“সামাজিক দূরত্ব” নিয়ে বেহালায় বিজেপি বনাম তৃনমূলের কাজিয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়ে উভয় দলের বিরুদ্ধে টাকা তোলার অভিযোগ কংগ্রেসের
পরিমল কর্মকার (কলকাতা) : রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গত ১ জুন সোমবার থেকে এরাজ্যে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। খুলেছে দোকানপাট, চলাচল করছে অটো, বাস সহ অন্যান্য যানবাহন। আর এরপর থেকেই বেহালায় বিজেপি বনাম তৃনমূল নেতৃত্বের মধ্যে “সামাজিক দূরত্ব” নিয়ে পরস্পর বিরোধী মন্তব্যকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে কাজিয়া। এই দুই দলের নেতাদের বাগবিতণ্ডা সোম ও মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে প্রচার হতেই শোরগোল পড়ে যায় রাজনৈতিক মহলে। এরই জেরে এই কাজিয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়ে কংগ্রেসও। বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে এক সাক্ষাৎকারে লকডাউনের জন্য উভয় দলকেই নানা অভিযোগে তুলোধোনা করেন দক্ষিন ২৪ পরগনা জেলা কংগ্রেসের সহ সভাপতি বিবেক চক্রবর্তী।
সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিতে গিয়ে ৪ জুন বৃহস্পতিবার বিবেক চক্রবর্তী তোপ দাগেন বিজেপি ও তৃনমূল দুই দলকেই। তিনি বলেন, করোনা’র জন্য লকডাউন করা, আবার করোনা’য় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া সত্বেও লকডাউন শিথিল করার অর্থটা কি ? আসলে করোনা নামক একটা রোগ আমদানি হয়েছে, সেটাকে সামনে রেখে “ত্রাণ তহবিল” খুলে কিছু কমিয়ে নেওয়ার রাজনীতি আর কি ? কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার জনগণের কাছ থেকে এই তহবিলে হাজার হাজার কোটি টাকা সাহায্য তুলেছে। সেটা তারা কোথায় কোথায় খরচ করছে, সেটাও জানাচ্ছে না। এই দুই শাসক দল টাকা কামানোর রাজনীতিতে মেতেছে বলে অভিযোগ তার।
এক প্রশ্নের উত্তরে বিবেকবাবু বলেন, “সামাজিক দূরত্ব ফুরত্ত, ওসব বাজে কথা। আসলে ওই দুই দলই বোঝাপড়া করেই সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। করোনা’র আতঙ্কে যদি লকডাউনই করা হয়ে থাকে তবে হঠাৎ করে লকডাউন শিথিলের নামে কার্যত: লকডাউন তুলে দেওয়া হলো কেন ? এখন কি রাস্তায় বের হলে করোনা সংক্রমণ ঘটবে না ? তাহলে তিন মাস মানুষকে ঘরবন্দী করে রাখার অর্থ কি ? ৩ মাস ঘরবন্দী থেকে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষ জীবন জীবিকা নির্বাহ করতে হিমসিম খাচ্ছেন। গ্রামেগঞ্জে বহু মানুষ অনাহার,অর্ধাহারে রয়েছেন। অধিকাংশ মানুষের কাছে ত্রাণ সাহায্য পৌঁছুয় নি। অনেকেরই কাজকর্ম সব নষ্ট হয়ে গিয়েছে, এর দায় কে নেবে ? আসলে মানুষকে ভাতে মারার চক্রান্ত করেছে এই দুই সরকার।”
তিনি আরও বলেন, “মোদি আর দিদি একই পথের পথিক। কারন একসময় পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় বিজেপিকে প্রথম ডেকে এনেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রের বিজেপি মন্ত্রী সভায় তাকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীও করেছিল বিজেপি। তাই বিজেপি আর তৃণমূল কখন যে, কে কার গালে চুমু খায়, আর কখন যে গোসা করে বোঝা মুশকিল।”
তার অভিযোগ, লক ডাউন শিথিল হতেই সামাজিক দূরত্বের নামে বাসের ভাড়া ৮ টাকার জায়গায় ১৫/২০ টাকা, আর অটোর ভাড়া ৭ টাকার জায়গায় ২০/২৫ টাকার দাবি উঠছে। ইতিমধ্যে বহুক্ষেত্রেই নানা ফন্দী ফিকির দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এগুলো কতদিন চলবে ? নাকি করোনা আর লকডাউনের জুজু দেখিয়ে সমস্ত জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি ঘটানো হলো ? সামাজিক দূরত্বের নাম করে ওরা এখন “মান অভিমান”এর যাত্রা পালায় অভিনয় করছে। ওদের নীতি একই। তাই
“একই বৃন্তের দুটি ফুল, পদ্মফুল আর ঘাস ফুল।” বলে তিনি অভিহিত করেন উভয় দলকে।
প্রসঙ্গত: গত সোমবার বিজেপি’র কলকাতা দক্ষিণ শহরতলী জেলার সভাপতি সোমনাথ ব্যানার্জী লকডাউন শিথিল করা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করেন, “রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন বাসে যতগুলি সিট, ততোজন যাত্রী উঠতে পারবেন বাসে। তাই বাসের সিটে পাশাপাশি গায়ে গায়ে বসে কি আর সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যায় ? মুখ্যমন্ত্রী ভয়ঙ্কর ক্ষতি করলেন রাজ্যবাসীর।”
এরপরই মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলে বিজেপি’কে তীব্র কটাক্ষ ছুঁড়ে দেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা তৃনমূলের কার্যকরী সভাপতি অঞ্জন দাস। তিনি বলেন, অশিক্ষিত কাণ্ডজ্ঞানহীন লোকেদের মতো কথা বলছেন বিজেপি’র জেলা সভাপতি। দীর্ঘদিন টানা লকডাউন চলছে। মানুষের কর্মসংস্থান নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর্থিক দুরাবস্থার মধ্যে রয়েছেন রাজ্যের মানুষ। এখনও লকডাউন শিথিল না করলে তো না খেতে পেয়ে মারা যাবে মানুষ। বিজেপি মানুষকে মেরে ফেলার চক্রান্ত করছে বলে অঞ্জনবাবু অভিযোগ করেছিলেন।
এরপরেই কংগ্রেসের জেলা সহ সভাপতি বিবেক চক্রবর্তী বিজেপি ও তৃণমূল দুই দলকেই দায়ী করে বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে মন্তব্য করলেন।