ডিজিটাল ডেস্ক:- প্রবল বাদসনবাদের মধ্যে সংসদে পেশ হল CAB । সরকার এবং বিরোধী পক্ষের সাংসদরা প্রবল বাদাবুবাদে জড়িয়ে পড়েন। সোমবার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ঘিরে শুরু থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে লোকসভা। বেলা ১২.১০ নাগাদ বিলটি সংসদে পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তারপরই প্রবল প্রতিবাদ শুরু করেন বিরোধীরা। গতিক এমন দাঁড়ায় যে অমিত শাহকে জার্মানির নাৎসি একনায়ক হিটলার ও ইজরায়েলের প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়েনের সঙ্গে তুলনা করেন হায়দরাবাদের সাংসদ আসাদউদ্দিন ওয়েইসি।
এদিন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদে সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (মিম) প্রধান বলেন, “আমি অধ্যক্ষ মহোদয়ের কাছে আবেদন করব এই বিল যাতে পেশ না করা হয়। এহেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাত থেকে দেশকে বাঁচান। না হলে পরবর্তী কালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর নাম হিটলারের কুখ্যাত নুরেমবার্গ জাতি আইন ও ডেভিড বেন গুরিয়েনের ইজরয়েলের নাগরিকত্ব আইনের মতোই এই বিলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকবে।” ওয়েইসির এহেন বয়ানের তীব্র প্রতিবাদ করেন বিজেপি সাংসদরা। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মিম প্রধানকে ভর্ৎসনা করেন স্পিকার ওম বিড়লা। তিনি সাফ জানিয়ে দেন, সদস্যরা সাংসদসুলভ আচরণ করুন। ওয়েইসির বয়ান সংসদের রেকর্ডে থাকবে না।
উল্লেখ্য, ১৯৩৫ সালে গেরমানির নুরেমবার্গ শহরে হিটলারের নেতৃত্বে একটি মহাসভার আয়োজন করে নাৎসি পার্টি। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় নয়া ‘রাইখ’ বা নয়া জার্মান রাষ্ট্রে ইহুদিদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। একইভাবে, ইজরায়েলের প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন গুরিয়েনের নাগরিকত্ব আইনও জাতির ভিত্তিতে তৈরি করা।
নিম্নকক্ষে বিলটি পেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিবাদে সূব হয় কংগ্রেস। উক্ত বিলটি সংবিধানে উল্লেখিত ধর্মীয় নিরপেক্ষতার অবমাননা। বিলটি সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ও সংবিধানের ১৪ নং ধারা উলঙ্ঘন বলে দাবি করেন কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরি। তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ সৌগত রায়ও বিলটির প্রতিবাদে সরব হন। পালটা দিয়ে অমিত শাহ বলেন, ‘১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ করছিল কংগ্রেস। তাই আজ এই বিলটি আনার প্রয়োজন পড়েছে।’ এরপরই বিল পেশের পক্ষে পড়ে ২৯৩ টি ভোট, বিপক্ষে ৮২ টি। এই ফলাফলের পর অমিত শাহ পেশ করেন বিলটি। সাংসদদের আলোচনার জন্য ৪ ঘণ্টা সময় দেন স্পিকার।
এদিকে, সোমবার সকাল থেকেই বিতর্কিত বিলটির প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে অসম ও ত্রিপুরা। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছেন প্রতিবাদকারীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন করা হয়ছে অতিরিক্ত বাহিনী। গুয়াহাটিতে ছাত্র সংগঠন ‘আসু’-র নেতৃত্বে চলছে বিক্ষোভ মিছিল। পাশাপাশি কংগ্রেসও সুর চড়িয়েছে। তবে এর আগে আরএসএস-এর ছাত্র সংগঠন ‘অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ’ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের সমর্থনে পালটা মিছিল বের করে। মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরামেও কেন্দ্রের এই বিলটির বিরুদ্ধে সুর চড়ছে। এদিক, সোমবার ও মঙ্গলবার টানা ৪৮ ঘণ্টার বনধ ডেকেছে আসু-সহ একাধিক সংগঠন। ফলে স্বভাবিকভাবেই বিপর্যস্ত সাধারণ জনজীবন।
গোটা দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে ,বিদ্বজনদের প্রতিবাদ এবং প্রতিক্রিয়া।
সৌজন্য :- সংবাদ প্রতিদিন