নিউজ ডেস্ক:- বুধবার তিন বিধায়কের পদত্যাগের পর এবার উপমুখ্যমন্ত্রী সহ চার মন্ত্রীর পদত্যাগ। এ যেন উলট পুরাণ! দেশজুড়ে যখন কংগ্রেস ক্ষয়িষ্ণু, বিজেপির (BJP)জয়জয়কার। তখন উলটো ছবি দেখা গেল উত্তরপূর্বের ছোট রাজ্য মণিপুরে। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের উপর আস্থা হারিয়ে বিজেপি ছাড়লেন তিন বিধায়ক। বিজেপি সরকারে উপর থেকে সমর্থন তুলে নিলেন এনপিপি (NPP), তৃণমূল (TMC) এবং নির্দল মিলিয়ে মোট ৬ বিধায়ক। যার জেরে খাদের কিনারে এসে পড়েছে মণিপুরের বিজেপি সরকার। উলটে সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়কের সমর্থন নিয়ে সরকার গড়ার দাবি জানাচ্ছে কংগ্রেস।
বৃহস্পতিবার এই ঘটনায় মণিপুরে রীতিমতো সঙ্কটে পড়েছে বিজেপি। সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, জোট শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টি থেকে ক্যাবিনেটে জায়গা পাওয়া চার মন্ত্রী যথাক্রমে উপমুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থমন্ত্রী ওয়াই জয়কুমার সিং, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণমন্ত্রী লেটপাও হাওকিপ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী এল জয়ন্ত কুমার সিং এবং উপজাতি ও পাহাড়ি এলাকা উন্নয়ন মন্ত্রী এন কায়িশি ইস্তফাপত্র মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং’য়ের কাছে পাঠিয়ে দেন। ফলে তিন বিধায়ক ও মন্ত্রীদের পদত্যাগে রীতিমতো সঙ্কটে পড়েছে বিজেপি।
২০১৭ সালের মনিপুর বিধানসভা নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে উঠে এসেছিল কংগ্রেস (Congress)। ৬০ আসনের মনিপুর বিধানসভায় কংগ্রেসের দখলে যায় ২৮টি আসন। বিজেপি পায় ২১টি আসন। কিন্তু ঘুরপথে এনপিপির চার, এনপিএফের চার, তৃণমূলের এক, এলজেপির ১ এবং একজন নির্দল বিধায়কের সমর্থনে সরকার গড়ে বিজেপি। রাজ্যপাল নাজমা হেপাতুল্লাও সেসময় কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপিকে সরকার গড়তে আহ্বান করেন। এন বীরেন সিংয়ের (N. Biren Singh) নেতৃত্বে মণিপুরে সরকার গড়ে গেরুয়া শিবির। পরে বেশ কয়েক দফায় মোট ৭ জন কংগ্রেস বিধায়কও পদত্যাগ করে বিজেপিতে যোগ দেন। যাদের দলত্যাগ বিরোধী আইনে বিধায়ক পদ খোয়াতে হয়েছে। আদালত তাঁদের বিধানসভায় প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
এদিকে গত কয়েক মাসে মণিপুরের রাজনীতিতে বহু পটপরিবর্তন হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সদ্যই বিজেপি ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন ৩ জন বিধায়ক। বিজেপি সরকারের থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে এনপিপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস। সমর্থন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছেন নির্দল বিধায়কও। কংগ্রেসের দাবি, এর ফলে বিধানসভায় বিজেপি সরকার এখন সংখ্যালঘু, সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাঁদের হাতে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওকরাম ইবোবি সিংয়ের (Okram Ibobi Singh) নেতৃত্বে ফের সরকার গড়বে তাঁরা। রাজ্যপালের কাছে তাঁরা বিশেষ অধিবেশন ডেকে আস্থাভোট করানোর দাবি জানিয়েছে হাত শিবির।
বিধানসভায় বর্তমানে বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা ১৯। বিজেপিকে সমর্থন করছেন এলজেপির ১ বিধায়ক। এনপিএফ আগেই গেরুয়া শিবিরের থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করেছে। কংগ্রেসের আসন সংখ্যা এই মুহূর্তে ২৪। তাঁদের সমর্থন করছেন এনপিপির ৪, তৃণমূলের এক এবং একজন নির্দল বিধায়ক। ৬০ আসনের বিধানসভায় ৮ জনের বিধায়ক পদ বাতিল হওয়ায় আপাতত বিধানসভার মোট আসন দাঁড়িয়েছে ৫২। ম্যাজিক ফিগার ২৭। কংগ্রেসের হাতে আছে ৩০ জন বিধায়কের সমর্থন। এদের মধ্যে বিজেপি থেকে আসা ৩ বিধায়ক যদি পদত্যাগ করেন, তাতেও হাত শিবিরের কাছে ২৭ জন বিধায়কের সমর্থন থাকবে। ম্যাজিক ফিগার কমে হবে ২৫। স্বাভাবিকভাবেই এই মুহূর্তে সরকার গড়ার মতো পরিস্থিতিতে আছে কংগ্রেস।