সাংবাদিক মোকতার হোসেন মন্ডলের সিএএ-এনআরসি নিয়ে এক তথ্য বহুল বই প্রকাশিত হল

Spread the love

প্রকাশিত হল সিএএ-এনআরসি নিয়ে সাংবাদিক মোকতার হোসেন মন্ডলের তথ্য বহুল বই

নিজস্ব সংবাদদাতা,কলকাতা:প্রকাশিত হল সিএএ-এনআরসি নিয়ে সাংবাদিক মোকতার হোসেন মন্ডলের তথ্য বহুল বই ‘দাসত্বের এনআরসি-বিভেদের সিএএ’। বৃহস্পতিবার www.moktertoday.com ওয়েবসাইটে বইটি প্রকাশিত হয়। বইটিতে এনআরসি ও সিএএ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
সাংবাদিক মোকতার হোসেন মন্ডল জানান,’বইটি সাধারণ পাঠক পাঠিকাদের উদ্দেশ্যে লেখা যারা মাঠে কাজ করে, দিন আনে দিন খায়। এমন অনেক মানুষ আছে যারা একটু আধটু পড়াশোনা করে সংসার জীবনের ব্যাস্ততায় নিয়মিত পড়তে পারেন। সিএএ, এনআরসি যে ভারতের জন্য কত ভয়ঙ্কর তা সকলের জানা দরকার, তাই এই বই লিখেছি স্বল্পশিক্ষিত মানুষদের জন্য যারা সমাজের একটা বড় অংশ।
প্রথমেই বলে রাখি, আমরা বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা নির্যাতিত সংখ্যালঘু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব চাই। কিন্তু আইনে কোনও ধর্মের নাম রাখা চলবে না। ইতিমধ্যেই দেশে যে আইন আছে তাতেই ওইসব দেশ থেকে আসা সংখ্যালঘুরা নাগরিকত্ব পেয়েছে, বিজেপি সরকার তাদের ২০০৩ সালের নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহার করে নিলেই ২০১৯ সালের বিভেদমূলক আইনের কোনও দরকার পড়বে না। অত্যাচারিত সংখ্যালঘু বা দেশান্তরিত উদ্বাস্তুদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিতে হবে কোনও বিভেদমূলক আইন ছাড়াই।’
তিনি আরও জানান,’জাতীয় পরিচয়পত্র মানে ভারতের কাউকে আতঙ্কিত করা নয়। আসামের এনআরসি থেকে প্রমাণ, লক্ষ লক্ষ ভারতীয় শুধুমাত্র নথির গল্পের জন্য বেনাগরিক হচ্ছে! বহু প্রকৃত ভারতীয় ডিটেনশন ক্যাম্পে। এদেশে দীর্ঘদিনের স্থায়ী ঠিকানা থাকা সত্তেও নথির অভাবে হোক কিংবা প্রশাসনের কর্তাদের ‘ভুল সিদ্ধান্তের’ কারণে হোক কিংবা নির্দিষ্ট ধর্ম, ভাষা ও জাতিকে টার্গেট করার কারণে হোক, ডিটেনশন ক্যাম্পে নিরীহ মানুষকে থাকতে হচ্ছে। ওইসব লোক যদি বিদেশি হয় তবে ভিন রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমাধান করা যায়। কিন্তু কতদিন ডিটেনশন ক্যাম্পে মানুষ থাকবে, তারপর আইনি লড়াই যে চালাচ্ছে সে ভারতীয় নাকি ভিন দেশি, ভিন দেশি হলে সে কোন দেশের? এইসব হাজার প্রশ্ন ওঠে আসছে। কেন রাষ্ট্রপতির পরিবার, প্রাক্তন সেনা কিংবা ৫১, ৬৪ সালের জমির দলিল থাকা সত্ত্বেও ডি ভোটার, যার কোনও নথি সংগ্রহে নেই বা প্রশাসনিক কারণে ‘ত্রুটিপূর্ণ’ নথি তাদের কেন বেনাগরিক হতে হবে? জাতীয় পরিচয়পত্র বাংলাদেশ দিয়েছে, সেখানে তো বিজেপি ও কিছু হিন্দুত্ববাদী নেতাদের মতো ‘ঘুসপেটিয়া’ ‘ অনুপ্রবেশকারীদের ঘাড় ধাক্কা’ দিয়ে দাঁড়ানোর কথা বলে জনগণকে আতঙ্কিত করেনি। লক্ষ লক্ষ মানুষকে বেনাগরিক করেনি, কোটি কোটি দেশবাসী কেন আজ রাজপথে? ২০০৩ সালে বিজেপি সরকার যখন আইন করে এনআরসি করার কথা বলেছে তখনও তো মানুষ প্রতিবাদ করেনি, গড়ে উঠেনি শাহীনবাগ! আসলে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া নয়, একটা জনপদকে হয়রানি করা, আতঙ্কিত করা ও বিভিন্ন অধিকার থেকে বঞ্চিত করে দাস বানাবার জন্য এই এনআরসি।’
মোকতার হোসেন মন্ডল আরও জানান,’ আমরা সবাই অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে যে দেশ থেকে এসেছে সেই দেশে ফেরত পাঠাতে চাই। কিন্তু এরজন্য গোটা ভারতের মানুষকে নাগরিকত্বের প্রমানের পরীক্ষায় বসতে হবে কেন? পৃথিবীর আর কোন রাষ্ট্রে একবিংশ শতকে দেশের জনগণকে এইভাবে রাস্তায় বের করে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে বলা হচ্ছে? এত গোয়েন্দা, এত সেনাবাহিনী, এত নিরাপত্তাকর্মী, পুলিশ-প্রশাসন, সরকার ও বিভিন্ন সংস্থা থাকা সত্ত্বেও এনআরসি করে দেশের একশো তিরিশ কোটি মানুষকে নথি নিয়ে লাইনে দাঁড়াতে হবে! অনুপ্রবেশকারী কারা গোয়েন্দা বিভাগ ভালো জানেন। তাদের প্রতি আস্থা রেখে, তাদের নথিভুক্ত তালিকা দেখে বিদেশি রাষ্ট্র থেকে যারা এসেছে তাদের ওইসব রাষ্ট্রে পাঠিয়ে দিন সরকারিভাবে, নিয়ম মেনে। ব্যস।’
লেখকের অভিযোগ,’আসলে এই সরকারের অনেকে মিথ্যা কথা বলছেন। একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েও বারবার বলেছেন, আগে সিএএ পরে এনআরসি। এখন বলছেন এনআরসি নিয়ে আলোচনা হয়নি। মানুষ সব দেখছে। এনআরসি যদি না হয় তাহলে অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের ২০০৩ সালের আইন বাতিল করুন। ওটা বাতিল হলেই বুঝবো, আপনারা এনআরসি করবেন না। এনআরসি করতেই তো বিজেপি সরকার ২০০৩ সালে সিএএ এনেছে। এটা তাদের বহু বছর আগের পরিকল্পনা।’
মোকতার হোসেন মন্ডল আরও জানান,’এই বইয়ে আমরা সিএএ, এনআরসি যে দেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর, সভ্যতার জন্য কতটা লজ্জার তা বলার চেষ্টা করেছি। সহজ সরল ভাষায় ও উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে। আমরা কোনও দলের বিরুদ্ধে লিখিনি, আমরা ভারতবর্ষের মানুষের পক্ষে লিখেছি। ভারতের জনগণকে কিছু কথা জানানোর জন্যই এই বই। আরএসএস, বিজেপি বা রাজনৈতিক হিন্দুত্ববাদী দলগুলোর নেতা কর্মীরাও বিষয়টি বুঝে দেশের সকল মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করবে, বিরোধী দলগুলি নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে আরও সচেতন হবে, রাজনৈতিক সংকীর্ণ স্বার্থের বাইরে জনগণের স্বার্থে কাজ করবে, সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যেন একে অপরের ওপর আস্থা রাখতে পারে, বিভিন্ন মত ও আদর্শ যেন মানুষের কল্যাণে, দেশের কল্যানে কাজে লাগে, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে মানুষ যাতে মুক্তি পায়, সেই উদ্দেশ্যে এই বই।’ বইটি পড়তে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন-https://www.moktertoday.com/504/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.