অভিরূপ দাস: করোনা (Corona Virus) প্রবেশ করেছিল শরীরে। সেরেও উঠেছেন। কিন্তু ঘুনাক্ষরেও টের পাননি। এমন মানুষের সংখ্যা দেশে ১৮ কোটি। বেসরকারি ল্যাব থাইরোকেয়ার সরকারি অনুমোদন নিয়ে অ্যান্টিবডি টেস্ট করাচ্ছে। তাঁদেরই নয়া সমীক্ষা শেষে এমনটা জানা গিয়েছে। এ তথ্য প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল।সত্যিই এভাবে মারণ ভাইরাসকে হারিয়ে সেরে ওঠা সম্ভব? অবশ্যই সম্ভব। কী বলছেন ডাক্তাররা?
শহরের ফুসফুস রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ধীমান গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ঘটনাটি অত্যন্ত ইতিবাচক। তবে এই ঘটনার পিছনেও কিছু কারণ রয়েছে। কী সেই কারণ? ডা: গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বেসরকারি ওই ল্যাবে যাঁরা টেস্ট করাতে এসেছিলেন তাঁরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও ভাবে ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছিলেন। আক্রান্ত হওয়ার সময় আক্রান্ত ব্যাক্তিদের শরীরে ভাইরাল লোড মাপলে দেখা যেত তা অত্যন্ত কম। সকলের শরীরে ভাইরাস এক পরিমাণে প্রবেশ করে না। কারও শরীরে তিনটে ভাইরাস প্রবেশ করে কারও বা তিনহাজার। ডা. গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, শরীরে আচম্বিতে ঢুকে পরা ভাইরাসের এই সংখ্যার পরিমাপকে ভাইরাল লোড বলে। ভাইরাল লোড কম হলে একা একাই করোনা থেকে সেড়ে ওঠা সম্ভব। শুধু তাই নয়, চিকিৎসকের কথায়, সমস্ত সার্স কোভ ২ ভাইরাসের শক্তি একরকম নয়। এঁদের শরীরে যে ভাইরাস প্রবেশ করেছিল তা হয়তো দুর্বল ছিল। সে কারণেই নিজেরা বুঝে ওঠার আগেই সেরে উঠেছেন। তবে সেরে উঠলেও সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। কোনও ব্যক্তি একবার করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠলে তিনি আর এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবেন না, তা বলার সময় এখনও আসেনি।
ডা. অরিন্দম বিশ্বাস জানিয়েছেন এটা স্পষ্ট এদের শরীরে ভাইরাস অত্যন্ত সামান্য প্রবেশ করেছিল। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সেই সামান্য ভাইরাসকে ঠেকিয়ে দিয়েছে। পরীক্ষার স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস। শরীরে দুধরণের অ্যান্টিবডির খোঁজ মেলে। একটি প্রাথমিক অ্যান্টিবডি আইজিএম বা ইমিউনোগ্লোবিউলিন এম, যা পাওয়া যায় রক্তে। ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়াকে প্রাথমিকভাবে আটকাতে চেষ্টা করে এই অ্যান্টিবডিই। অন্যটি আইজিজি বা ইমিউনোগ্লোবিউলিন জি, যা থাকে বডিফ্লুইডে। প্রাথমিক অ্যান্টিবডির খোঁজ না নিয়েই একেবারে আইজিজি পরীক্ষা আদৌ কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়েছে তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে। ডা. বিশ্বাস জানিয়েছেন, মাত্র ছ’মাস হল এই পরীক্ষা শুরু হয়েছে। একটি বেসরকারি ল্যাব চটজলদি পরীক্ষা করে বলে দিল ইমিউনোগ্লোবিউলিন জি পাওয়া গিয়েছে বিষয়টা অত সরল নয়। তাকে বলতে হবে এই আইজিজির আয়ু কতদিন? কতদিন তা ফের করোনা সংক্রমণ থেকে আক্রান্তকে রক্ষা করতে পারবে। এগুলো পরিস্কার করে জানাতে হবে।
চিকিৎসকের চিন্তা, “যেন এমন না হয় যে এই সমীক্ষা দেখে সাধারণ মানুষ ভেবে বসলেন, তাহলে তো আমাদের করোনা একা একাই সেড়ে যাবে। চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তাহলে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চকেও অনুরোধ করবো ১৮ কোটির এই তথ্যকে যাচাই করার জন্য।” উল্লেখ্য, মুম্বই দিল্লি-সহ বহু জায়গায় দেখা গিয়েছে একবার আক্রান্ত হওয়ার পরেও অনেকেই ৩০ দিনের মধ্যে ফের আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়।
সৌজন্য:- সংবাদ প্রতিদিন