ব ওয়েবডেস্কঃ- গোটা বিশ্বে আজ ইসলামোফোবিয়ায় নামে মুসলিম দের প্রতি এক পক্ষপাত মুলক আচরণ করে চলেছে। ভারতেও করোনা ভাইরাস নিয়ে কিছুটা পক্ষপাতের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর নড়ে চড়ে বসে বিশ্বের মুসলিম সংঘটন গুলি । কুয়েতের আইনজীবী এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পরিচালক মেজবেল আল শারিকা ও অপর এক কুয়েতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ভারতীয় মুসলমানদের বিষয়টি উত্থাপন করার কথা ঘোষণা করেছেন।
তিনি সহিংসতার প্রমাণাদি জোগাড় করার জন্য ভারতীয় মুসলমানদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন। ভারতে করোনা ভাইরাসকে সাম্প্রদায়িক রঙে রাঙানোর চেষ্টা ও ভারতীয়দের ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী মন্তব্যের বিরুদ্ধে এবার ভারতকে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করল আরব দেশগুলো।
প্রয়োজনে এমনকি ভারতের পণ্য বয়কটের হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। আরব দেশগুলিতে বসবাসরত প্রবাসী ভারতীয়দের ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়া ও ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাব আরবীয় নাগরিক, কর্মী ও বুদ্ধিজীবীদের দৃষ্টিতে চলে এসেছে যেহেতু ভারতের মুসলমানদের বিরুদ্ধে অপরাধই কেবল বৃদ্ধি পেয়েছে না,
সোশ্যাল মিডিয়ায় ডানপন্থী ব্যক্তিদের দ্বারা আক্রমণও দেখা গেছে । এটা বৃদ্ধি পেয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমে কর্তৃক করোনা মহামারীটি সাম্প্রদায়িক কোণ থেকে বিচার করা ও একটি বিশেষ জাতিকে আক্রমণ করার পর থেকে।
সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ইত্যাদির মতো উপসাগরীয় দেশগুলিতে ডানপন্থী ভারতীয় প্রবাসীদের করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মুসলমানদের দোষারোপ করতে দেখা যায়, যার ফলে তারা ইসলামের সমালোচনা করতে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায়
‘করোনার জিহাদ’ বলে প্রচার করতে থাকে। উপসাগরীয় দেশগুলোতে প্রচুর ভারতীয়কে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে তাদের পোস্টের জন্য বিতাড়ন করার সত্ত্বেও, সাম্প্রতিক দিনগুলিতে তাদের কথিত ইসলামফোবিক পোস্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।
দুবাইয়ে হিসাবরক্ষক হিসাবে কাজ করা এক ভারতীয় নাগরিককে তার মুসলিম বিরোধী পোস্ট ভাইরাল হবার পর তাকে আরব আমিরশাহী সরকার দেশ থেকে বহিষ্কার করেছে। আমিরাতে কর্মরত আরেক ব্যক্তির পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভের সৃষ্টি করলে তাকে আমিরাত সরকার বহিস্কার করে।
সেখানে আরও কিছু ব্যক্তি ছিলেন, যারা দুবাই পুলিশকে ইসলাম ও মুসলমানদের উপহাস করার জন্য অভিযোগ করা হয়েছিল। কুয়েতে বার্গার কিংয়ের একটি শাখা তাদের এক ভারতীয় গোঁড়া হিন্দু কর্মচারীর বৈষম্যমূলক পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পরে উক্ত কর্মচারীকে বরখাস্ত করেছে। বিকে ম্যানেজমেন্টও পুনর্ব্যক্ত করেছিল যে এই জিনিসগুলি সহ্য করা হবে না।
ভারতীয়দের এই মুসলিম বিদ্বেষী মনোভাব ও কর্মের নিন্দা জানিয়েছেন জহরানী আবিদী, আবদুর রহমান নাসার, প্রিন্সেস হেন্ড আল কাসেমি সহ আরও অনেক আরব উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ। কুয়েতের আবদুর রহমান নাসসার ভারতীয় মুসলমানদের সাথে যেভাবে আচরণ করা হচ্ছে তা নিয়ে তীব্র সোচ্চার হয়েছেন।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে ৫৩ টি মুসলিম দেশ থেকে ভারতীয়রা বছরে ১২০ বিলিয়ন ডলার অর্জন করেন। শারজাহ রয়্যাল ফ্যামিলির প্রিন্সেস হিন্দ আল কাসিমি একজন টুইটার ব্যবহারকারীকে সাবধান করে দিয়েছেন ।
তাকে কোভিড -১৯ মহামারী নিয়ে মুসলমানদের লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি বিদ্বেষমূলক টুইট করার জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। উক্ত ভারতীয় কট্টরপন্থী তাচ্ছিল্য করে বলেছিল, “আপনি যা করতে পারেন করুন”, প্রিন্সেস উক্ত টুইটাকারীর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন:
“তুমি এই ভূমি থেকে রুজি রোজগার কর আবার এই ভূমিকে তাচ্ছিল্য কর, তোমার তাচ্ছিল্য নজরদারির বাইরে যাবে না।” পরে প্রিন্সেস তাকে মারাত্মক পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করার পরে তার সমস্ত সামাজিক মিডিয়া প্রোফাইলগুলি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডধারক সুহেল আল জারুনি টুইট করে জানিয়েছেন যে, সংযুক্ত আরব আমিরাত বিভিন্ন ধর্মীয় পটভূমির বহু সম্প্রদায়কে রেখেছে ও তাদের সাথে মতবিনিময় করে।
অতএব তা এমন কোন জিনিসকে সমর্থন করতে পারে না যা কোন ধর্মের ভাবাবেগকে অসম্মানিত করে। ইমরতি ব্যবসায়ী নূরা আল ঘুরাইর এক মুসলিম বিদ্বেষী ভারতীয় কে সুন্নী মুসলমানদের বিরুদ্ধে তার টুইটের জন্য তাকে কড়াভাবে সতর্ক করেন।
নূরা দুবাই পুলিশকে ট্যাগ করেন এবং হুঁশিয়ারি দেন যে, “বর্জন ও ঘৃণার যে কোনও আহ্বান গ্রহণ করা হবে না আমাদের ভূমিতে।”
কুয়েতের আইনজীবী এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পরিচালক মেজবেল আল শারিকা ও অপর এক কুয়েতি জেনেভাতে জাতিসংঘের মানব কাউন্সিলে ভারতীয় মুসলমানদের বিষয়টি উত্থাপন করার কথা ঘোষণা করেছেন।
তিনি সহিংসতার প্রমাণাদি জোগাড় করার জন্য ভারতীয় মুসলমানদেরকে আহ্বান জানিয়েছেন। সৌদি আলেম আবিদ জহরানী জিসিসি এবং মধ্য-প্রাচ্যে কাজ করা ব্যক্তি যারা মুসলমান ও ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে সেই সমস্ত ব্যক্তির তালিকা তৈরির প্রস্তাব দিয়েছেন।
কুয়েতের আল-আনবা খবরের কলামিস্ট ডাঃ মোহাম্মদ আল শরিকা ভারতীয় মুসলমানদের সমর্থনে টুইট করে জানান যে, তাঁরা উগ্রপন্থী এবং সবচেয়ে নৃশংস অপরাধের শিকার হচ্ছেষ এবং তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করা ভারতীয় অমুসলিমদের মধ্যে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ পোষণ যেন স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ মুসলিম বিশ্ব যদি ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাহলে ভারতের অর্থনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যপক বিপর্যয় আসবে। এদিকে আরব বিশ্বের কড়া হুঁশিয়ারির পর ৮০% ঘুরে গেলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
তিনি এক টুইটবার্তায় ভারতীয়দের ভ্রাতৃত্ববোধের বার্তা দিয়েছেন এবং করোনা মহামারীতে জাতপাত নেই বলে জানিয়েছেন।