অয়ন বাংলা নিউজ ডেস্ক:- নোটবন্দির পর আরোও একটা ভুল সিদ্ধান্ত নমোর । গত চার বছর ধরে এনআরসি নবায়নের কাজ চলছে, ইতিমধ্যে সরকার ১২০০ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে আর এখন বিজেপি সরকারের মনে পড়ল এনআরসি ভুলে ভরা? তা হলে প্রশ্ন ওঠে এতদিন কী করল বিজেপি সরকার? ৩১ আগস্টের পর যখন লক্ষ লক্ষ বাঙালি নাগরিকত্ব হারাবেন, অসম জুড়ে হাহাকার সৃষ্টি হবে, এর দায় নেবে কি বিজেপি সরকার?
মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্ন উত্থাপন করে রাজ্য ও কেন্দ্রের শাসক দলকে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেন উত্তর করিমগঞ্জের বিধায়ক কমলাক্ষ দেপুরকায়স্থ। তিনি বলেন, আমি প্রথম থেকেই এনআরসি নবায়নের পদ্ধতি নিয়ে বারবার প্রশ্ন উত্থাপন করেছি। আমি প্রতিবারই বলেছি যে পদ্ধতি অনুসরণ করে এনআরসি নবায়নের প্রক্রিয়া চলছে, তাতে অনেক নিয়মকানুন মানা হচ্ছেনা। বাঙালিদের নাম কাটার জন্য নানা রকমের ষড়যন্ত্র চলছে। কিন্তু তখন বিজেপি সরকার আমাদের কথা না শুনে উল্টো এনআরসির রাজ্য সমন্বয়ক
প্রতীক হাজেলার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়, তাঁর যাবতীয় কাজকর্মকে সমর্থন করে।আর এখন বিজেপি নেতারা বলছেন এই এনআরসি ভুলে ভরা। তা হলে সরকারে থেকে এতদিন এঁরা কী করলেন? কমলাক্ষ বলেন, এনআরসি নবায়নের অজুহাতে জনগণের কাছ থেকে সংগৃহীত ১২০০ কোটি টাকা খরচ যখন করল সরকার তখন ভুলে ভরা এনআরসি প্রস্তুত হয় কী করে? বিজেপি সরকারকে এই প্রশ্নগুলির জবাব অবশ্যই দিতে হবে।কমলাক্ষ বলেন, আমরা যখন এনআরসি নবায়নের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম তখন যদি সরকার আমাদের কথা শুনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিত, তা হলে আজ যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, সেটা এড়ানাে যেত।
বাঙালিদের নাগরিকত্ব হরণ করার জন্যই যে এনআরসি নবায়নের কাজে হাতে দিয়েছে বিজেপি সরকার, এ কথার ওপর জোর দিয়ে কমলাক্ষ বলেন, আজ বিজেপি নেতারা বলছেন প্রতীক হাজেলার ত্রুটিপূর্ণ এনআরসি প্রস্তুত করছেন। কিন্তু আমরা যখন বারবার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দাবি করছিলাম, যে বাঙালিদের নাম কাটার জন্য ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্র চলছে। তখন সরকার আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। সুপ্রিম কোর্টে ভারতীয় নাগরিকদের রক্ষায় একটিও হলফনামা দাখিল করেনি। উল্টো ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গের সরকারি নথিকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।আর এখন বলছে ভুলে ভরা এনআরসি তৈরি হচ্ছে। বিশুদ্ধ ভাবে প্রস্তুত করতে আরও সময় দিতে হবে। এ কথা এতদিন পর মনে পড়লো বিজেপি নেতাদের? যখন লক্ষ লক্ষ
বাঙালির নাম কেটে দেওয়া হচ্ছিল, তখন কী করছিলেন বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা?আসলে সবই ষড়যন্ত্র। ইচ্ছে করেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে।
কমলাক্ষর প্রশ্ন, এই যে বিদেশি বা বাংলাদেশি হওয়ার আতঙ্কে ৫৬ জন বাঙালি আত্মহত্যা করলেন, সাধারণ মানুষ শুনানির নামে চরম হেনস্তার শিকার হলেন, এর দায় বিজেপি সরকারকে নিতেই হবে। ৩১ আগস্টের পর এনআরসি-ছুট নাগরিকদের নাম বিদেশি ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তখন এনআরসি-ছুট নাগরিকদের ট্রাইব্যুনালে মামলা লড়তে কমেও ৫০ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। গরিব মানুষের পক্ষে এই টাকা খরচ করা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। বেশিরভাগই হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারবেন না। তখন এই নাগরিকত্বহীন মানুষগুলির কী অবস্থা হবে, বিজেপি সরকার এসব কথা একবারও ভেবে দেখেছি কি?দেখেনি, তাই এই লক্ষ লক্ষ বাঙালিকে নাগরিকত্বহীন করার দায় বিজেপি সরকারকে নিতে হবেই। কমলাক্ষ বলেন, আমি বিজেপি সরকারকে জানিয়ে দিচ্ছি বাঙালিদের হয়ে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।কারও চোখ রাঙানিকে আমি ভয় পাই। বিজেপির মুখােশ আমি খুলে ছাড়বই। আমার বিরুদ্ধে প্রচার চলছে। আমি নাকি বিজেপিতে যােগ দিচ্ছি। ভুলেও আমি এ কাজ করব না। একটি স্বার্থান্বেষী মহল এই অপপ্রচার চালাচ্ছে। সবার অজ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি, আমি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কংগ্রেসে থাকব। (সৌজন্যে: যুগশঙ্খ)