আবার মুর্শিদাবাদের রাজমিস্ত্রিকে ঝাড়খণ্ডে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন গ্রেপ্তার ৩

Spread the love

শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: কাশ্মীরের পর এবার ঝাড়খণ্ড। জঙ্গি হানায় মুর্শিদাবাদের পাঁচ বাঙালি শ্রমিককে গুলি করে খুনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ফের ওই জেলারই এক রাজমিস্ত্রি যুবককে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল। ঘটনাস্থল ঝাড়খণ্ড। মৃত যুবক ইসরাইল শেখ (৩৩) মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর মহকুমার রঘুনাথগঞ্জ থানার কাটাখালি গ্রামের বাসিন্দা। শুক্রবার সকালে এই ঘটনার কথা রঘুনাথগঞ্জের কাটাখালি গ্রামে চাউর হতেই গোটা গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। সূত্রের খবর, ঘটনার জেরে ঝাড়খণ্ডের গোয়েলকের থানার পুলিশ ইতিমধ্যে তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, মৃত যুবক ঝাড়খণ্ডের গোয়েলকেরায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। গোয়েলকেরাতেই ওই যুবককে বুধবার সকালে কুপিয়ে খুন করে দুষ্কৃতীরা। স্থানীয় মানুষজন ঝাড়খণ্ডের গোয়েলকেরায় একটি পরিত্যক্ত কুয়োর মধ্যে ইসরাইলের ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখতে পান। এরপর সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারাই পুলিশে খবর দেন। পুলিশ এসে কুয়ো থেকে দেহটি উদ্ধার করে মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জ থানায় যোগাযোগ করে।
ঘটনার খবর পৌঁছতেই রঘুনাথগঞ্জে ওই যুবকের পরিবারে কান্নার রোল। মৃত ইসরাইল শেখের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’মাস আগে একটু বেশি রোজগারের আশায় ইসরাইল ঝাড়খণ্ডের গোয়েলকেরায় গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে কী এমন ঘটনা ঘটল যে ঘরের ছেলেকে এভাবে খুন হতে হল তা নিয়ে ইসরাইলের গোটা পরিবার হতবাক। নবাবের জেলা মুর্শিদাবাদে ভিন রাজ্যে কাজে গিয়ে বারবার এভাবে গরিব মানুষের খুনের ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শ্রম দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। মন্ত্রী বলেন, “বাঙালি শ্রমিকরা দেশের কোথাও সুরক্ষিত নন। কেন্দ্র চাইছে প্রত্যেক রাজ্যের মানুষ তাঁর নিজের রাজ্যেই থাকুন। অন্য রাজ্যে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। এ রাজ্যের শ্রমিকরা ভিন রাজ্যে কাজে গেলে সেখানে গরিব মানুষগুলির নিরাপত্তার দায় নিতে হবে কেন্দ্রকেই। আমরা খুন হওয়া শ্রমিক পরিবারটির পাশে রয়েছি।”

চলতি সপ্তাহেই কাশ্মীরের কুলগ্রামে মুর্শিদাবাদের ছয় বাঙালি শ্রমিককে দাঁড় করিয়ে বুলেটে ঝাঁজরা করে দিয়েছিল জঙ্গিরা। ঘটনাস্থলেই পাঁচ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল। ওই শ্রমিকরা বাড়তি রোজগারের আশায় কাশ্মীরে আপেলর খেতে কাজ করতে গিয়েছিলেন। মুরসেলিন, রফিক, নাজিমুদ্দিন, কামরুদ্দিনরা মারা গেলেও গুরুতর জখম অবস্থায় জহিরুদ্দিন সরকারকে শ্রীনগর হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল। এছাড়াও ঘটনার সময় সতীর্থদের জন্য ভাত আনতে চলে যাওয়ায় প্রাণে বেঁচে যান বাসিরুল সরকার নামে আরেক শ্রমিক। জখম জহিরুদ্দিন সরকার এখনও শ্রীনগরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মৃত শ্রমিকদের পরিবারগুলিকে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে বৃহস্পতিবার দুঃস্থ ওই পাঁচটি পরিবারকে আরও দু’লক্ষ টাকা করে আর্থিক সহায়তা তুলে দিয়েছেন পরিবহণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। শ্রীনগরে চিকিৎসাধীন জহিরুদ্দিনের সঙ্গে তাঁর পরিবারের কথা হয়েছে। রাজ্যের মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীও কথা বলেছেন জহিরুদ্দিনের সঙ্গে। ঠিক হয়েছে, জহিরুদ্দিনের ফিরে এলে তাঁর জন্য চুক্তিভিত্তিক সরকারি চাকরির বন্দোবস্ত করা হবে। শুক্রবার জহিরুদ্দিন সরকারের কলকাতায় চিকিৎসার জন্য ফেরার কথা। এখন তাঁরই অপেক্ষায় সাগরদিঘির বাহালনগর গ্রাম।

সৌজন্য :- প্রতিদিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.