সরকারি অনুদানের বিভাজন: বঞ্চিত আন্দোলনে অংশ নেওয়া ৮২টি আন এডেড মাদ্রাসা
নিজস্ব প্রতিবেদক:- যাতে করে আর কোনদিন আন্দোলন করতে না পারেন তার জন্য আনএডেড মাদ্রাসার শিক্ষকদের একটা শিক্ষা দিতে চেয়েছিল পুলিশ প্রশাসন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর গান্ধী মূর্তির পাদদেশে অবস্থান মঞ্চে আন এডেড মাদ্রাসার শিক্ষকদের সঙ্গে চরম অমানবিক ব্যবহার করেছিল কলকাতা পুলিশ। ধর্না মঞ্চ থেকে টানতে টানতে, মারতে মারতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের আন্দোলনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে সরকারপক্ষ কিছুই শুনতে চাইনি। সারা দিন আটকে রেখে তাদের ভয় দেখানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। এই আন্দোলন যারা নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তাদের মাদ্রাসা গুলিকে অনুদানের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
রাজ্যের ২৩৫ আন এডেড মাদ্রাসাকে অনুমোদন দিয়েছিল রাজ্য সরকার। দীর্ঘ আট বছরে সরকারি কোনো আর্থিক সাহায্য ছিল না। এবার ভোটের মুখে সেইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক অনুদান দেওয়ার জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নবান্ন। তবে অনুদান দেয়ার ক্ষেত্রেও বিভাজন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ২৩৫ মাদ্রাসার মধ্যে ১৫৩টি মাদ্রাসাকে অনুদান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কোন মাদ্রাসা অনুদান পাচ্ছে তার একটি তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।
এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ৮২ টি মাদ্রাসা সরকারি অনুদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই ৮২ টি মাদ্রাসার অধিকাংশ হলেন ওয়েস্টবেঙ্গল রিকগনাইজড আন এডেড মাদ্রাসা টিচার্স এসোসিয়েশনের পদাধিকারী ও সদস্য। অভিযোগ এতদিন ন্যায্য দাবি নিয়ে আন্দোলন করার জন্যই সরকারিভাবে ৮২ টি মাদ্রাসাকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
ঐ সংগঠনের রাজ্য সভাপতি জাভেদ মিয়াঁদাদ বলেন এটা প্রচার করা হচ্ছে ওই ৮২ টি মাদ্রাসা নাকি বন্ধ হয়ে গেছে।সেই কারণে সরকার অনুদান দিচ্ছে না। আমার মাদ্রাসা সচল রয়েছে। আমাদের সংগঠনের সম্পাদক পলাশ রোমের মাদ্রাসা ও চলছে। সরকারের কাছে রিপোর্ট রয়েছে তাহলে আমাদের এই দুই মাদ্রাসা তালিকায় জায়গা পেল না কেন? আসলে আমাদের আন্দোলনকে দমানোর জন্য কৌশল করে আমাদের সক্রিয় সদস্য ও কর্মকর্তাদের মাদ্রাসাগুলোকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
আমরা এই বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। আইনি লড়াইয়ের জন্য, রাস্তায় নেমে ফের বৃহত্তর আন্দোলন হবে। প্রসঙ্গত গত ২৯ সেপ্টেম্বর পুলিশি অত্যাচারের শিকার হওয়ার পর আরো জোর পেয়েছেন তারা। দাবি আদায়ে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এই সংগঠন।
বর্তমানে সমস্ত জেলার মাদ্রাসা প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন সংগঠনের কর্মকর্তারা। একই সঙ্গে আলোচনা চলছে আইনজীবীদের সঙ্গেও। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তাদের এই আন্দোলনে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। জাভেদ মিয়াঁদাদ বলেন মাদ্রাসাগুলি নিয়ে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ২৩৫ মাদ্রাসা কে অনুমোদন দিয়ে সংখ্যালঘু সমাজকে ললিপপ ধরানো হয়েছে। ভোটের মুখে অনুদান দেওয়ার লোক দেখানো হলো কেন? এতদিন অনুদান দেওয়া হয়নি ভোটের মুখে এই ঘোষণা কেন? আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি কিন্তু সরকার আমাদের কথা শুনছে না। আসলে ভোট ব্যাংকের জন্য এই ঘোষণা বলে মনে হচ্ছে। বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
অভিযোগ সরকারের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট ৮২ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অস্বীকার করছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া শিক্ষকদের বেতন বাবদ অনুদানের টাকা থেকে বঞ্চিত করে এখন এককালীন অনুদান এর কথা ঘোষণা করল সরকার। তারপর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির দায়িত্ব কে নেবে তার কোন স্পষ্ট ধারণা নেই।
এক মাদ্রাসার শিক্ষক জানান, আমরা জানি আমাদের আন্দোলনকে বানচাল করার জন্য কলকাতা পুলিশ কত পরিশ্রম করে। রাত জেগে ধর্মতলা চত্বরে বসে থাকে বাসে করে দূর জেলা থেকে আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষকদের গ্রেপ্তার করা হয়, যাতে আন্দোলন যুক্ত হতে না পারে। আবার ও তাই হবে, সেটা ধরে নিয়েই এগোচ্ছি। কারণ এটা আমাদের অধিকারের লড়াই।