দেয়নি, কবে থেকে আইন প্রযুক্ত হবে সেটা আগে বলুক।
এদিকে মামলা চলছে। সাধারণত মামলা চলাকালীন এরকম নোটিফিকেশন হয় না কিংবা তার নিয়ম তৈরি হয় না, তাই সিএএ গোটা ভারতে কালকেই প্রযুক্ত হবে এটাও বলা যাচ্ছে না। আর এনআরসি-ছুট উনিশ লক্ষের মধ্যে অমুসলমানরা কীভাবে সিএএ-র সুবিধে পাবেন সে নিয়েও একটা প্রশ্নচিহ্ন আছে। কেন না হলফনামা দিয়ে বলেছেন যে, তারা এদেশের নাগরিক বা বাসিন্দা এবং সেটাও ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে। আর সিএএ-র সময়কাল শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ গঠনের দিন থেকে অর্থাৎ ২৫ মার্চ ১৯৭১। যার অর্থ, সিএএ-র সুবিধা নিতে হলে নামহীনদের স্বীকার করে নিতে হবে যে, তারা কোনও একটা মিথ্যে বলছেন। সেখানেও আরেকটা সংকট দেখা দিতে পারে।’
করিমগঞ্জ থেকে এসেছেন আইনজীবী শিশির দে। এখন ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের বিচারক। তাঁর সঙ্গে গোটা সন্ধে হয়ে খানিকটা রাত পর্যন্ত কাটল হাফিজ রশিদ আহমেদ চৌধুরীর চেম্বারে। অসম-নাগাল্যান্ড-মিজোরাম-অরুণাচল প্রদেশ-সিকিমের বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হাফিজ রশিদ প্রয়োজনাতিরিক্ত একটা কথা তো দূরঅস্ত শব্দও করেন না।
সেই তিনি বলছেন, ‘এনআরসি হলে, যদি হয়, ভারতের একজন মুসলমানকেও অনাগরিক করার ক্ষমতা নেই কোনও আইনে। গোটা ভারতের জন্য বিদেশি নির্ধারণের নির্দিষ্ট কোনও তারিখ, মানে কাট-অব-ডেট নেই। নাগরিকত্ব আইনই হাতিয়ার। এবং যিনি বহুদিন ধরে এদেশে থাকেন তার নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য আইনেই বিভিন্ন বিধান রয়েছে। ধরুন, এমন কেউ, ধরা যাক, কোনও সন্ন্যাসী, পূর্বাশ্রম উচ্চারণ করেন না, স্বাভাবিকভাবেই তার কোনও নথি থাকবে না। কিন্তু তারও নিজেকে ভারতীয় নাগরিক প্রমাণের বিবিধ ব্যবস্থা আছে, যেমন আছে মুসলমান কিংবা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী ও জনগোষ্ঠীর।’
ভারতজুড়ে এনআরসি আর নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে। এ বিষয়ে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, ‘হওয়ারই কথা। অসমে এনআরসি-তে উনিশ লক্ষ মানুষ নামহীন হয়েছেন। প্রায় হাজারের মতো মানুষ রয়েছেন ডিটেনশন ক্যাম্পে। এর একটা প্রতিক্রিয়া তো হবেই। কে আর সাধ করে ডিটেনশন ক্যাম্পে যেতে চান। তাই পপুলেশন রেজিস্ট্রার বা এনআরসি এবং এখন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন, মানুষ কিছুই মানতে চাইছে না।’