দ্বিতীয় তথা শেষ পর্ব :-
হক সাহেবের আন্তরিক প্রচেষ্টায় তৈরি হল ভাবতা রেলওয়ে স্টেশন ও ভাবতা পোস্ট অফিস।
———————————————————-
প্রতিবেদন .মুুুুুুুুহাম্মদ আবু সাইদ : -অমায়িক স্বভাবের ও সদা মিষ্টভাষী হক সাহেব প্রচারের আড়ালে থেকেই জনসেবার কাজ করে গেছেন। যার অন্যতম নিদর্শন ভাবতা রেলওয়ে স্টেশন ও ভাবতা পোস্ট অফিস নির্মাণ। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দের ১০ই ডিসেম্বর খড়ের ছাউনি দিয়ে যে স্টেশনের যাত্রা শুরু তা আজকে অনেকটাই কলেবরে বৃদ্ধি পেয়েছে ও সুসজ্জিত হয়েছে। অবশ্য চলার পথ সবটাই মসৃণ ছিল না। বিভিন্ন সময়ে বাধা-বিপত্তিও এসেছে। ২০০৮ সালের শেষের দিকে শোনা গেল ভাবতাকে হল্ট স্টেশন ও বেসরকারীকরণ করা হবে। এর প্রতিবাদে লাগাতার অবস্থান বিক্ষোভ কর্মসূচি নেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও সফলতা না আসায় বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়।
অবশেষে ১২ ই জানুয়ারি ২০০৯ ভাবতা রেলওয়ে সুরক্ষা কমিটির ডাকে শুরু হয় লাগাতার রেল অবরোধ। মোহাঃ আনিসুর রহমান, রবি মুহুরী, আবুল হোসেন মোল্লা প্রমুখ নেতৃত্বের উদ্যোগে ভোর চারটে থেকে শুরু হয় লাগাতার রেল অবরোধ। জাতি-ধর্ম-বর্ণ রাজনৈতিক দল নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ তাদের প্রিয় স্টেশনকে রক্ষার স্বার্থে রেললাইনের উপর বসে যান। শুরু হয় বিক্ষোভ প্রদর্শন। রানাঘাট – লালগোলা ইএমইউ, ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ভাগীরথী এক্সপ্রেস সহ একাধিক ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে। অবশেষে লিখিত প্রতিশ্রুতি আদায়ের মাধ্যমে এই আন্দোলন সফলতা লাভ করে।
ভাবতা বর্তমানে একটি E ক্যাটাগরি স্টেশন( BFT) ।এখানে দুটি প্লাটফর্ম চালু হয়েছে। তৈরি হয়েছে ওভারব্রিজ। রয়েছে যাত্রী শেড(তবে এটি আরও সংস্কার করা প্রয়োজন)। শৌচালয়টি ও চালু করা প্রয়োজন। ২০০৪ সালে ভাবতা সহ কৃষ্ণনগর – লালগোলা বৈদ্যুতিকরণ করা হয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সালে ভাবতায় প্রথম ডবল লাইন দিয়ে ট্রেন চলা শুরু হয়। বর্তমানে এখন এই স্টেশন দিয়ে ১৪ জোড়া ট্রেন চলাচল করছে। বর্তমানে স্টেশনের দৈনিক আয় প্রায় ১০ হাজার(লক ডাউনের আগে)। যেটা আরও বৃদ্ধির প্রয়োজন রয়েছে স্টেশনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বার্থে। প্রতিদিন কয়েকশো ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী সহ প্রচুর ব্যবসায়িকগণ এই স্টেশনের মাধ্যমে কলকাতা থেকে লালগোলা সহ বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করছেন। আর যার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় আমরা এই স্টেশনটি লাভ করতে সমর্থ তিনি হলেন মরহুম আব্দুল হক সাহেব।
হক সাহেবের আরেকটি কীর্তি হল ভাবতা পোস্ট অফিস নির্মাণ ।পার্শ্ববর্তী মহিলা গ্রামে বহু পূর্ব থেকেইএকটি পোস্ট অফিস রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টা ও যথেষ্ট অর্থ ব্যয় এর মাধ্যমে পোস্ট অফিসটি তৈরি হয়। যার কাজ প্রথমে ভাবতে হাজীবাড়ির একটি ঘর থেকেই শুরু হয়। হক সাহেবকে এই কাজে সহায়তা করেছিলেন ভাবতা উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক শ্রী উমেশচন্দ্র বিশ্বাস মহাশয়। ১৯১৪ সালের ৩০ শে সেপ্টেম্বর (বুধবার) বাংলা ১৩২১ সন, ১৪ই আশ্বিন হক সাহেব পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চিরবিদায় নেন। আসুন আমরা সকলেই এই মহান ব্যক্তির জন্য দোয়া করি। আল্লাহ যেন উনাকে জান্নাত বাসী করুন ।(আমিন)