এ যে সম্প্রীতির ভারত ,এ যে এ দেশের চিরাচরিত প্রথা ।
বর্ধমানে ৬৫ বছরের রয়মনি দাস, সন্তান ও স্বামী নিয়ে বর্ধমান শহরে নিজেদের বাড়িতে থাকেন।
নিউজ ডেস্ক .প্রতিবেদন :- ৪৪ বছরের মনজুর আহমেদ এবং ৪০ বছরের ফায়াজ আহমেদ সারা বছরের কয়েকটা মাস শাল বেচতে সুদূর কাশ্মীর থেকে আমাদের রাজ্যের বর্ধমানে যখন আসেন রয়মনি দাসে দের বাড়িতে ওই কয়েক মাসের জন্য ঘর ভাড়া নিয়ে ওঠেন। হঠাৎ করে লকডাউন এর ফলে ওনাদের আর বাড়ি ফিরে যাওয়া হয়নি। রোজার মাস পড়ে যাওয়ার কারণে ওই দুই ভাইয়ের খাওয়া-দাওয়ার জন্য সারাদিনের রান্না সব রায়মনি দাস নিজেই করছেন। আজ থেকে না প্রায় ১০ বছর হতে চললো কাশ্মীর থেকে ওনারা শাল বেচতে আমাদের রাজ্যে আসেন এবং প্রতিবারই ওই বাড়িতেই ওঠেন। ওনারা নিজেরাই বলছেন এটা ওনাদের দ্বিতীয় বাড়ি, এত ভালোবাসা ওনারা এই পরিবারের থেকে পান যে তা ভোলার না, মনেই হয় না যে পরিবার ছেড়ে ওনারা এত দূরে আছেন।
মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম – হিন্দু মুসলমান। একেবারেই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ নতুন করে তুলে ধরলেন কংগ্রেস নেত্রী।
করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লকডাউনের জেরে চারিদিকেই যখন বিবিধ সংকট এবং সমস্যা, দুশ্চিন্তা ক্রমশই বাড়ছে, সেই সময় সূদূর কাশ্মীরের দুই যুবকের দুশ্চিন্তা কাটাতে এগিয়ে এলেন বর্ধমান শহরের ভাতছালার ওলাইচণ্ডিতলার বাসিন্দা প্রাক্তন বর্ধমান জেলা মহিলা কংগ্রেসের সভানেত্রী রাইমণি দাস। তাঁর স্বামী বাবলু দাস এবং ছেলে পল্লব দাস সহ গোটা দাস পরিবার।
রবিবার খোদ হিন্দু বাড়িতেই অনুষ্ঠিত হল নমাজ, শুরু হল রমজান মাসের প্রথম ব্রত উদযাপন তথা ইফতার।
পল্লব দাস এদিন জানিয়েছেন, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই কাশ্মীরের দুই বাসিন্দা কাশ্মীরী পোশাক বিক্রির জন্য বর্ধমানে আসেন এবং তাঁদের বাড়িতেই ঘরভাড়া নিয়ে থাকেন। সাধারণত নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত এই কাশ্মীরীরা তাঁদের বেচাকেনা করে ফিরে যান কাশ্মীরে। কিন্তু এবার করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তাঁদের অনেকেই আটকে পড়েছেন বর্ধমানে। ফলে কিভাবে তাঁরা এই রমজান মাসের ব্রত পালন করবেন তা নিয়ে ঘোর দুশ্চিন্তায় ছিলেন। কারণ করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতির জেরে সমস্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানই বন্ধ। বন্ধ সমস্ত ধরণের জমায়েত। ফলে তাঁরা রীতিমত সমস্যার মুখে পড়েছিলেন।
এই দেশটা তো কারো একার না, এই দেশটা তো আমার আপনার সকলের। হিন্দু বাড়িতে জন্মানো সুভাষচন্দ্র বসু হোক বা শিখ বাড়িতে জন্মানো ভগৎ সিং কিংবা মুসলিম বাড়িতে জন্মানো হাবিবুর এই দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে যে সকলের রক্ত জড়িয়ে আছে।
পল্লববাবু জানিয়েছেন, বিষয়টি জানতে পেরেই তাঁরা তাঁদের বাড়িতে থাকা ওই দুই কাশ্মীরি যুবক এহমত ভাই এবং মঞ্জুর ভাইকে দুশ্চিন্তামুক্ত করার উদ্যোগ নেন। তাঁদের কথামতোই এই দুই মুসলিম যুবক রমজানের রোজা রাখেন এবং রবিবার সকালে দাস পরিবারের পক্ষ থেকেই তাঁদের রোজা খোলার সমস্ত আয়োজন করে দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট সময়ে বাড়িতেই নামাজ পড়েন তাঁরা। এরপর ফল, মিষ্টি-সহ অন্যান্য খাবার খাইয়ে তাঁদের রোজা খোলানো হয়। এই উদ্যোগ দেখে অভিভূত হয়ে গেলেন কাশ্মীরের এই দুই মুসলিম যুবক। এহমত এবং মঞ্জুরভাই উভয়েই জানিয়েছেন, যেহেতু ঘর থেকে বার হওয়া যাচ্ছে না এবং মসজিদে যাওয়াও নিষেধ তাই তাঁরা সত্যিই চিন্তায় ছিলেন, এবছর বুঝি আর রমজান মাসের রোজা রাখতে পারবেন না।
ভালোবাসার গল্পগুলো, ভালো থাকার গল্পগুলো, ভালোভাবে বাঁচতে শেখানোর গল্পগুলো ঠিক এভাবেই বেঁচে থাকুক।