বিদায় বাংলার জনপ্রিয় কল্পবিজ্ঞান কাহিনিকার অদ্রীশ বর্ধন! শোকস্তব্ধ সাহিত্য জগৎ।
নিউজ ডেস্ক,অয়ন বাংলা:- আরোও এক নক্ষত্রপতন বাংলার সাহিত্য জগতে। প্রয়াত হলেন বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় সৃষ্টি প্রফেসর নাটবল্টু চক্রর স্রষ্টা অদ্রীশ বর্ধন। সেইসঙ্গে খসে পড়ল বাংলা কল্পবিজ্ঞানের আকাশের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র। সোমবার রাত প্রায় দেড়টা নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। বার্ধক্যজনিত কারণে বেশ কয়েকবছর ধরেই অসুস্থ ছিলেন অদ্রীশ বর্ধন।
বিজ্ঞানের জগতে ছোটদের মন টানার জন্য হাসির মোড়কে পাঠকগণের কাছে উপস্থাপন করেছিলেন বৈজ্ঞানিক অ্যাডভেঞ্চারের নায়ক ‘প্রফেসর নাটবল্টুচক্র’-কে। বাঙালি বৈজ্ঞানিক যে অবজ্ঞার নন, সেই বার্তাই দিতে চেয়েছিলেন তিনি। উল্লেখ্য, শুধু কল্পবিজ্ঞান লেখাই নয়, সাধারণ বাঙালি পাঠকদের বিজ্ঞানমনস্ক করে তোলার কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন অদ্রীশ বর্ধন।
অ্যাডভেঞ্চারের টানে জীবনে অনেক পেশার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। চাকরি, ব্যবসা করেও মনোনিবেশ করেছিলেন সাহিত্যসাধনায়। এমনকী, কল্পবিজ্ঞান শব্দবন্ধের জন্মদাতাও তিনি। এর আগে বাংলায় ছিল স্রেফ বিজ্ঞানভিত্তিক কাহিনি। তাঁর কলমে একাধিকবার উঠে এসেছে বিজ্ঞানে বাংলার অবদানের কথা। কঠিনতম বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও তাঁর লেখনীতে হয়ে উঠেছে সাধারণের জন্য বোধগম্য। হাসি-কৌতুকের মোড়কে ‘প্রফেসর’ আর ‘দীননাথের কাহিনি’ শুধু খুদে পাঠককুলকেই আকৃষ্ট করেনি, করেছে বড়দেরও৷ ইন্দ্রনাথ রুদ্র, ফাদার ঘনশ্যাম, প্রফেসর নাটবল্টু চক্র, রাজা কঙ্ক, জিরো গজানন, চাণক্য চাকলার মতো চরিত্রগুলো যে আজীবন পাঠকদের মনের মণিকোঠায় থাকবে, তা বলাই বাহুল্য৷
তাঁর লেখালেখি শুরু হয় গোয়েন্দা কাহিনি দিয়ে। সৃষ্টি করেন যথাক্রমে ইন্দ্রনাথ রুদ্র এবং নারায়ণী নামক পুরুষ ও মহিলা গোয়েন্দা। এরপর ক্রমশ বিস্তৃতি লাভ করতে থাকে তাঁর ক্ষেত্র। কল্পবিজ্ঞান, অতীন্দ্ৰিয় জগৎ, অতিপ্রাকৃত, অনুবাদ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিচরণ করে তাঁর মন। শার্লক হোমস হোক কিংবা জুলে ভার্ন, এডগার অ্যালান পো বাঙালি পাঠকদের অন্দরে জায়গা করে নেওয়াতেও তাঁর অদ্রীশ বর্ধনের অবদান কিছু কম নয় বইকী।
ভারতের প্রথম কল্পবিজ্ঞান-পত্রিকা ‘আশ্চর্য’ প্রকাশ পেয়েছিল তাঁর হাত ধরেই। এরপর ‘ফ্যানটাসটিক’ পত্রিকার সম্পাদনা শুরু করেন। সাহিত্যভিত্তিক এই দু’টি পত্রিকাই একসময়ে প্রবল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। লিখতেন বহু নামীদামি সাহিত্যিকরা। তবে, সোমবার গভীর রাতে নিভে গেল সেই ‘আশ্চর্য’ প্রদীপশিখা।