নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংবিধানের মৌলিক পরিকাঠামো বিরোধী ,চ্যালেঞ্জ সুপ্রিম কোর্টে

Spread the love

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল সংবিধানের মৌলিক পরিকাঠামো বিরোধী ।

 অয়ন বাংলা,ওয়েব ডেস্ক:- জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ সংবিধান বিরোধী এই বিলকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাবে। মাওলানা আরশাদ মাদানী,নয়াদিল্লি

লোকসভার পর রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হওয়াকে একটি করুণ দুর্ঘটনা বলে আখ্যায়িত করে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের মুখ্য সচিব মাওলানা সৈয়দ আরশাদ মাদানী বলেছেন যে, এই বিল সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থী। সুতরাং জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ এটিকে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানাবে। তিনি আরও বলেছেন যে, লোকসভায় অনুমোদনের পরেও আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা ছিল যেন বিলটি রাজ্যসভায় পাস না হয়। এর জন্য আমরা বিভিন্ন দলের কর্মকর্তাদের সাথে শুধু যোগাযোগই করেছি তা নয় বরং এ বিষয়ে তাঁদের সচেতনও করেছি যে, এই বিপজ্জনক বিলের কুপ্রভাব কোন পর্যায়ে বিস্তার করবে কিন্তু আফসোস যে, নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ দাবিদার কিছু দল দায়িত্বহীন মনোভাবের প্রমাণ দিল এবং এই বিল রাজ্যসভাতেও পাস হয়ে গেল । তিনি এও বলেছেন যে,এই বিলটি সংবিধানের ১৪ ও ১৫ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘন করেছে, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে যে, দেশের কোনও নাগরিকের সাথে ধর্ম ও বর্ণের ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হবে না এবং প্রতিটি নাগরিকের সাথে সমান আচরণ করা হবে। মাওলানা মাদানী বলেছেন যে, এই বিলের পুরো খসড়া ধর্মীয় বৈষম্য এবং অন্যায় পরিতোষণের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা হয়েছে। এবং এতে বলা হয়েছে যে, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে নিপীড়িত সংখ্যালঘু যারা ভারতে পালিয়ে এসেছে তাদের কেবলমাত্র আশ্রয়ই দেওয়া হবে তাই না, নাগরিকত্বও দেওয়া হবে অথচ মুসলিমদের এ থেকে দূরে রাখা হয়েছে। এর দ্বারা এটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে,এই বিলের মাধ্যমে ধর্মের ভিত্তিতে দেশের নাগরিকদের মধ্যে বিভাজনের রেখা টেনে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হয়েছে।যে ক্ষেত্রে এই বিল দেশের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হতে পারে, কারণ এর দ্বারা কোনো নথিপত্র ছাড়াই যাদের নাগরিকত্বের পথ সুগম করা হচ্ছে, হতে পারে যে তাদের মধ্যেই কিছু লোক দেশের শত্রুদের এজেন্ট হয়ে দেশের ধ্বংসের উৎস হয়ে ওঠবে। তিনি বলেন এই বিলটি আইনি ত্রুটি দ্বারা পরিপূর্ণ এবং সংবিধানের দিকনির্দেশক নীতিগুলির সাথে সংঘর্ষক।আইনে আছে যে, বিধি সংশোধন করার ক্ষেত্রে সংবিধানের মূল চেতনা বা এর অবকাঠামো নিয়ে কোনও হস্তক্ষেপ করা হবে না অথচ এই বিলে ধর্মের ভিত্তিতে বৈষম্য ও পক্ষপাতিত্ব অবলম্বন করে সংবিধানের মৌলিক কাঠামোটিকে অগ্রাহ্য করার ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা করা হয়েছে। সংবিধানের ১৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, কোনও আইন যদি মৌলিক অধিকারের সাথে সংঘর্ষক হয় তবে সেই আইনের কোনো মূল্য থাকবে না অর্থাত্ আইনে যদি কোনও সংশোধন হয় বা কোনো আইন তৈরি করা হয় এবং সেটি যদি মৌলিক অধিকারের সাথে সংঘর্ষক হয় তবে তা স্বীকৃত হবে না। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের উপরও আঘাত হানছে ।মাওলানা মাদানী আরও বলেছিলেন যে, এই বিলের প্রভাব যদিও বা এখনও দৃষ্টিগোচর না হয় তবে এন আর সি যখন সারা দেশে প্রয়োগ করা হবে, তখন এই বিলটি ঐ সমস্ত লক্ষ লক্ষ মুসলিম নাগরিকদের জন্য কিয়ামতের দিবস হয়ে দাঁড়াবে, যারা কোনও কারণ বশত তাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে পারবে না। তিনি বলেছেন যে, এই যুক্তিটি একেবারেই ভুল যে নাগরিকত্ব বিলের সাথে এনআরসি-র কোনও সম্পর্ক নেই বরং এই বিলটি এন আর সি কে মাথায় রেখেই নিয়ে আসা হয়েছে যাতে করে মুসলমানদের জন্য এনসিআর প্রক্রিয়াটিকে কঠিন করে তোলা যায়। তিনি বলেছেন যে,এই বিলটি এই জন্যও বিপজ্জনক যে,এই দেশে বহু শতাব্দী ধরে বিদ্যমান ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হতে পারে।এটি হিন্দু-মুসলিমের বিষয় মোটেই নয়; এটি মানবাধিকার এবং নাগরিকদের অধিকারের একটি মৌলিক বিষয়।এটি অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি বিল যার পেছনে নিছকই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কাজ করছে। এর দ্বারা সংখ্যাগরিষ্ঠদের সাম্প্রদায়িক প্রান্তিককরণের পথ প্রশস্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেশের উগ্রপন্থী শক্তি দীর্ঘকাল ধরে এটাই কামনা করে আসছে যে শতাব্দী প্রাচীন আমাদের ঐক্যতা কে যে কোনো উপায়ে টুকরো টুকরো করে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হোক । মাওলানা মাদানী বলেছেন এই জন্যই জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ এই বিলটিকে আদালতে চ্যালেঞ্জ জানাবে কারণ আইনসভাটি সততার সাথে তাদের কাজ সম্পন্ন করেনি। এজন্য বিচার বিভাগই এখন এবিষয়ে উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ বিষয়ে আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করা হয়ে গেছে এবং পিটিশনের খসড়া তৈরি করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.