আসামে এন আর সি র নামে চলছে মধ্যযুগীয় বর্বরতা

Spread the love

অয়ন বাংলা,নিউজ ডেস্ক:- আসামের কাছাড় জেলার কালাইন ছলিগ্রামের বাসিন্দা ৪৫ বছরের শ্যামেন্দ্র দাস। শ্যামেন্দ্র বাবুর বাবার নাম নগেন্দ্র দাস। নগেন্দ্রবাবু এখন আর বেঁচে নেই। দিনমজুর শ্যামেন্দ্র স্ত্রী, এক পুত্র, তিন কন্যা নিয়ে বাস করেন ছলিগ্রামে। জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত খসড়ায় নাম আছে শ্যামেন্দ্র দাসের। কিন্তু মঙ্গলবার তার বাড়িতে পৌছায় সীমান্ত পুলিশ। তাকে না পেয়ে তার স্ত্রী’র হাতে ধরিয়ে দেয় এক নোটিশ। নোটিশে বলা হয় তিনি অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, সন্দেহভাজন বিদেশী। নির্ধারিত তারিখে শিলচরের ফরেইনার্স ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার কথাও বলে দেয় পুলিশ। বিকালে কাজ থেকে বাড়ি ফিরে এমন নোটিশের কথা শুনে হতবাক হয়ে পরে শ্যামেন্দ্র দাস। এক পড়শিকে সঙ্গী করে বুধবার কাটিগাড়া থানায় এসে উপস্থিত হন শ্যামেন্দ্র বাবু। সীমান্ত পুলিশের সাথে দেখা করে জানতে চান এই নোটিশের বিষয়ে।

NRC এর চূড়ান্ত তালিকায় শ্যামেন্দ্র বাবুর নাম আছে। নাম রয়েছে পরিবারের সব সদস্যের। ১৯৬৫ সালের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে শ্যামেন্দ্র বাবুর পিতা প্রয়াত নগেন্দ্র দাসের। তার মায়ের নামেও রয়েছে লিগাসী ডাটা। সব নথিপত্র দিয়ে শ্যামেন্দ্র দাস NRC তে আবেদন করেন। খসড়া থেকে শুরু করে সমস্ত তালিকায় নাম আছে শ্যামেন্দ্র দাস ও তার পরিবারের। বর্তমানে ট্রাইব্যুনালের নোটিশ পেয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পরেছে শ্যামেন্দ্র দাসের। পরিবারের কথা ভেবে থানা থেকে বেড়িয়েই কান্নায় ভেঙে পড়েন। একজন দিনমজুর ফরেইনার্স ট্রাইব্যুনালের খরচ কোথা থেকে জোগাড় করবে তাই ভেবেই আর চিন্তায় পরে গেছেন। দিনমজুরের কাজ করলে খাবার জোটে পরিবারের। এখন ট্রাইব্যুনালে যাবে না পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দেবেন তাই ভেবেই চিন্তা শ্যামেন্দ্র দাসের। তার যদি কিছু হয়ে যায় তার পরিবারের কি হবে? কে দেবে এর জবাব?

তবে শুধু শ্যামেন্দ্র দাস নয়, এরকম দশা আরও প্রায় ৮০ জনের। এর মধ্যে বড় অংশ এই প্রথম ফরেইনার্স ট্রাইব্যুনালের নোটিশ পেল। মৌগ্রামের রামেন্দ্র বৈষ্ণব, রাজবিহারি বৈষ্ণবের নামেও নোটিশ গেছে সন্দেহভাজন বিদেশীর। সুন্দাউড়া গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম বড়ভুঁইয়া, আনোয়ারা বেগম বড়ভুঁইয়ার নামেও নোটিশ জারি হয়েছে। বরাইতলি দ্বিতীয় খন্ড গ্রামের নগেন্দ্র রায়ের ছেলেও সন্দেহভাজন বিদেশীর নোটিশ পেয়েছেন। অথচ এদের নাম NRC তালিকায় রয়েছে। করইকান্দির ফরিজ উদ্দিন মজুমদারের নামেও নোটিশ ইসিছে। অথচ ৩১ শে আগস্ট প্রকাশিত NRC তালিকায় তার পুরো নাম রয়েছে। ফরিজ উদ্দিন এর আগে কোনদিন এই নোটিশ পাননি। এই প্রথম ফরেইনার্স ট্রাইব্যুনালে ডাক পরেছে তার। ফরিজ উদ্দিনের মা বাবার নাম রয়েছে ২০১৯ এর ভোটার তালিকায়। রয়েছে বাবার নামের লিগ্যাসিও। ফরেইনার্স ট্রাইব্যুনাল থেকে এই ধরণের নোটিশ পাওয়ায় দিশাহারা অবস্থা অনেকেরই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.