নিউজ ডেস্ক: – স্থানীয় নির্বাচনে কেন্দ্রের শাসকদলের আগ্রাসী মনোভাব খুব একটা দেখা যায় না। কিন্তু বৃহৎ হায়দরাবাদ পুরনিগমের নির্বাচনের আগে চুড়ান্ত আগ্রাসী মনোভাবই দেখাচ্ছে বিজেপি। ভাবখানা এমন, যেন যেভাবেই হোক, এই দক্ষিণের এই মহাগুরুত্বপূর্ণ শহরের শাসনভার তাঁদের দখল করতেই হবে।
আগামী ১ ডিসেম্বর বৃহৎ হায়দরবাদ পুরনিগমের ১৫০টি আসনের নির্বাচন। গতবার যেখানে তেলেঙ্গানার শাসক টিআরএস ৯৯টি এবং আসাদউদ্দিন ওয়েইসির এআইএমআইএম ৪৪টি আসন পেয়েছিল। বিজেপি-টিডিপি জোট পেয়েছিল মাত্র ৪টি আসন। দুটি আসন গিয়েছিল কংগ্রেসের দখলে। কিন্তু এবারে ছবি অন্য। বিজেপি প্রায় সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছে এই পুরনিগম দখল করতে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়া বিজেপির শীর্ষস্তরের সব নেতাই প্রচার সেরে ফেলেছেন হায়দরাবাদে। তেলেঙ্গানা রাজ্য বিজেপির সভাপতি বান্দি সঞ্জয় সিং বেশ কিছুদিন ধরেই চার মিনারের শহরে ঘাঁটি গেড়ে পড়ে রয়েছেন। বিজেপি যুব মোর্চার সভাপতি তেজস্বী সূর্য প্রচারে গিয়ে হায়দরাবাদকে রোহিঙ্গা এবং পাকিস্তানি অনুপ্রবেশকারীদের আস্তানা বলে তোপ দেগে এসেছেন। একই তোপ দেগেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জি কিষেণ রেড্ডি।
শুক্রবার খোদ বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা প্রচারে গিয়ে হায়দরাবাদ দখলের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করে এসেছেন। তাঁর দাবি, হায়দরাবাদ দখলের মাধ্যমেই তেলেঙ্গানায় কেসিআরের বিদায় ঘণ্টা বাজাবে বিজেপি। শনিবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রচারে গিয়েও একই দাবি করে এসেছেন। রবিবার সেখানে যাচ্ছেন খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । ভোটপ্রচারের শেষদিনে চমক দিতে ভাগ্যলক্ষ্মী মন্দিরে যাবেন তিনি। তারপর যাবেন চার মিনার, শেষে রোড শো। আসলে হায়দরবাদ পুরনিগমের নির্বাচনের আগে স্পষ্টত নিজেদের প্রমাণিত হিন্দুত্বের নীতিতে বাজি ধরেছে বিজেপি। সেজন্যই একের পর নেতা গিয়ে ধর্মীয় ‘বিভাজন’ উসকে দিচ্ছেন। অমিত শাহর মন্দির ভ্রমণের পরিকল্পনাও সেই হিন্দুত্ব নীতিরই অংশ বলে মনে করা হচ্ছে।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হল, সামান্য একটা পুরনিগম দখলের জন্য বিজেপি এত কেন ঝাঁপাচ্ছে সেটাও এখন প্রশ্ন ? আসলে গেরুয়া শিবির দেশের বেশিরভাগ রাজ্যে নিজেদের জমি শক্ত করে ফেললেও দাক্ষিণাত্যে এখনও তাঁদের ভিত দুর্বল। আর দক্ষিণের দুই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য অন্ধ্র এবং তেলেঙ্গানার রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হয় হায়দরাবাদ থেকে। তাই এই শহরটি যেভাবেই হোক দখল করতে চাইছে গেরুয়া শিবির। আর তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এটা AIMIM সুপ্রিমো আসাদউদ্দিন ওয়েইসির ঘরের মাঠ। সেখানে তাঁকে মাত দিতে পারলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাবে। এক, ওয়েইসির ডানা ছাটা যাবে। আর দুই, দেশব্যাপী বিরোধীরা বিজেপি এবং AIMIM-এর গোপন আঁতাতের যে অভিযোগ করছে, সেটাও পুরোপুরি খারিজ করে দেওয়া যাবে। সম্ভবত সেকারণেই হায়দরাবাদ দখলের লক্ষ্যে পুরোদমে নেমেছে বিজেপি।
এখন দেখার শেষ হাসি কে হাসে,ভোট যে বড় বালাই।
সৌজন্য :- সংবাদ প্রতিদিন