ওয়েবডেস্ক:- গোটা দেশ আজ তাকিয়ে দিল্লীর বিধানসভা ভোটের ফলাফলের দিকে তাকিয়ে। অবশেষে বিজেপির আশায় জল ঢেলে আবার মসনদে আপ। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচন। বিজেপি যখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে মুখ করে দাপটের সঙ্গে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে, তখন কার্যত দ্বিধা বিভক্ত বিরোধী শিবির। মহাজোটের রঙ্গমঞ্চ তৈরি হলেও মুখ নিয়ে কাড়াকাড়ি পড়েছিল বিরোধী শিবিরে। মমতা, মায়া, রাহুল বাদ যাননি কেউই তবে সেই মুখের অভাবে দিল্লির মসনদ দখলের লড়াইয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছিল বিরোধীরা। ছোট পরিসরে হলেও আরও একবার নির্বাচনী যজ্ঞে মেতেছে দিল্লি। কেজরির বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে জয় আসবে, বিজেপি আশাবাদী হলেও নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে 62 টি আসনে এগিয়ে রয়েছে আপ, অন্যদিকে বিজেপি মাত্র ৭। কংগ্রেস অবশ্য লড়াইয়েই নেই। একেবারে শূন্য আসনে লজ্জার হারের দিকেই হাঁটছে কংগ্রেস।
প্রচারে কোনও ত্রুটি ছিল না। ২০০ জন সাংসদ, কেন্দ্রের ৭০ জন মন্ত্রী, বিজেপি শাসিত একাধিক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তা সত্ত্বেও কেজরি ঝড়ে ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যাওয়ার পথে গেরুয়া। কিন্তু কেন এই করুন দশা বিজেপির? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের দাবি, শাহিনবাগকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন বনাম কুকথা যে একটা বড় কারণ সেটা বলার অপেক্ষাই রাখে না না তা সত্ত্বেও বিজেপির এত খারাপ ফলের পিছনে অন্যতম আরও একটি কারণ হল মুখের অভাব। গোটা নির্বাচনে ঢালাও প্রতিশ্রুতি দিলেও মুখ্যমন্ত্রী মুখ জোগাড় করতেই পারেনি বিজেপি। ভারতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে আগের চেয়ে অনেক বেশি বদল এসেছে বিগত কয়েক বছরে। রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান যিনি হবেন, তিনি কে? তা এখন জানতে চায় দেশের জনগণ। অথচ প্রচারে দাপট দেখালেও দিল্লিতে মুখ ঠিক করতে পারেনি বিজেপি, যার জেরেই দিল্লি হাতছাড়া হচ্ছে মোদী শাহের।
একেবারে ২০১৯ লোকসভায় বিরোধিদের যা হাল হয়েছিল, সেটাই এবার হল দিল্লির নির্বাচনে। বিজেপির তরফে বোধহয় ভেবে নেওয়া হয়েছিল মোদীকে মুখ করেই বাকি রাজ্যগুলির ছকে দিল্লিকেও মাত করবে গেরুয়া শিবির। তবে সব অঙ্ক যে একসূত্রে মেলে না। একথা অবশ্য এদিন স্বীকার করলেন রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘দিল্লিতে বিজেপির হারের মূল কারণ বিজেপির তরফে কোনও মুখ না দেওয়া।’ মুখ না থাকার কারণেই, দিল্লির নির্বাচন কোথাও গিয়ে দাঁড়িয়েছিল মোদী বনাম কেজরির। সেখানে কেন্দ্রের প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয়ই রাজ্যের উন্নয়নে উঠেপড়ে লেগে থাকবেন না? ফলস্বরূপ দিল্লিবাসীর কাছে সহজলভ্য ছিলেন কেজরিওয়াল। দিল্লিতে বিজেপির মুখ কে হবেন তা নিয়ে জোর সয়ালও করেন কেজরি ওপেন চ্যালেঞ্জের ডাকও দেন তিনি। যদিও সে ডাকে সাড়া দেয়নি গেরুয়া শিবির।
এর পাশাপাশি শাহিনবাগের সিএএ বিরোধী আন্দোলনবুমেরাং হয়ে ধরা দিয়েছে বিজেপির কাছে। অনুমান করা হচ্ছিল শাহিনবাগকে হাতিয়ার করে দিল্লির মন জয় করবে গেরুয়া বাহিনী। চলছিলও তাই। বিজেপির সমস্ত নেতাদের মুখে মুখে ফিরছিল শাহিনবাগ কথা, গুলি মারা থেকে, জঙ্গি শাহিনবাগকে দেশদ্রোহী তকমা দিতে কার্পন্য করেননি কোনও বিজেপি নেতা। সেখানেই শাহিনবাগকে নিজের থেকে বহু দূরে রেখেছিলেন কেজরওয়াল। এক বারের জন্যও সেখানে যাননি তিনি। উল্টে কেন্দ্রকে বলেছিলেন ক্ষমতা তাদের হাতে পারলে খালি করাক শাহিনবাগ। এদিকে শাহিনবাগকে হাতিয়ার করে বিজেপি যে ভোট যুদ্ধে নেমেছে তা টের পেয়েছিল দিল্লির মানুষ। তারই ফল বোধহয় মিলল।
একেবারে ধরাশায়ী হয়ে একের পর এক রাজ্য বিজেপির হাতছাড়া হয়ে চলেছে।