মুর্শিদাবাদে সংখ্যালঘু কমিশনের সচেতনতা শিবির
নিজস্ব সংবাদদাতা,বহরমপুর:-
বৃহস্পতিবার রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের সচেতনতা শিবির অনুষ্ঠিত হল বহরমপুর সার্কিট হাউসে ।
আলোচনায় উঠে এল মুর্শিদাবাদ জেলার একাধিক সমস্যার কথা। একইসঙ্গে সমস্যা সমাধানের দিকরেখা তুলে ধরার চেষ্টা করেন রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান ও মুর্শিদাবাদ জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র।
বিভিন্ন সমস্যা ও আলোচনার উত্থাপিত বিষয় নিয়ে রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয়
দফতরগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলে আশ্বাস দেন আহমদ হাসান এবং রাজর্ষি মিত্র।
জেলার আধিকারিকরা অত্যন্ত সহযোগিতাপূর্ণ ব্যবহার করেছেন। মাইনোরিটি কমিশনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের ব্যাপারে আলোচনা করেছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ।
কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান জেলার উচ্চপদস্থ আধিকারিক ও বিশিষ্টদের আন্তরিক ব্যবহারে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, জেলাশাসক থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা নানা বিষয়ে কমিশনের সঙ্গে কাজ করার জন্য পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
এদিন রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের উদ্যোগে এবং মুর্শিদাবাদ জেলা কর্তৃপক্ষের সুব্যবস্থাপনায় বহরমপুর সার্কিট হাউসের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সচেতনতা শিবিরে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান আহমদ হাসান ইমরান এবং জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র।
অন্যান্য বিশিষ্টদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন এডিএম শামসুর রহমান, মুর্শিদাবাদের এসপি সূর্যগ্রতাপ যাদব, জঙ্গিপুরের এসপি আনন্দ রায়, ডোমা আধিকারিক রেনুকা খাতুন, ভগবানগোলার প্রাক্তন বিধায়ক চাঁদ মুহাম্মদ, অল ইন্ডিয়া ইমাম-মুয়াজ্জিন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মাওলানা আবদুর রাজ্জাক, সমাজকর্মী খাদিজা বানু ও দিলরুবা খাতুন, সাংবাদিক মুহাম্মদ মুস্তাক আলি ও আলমগীর হোসেন ও আনিসুর রহমান , সাহিল জৈন, বিকাশ জৈন, ডা. মীর হাসনাৎ প্রমুখ।
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজর্ষি মিত্র এদিনের কর্মসূচির লক্ষ্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধনী বক্তব্য রাখতে গিয়ে আহমদ হাসান ইমরান বলেন, মুসলিম ছাড়াও খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, শিখ এবং জৈনদের মতো প্রধান পাঁচ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের দেশের মূল স্রোতের সঙ্গে সমানভাবে উন্নয়নের জোর দিতে হবে।
এই লক্ষ্যেই রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, দেশের সংবিধান স্বীকৃত বেন্দ্রীয় অথবা রাজ্য সরকারের আইনে প্রদত্ত সংখ্যালঘুদের অধিকার লঙ্ঘন করার অভিযোগসমূহ ১৯০৮ সালের দেওয়ানি কার্যবিধি আইন অনুসারে দেওয়ানি আদালতের ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে সংখ্যালঘু কমিশন। সংখ্যালঘু কমিশন যে কোনও নথি উদ্ঘাটন ও উপস্থাপন করার জন্য আদেশ দিতে পারে। এমনকি রাজ্য সংখ্যালঘু কমিশন কোনও আদালত বা অফিস থেকে যে কোনও অগোপন নথি চেয়ে পাঠাতে পারে।
রোকেয়া নারী উন্নয়ন সমিতির খাদিজা বানু মুর্শিদাবাদের বিবাহ-বিচ্ছিন্না মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি এইসব সমস্যা জর্জরিত মহিলাদের উন্নয়নের লক্ষ্যে রাজ্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন কমিশনের চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য রাখেন। মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার আবেদন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রাক্তন বিধায়ক চাঁদ মুহাম্মদ ও অন্যান্য বক্তারা। রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের উদ্ভূত একাধিক সমস্যা নিয়েও এদিন বৈঠকে আলোকপাত করেন ডা. মীর হাসনাৎ সহ অন্যান্যরা।
বর্তমানে বেসরকারি স্কুলগুলোর রমরমার বাজারে গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর শোচনীয় অবস্থার চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মুর্শিদাবাদ জনবিকাশ সমিতির সম্পাদক তথা সাংবাদিক মুহাম্মদ মুস্তাক আলি। মাওলানা আবদুর রাজ্জাক মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লকে পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হস্টেল এবং ডোমকল ব্লকে ৪৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মিত দুটি হস্টেল উদ্বোধনের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। একইসঙ্গে তিনি শিক্ষার বহুল বিস্তারে মসজিদের মরুনগুলোর পরিকাঠামো উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব দেন।
বহরমপুরে রাজ্য ওয়াকফ বোর্ড একটি অফিস করার প্রস্তাব উঠে আসে ।
ওয়াকফ পরিচালিত হস্টেল বর্তমানে যে মেট্রন এবং স্টাফ শূন্যতায় ভুগছে, সে প্রসঙ্গ এদিন আলোচনার মধ্য দিয়ে উঠে আসে। মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে খাগড়াঘাট স্টেশনের কাছে ২৫ বিঘে মতো জমি বরাদ্দ করেছে।
বহরমপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আইজুদ্দিন মণ্ডল জানান, তিনি নিজে একটি এতিমখানা ও স্কুল চালান। তিনি আরোও বলেন জেলার মাদ্রাসা দফতরের অধীন মডেল ইংলিশ মিডিয়াম মাদ্রসায় পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। মাদ্রাসা বোর্ড শিক্ষক নিয়োগ করুক। সমাজকর্মী হারুন-উর-রসিদ জানান,।.
এই সভায় খ্রিস্টান সমাজের প্রতিনিধি ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল জানান, জেলায় যত খ্রিস্টান রয়েছে তাঁরা সকলেই আদিবাসী সম্প্রদায়ের। সরকারি প্রকল্পগুলোর খবর তাঁদের কাছে সবটা পৌঁছাচ্ছে না। জৈন সমাজের প্রতিনিধি সাহিল জৈন জানান, জৈন সমাজের জন্য কী কী প্রকল্প আছে তা আমাদের অবগত করতে হবে।
এদিনের বৈঠকে কমিশনের অন্যান্য প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন কমিশনের সদস্য শাকিল আহমেদ, রফিকুল ইসলাম, শেহনাজ কাদরি, অশোক তুরাকিয়া, সাইরাস জামসেদ মাদান, অতিরিক্ত জেলা শাসক চিরান্তান প্রামানিক প্রমুখ।