নিউজ ডেস্ক :- বহু প্রতীক্ষিত অনেক সমস্যার পর অনেক টালবাহানার পর মঙ্গলবার গভীর রাতে ছাড়া পেলেন জাতীয় সুরক্ষা আইনে গ্রেফতার হওয়া চিকিৎসক ডা. কাফিল খান। মঙ্গলবারই সকালে এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি গোবিন্দ মাথুর ও বিচারপতি সৌমিত্র দয়াল সিংয়ের গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ ডা. কাফিল খানের বিরুদ্ধে এনএসএ আইনে দেশদ্রোহের অভিযোগ খারিজ করে দেয়। তারপর তাকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট। ডা. কাফিল খানের মা নুজঝাত পারভিনের আবেদনের ভিত্তিতে মঙ্গলবার ওই নির্দেশ দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট।
উল্লেখ্য, এনএসএ আইনে আলিগড়ের জেলাশাসক ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ নির্দেশ দিয়েছিলেন গ্রেফতার করার জন্য। উত্তরপ্রদেশের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। পরে তার মেয়াদ ফের বাড়িয়েও দেয়।
গত ডিসেম্বরে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছিলেন কাফিল খান। যোগী আদিত্যনাথ সরকার তার মধ্যে দেশদ্রোহের গন্ধ পায়। তাই তাকে ২৯ জানুয়ারি মুম্বাই থেকে গ্রেফতার করে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ। তার বিরুদ্ধে প্রথমে সিএএ বিরোধী সভায় উস্কানি মূলক ভাষণ দেওয়ার অভিযোগ এনে গ্রেফতার করা হয়। এবার তাকে ফের জাতীয় সুরক্ষা আইন বা এনএসএ যে গ্রেফতার করে পাঠানো হল মথুরা জেলে। সেখানেই এখন বন্দি রয়েছেন কাফিল খান। দেশজুড়ে বিশিষ্টজনরা তাকে মুক্তি দেওয়ার আর্জি জানালেও উত্তরপ্রদেশ সরকার তাতে আমল দেয়নি।
তবে, ১০ ফেব্রুয়ারি আলিগড়ের সিজিএম কাফিল খানের জামিনের নির্দেশ দিলেও আলিগড়ের জেলাশাসকের নির্দেশে ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে এনএসএ আইনে গ্রেফতার করা হয়। এই গ্রেফতারির বিরুদ্ধে কাফিল খানের মা নুজঝাত পারভিন সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি এস এ বোবদে, বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং বি আর গবাইয়ের গঠিত বেঞ্চ বিষয়টি এলহাবাদ হাইকোর্টই হল বিচারের উপযুক্ত জায়গা বলে আবেদন খারিজ করে দেয়। এরপর এলাহাবাদ হাইকোর্টে মামলা করেন কাফিল খানের মা। সেই আবেদনের ভিত্তিতে এলাহাবাদ হাইকোর্ট মঙ্গলবার তার রায়ে এনএনএস আইনে ডা. কাফিল খানকে গ্রেফতার অবৈধ ঘোষণা করে উত্তরপ্রদেশ সরকারকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেয়। সেই সঙ্গে জানায়, আলীগড় কাফিল খানের বক্তৃতার মধ্যে কোনো দেশ বিরোধী কথা ছিল না বরং সম্প্রীতির কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার দিন শেষে সন্ধ্যা গড়ালেও কাফিল খানকে মথুরা জেল কর্তৃপক্ষ মুক্তি না দেওয়ায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।
এ ব্যাপারে কাফিল খানের ভাই আদিল খান জানান, কোর্টের নির্দেশের কথা মথুরা জেল কর্তৃপক্ষকে বলা হলেও ছাড়তে চায়নি। জানানো হয়, জেলা শাসকের নির্দেশ না এলে ছাড়া যাবে না।
তবে আইনজীবী ইরফান গাজী জানান, মথুরা জেল কর্তৃপক্ষ রাত ১১টা নাগাদ খবর দেন যে কাফিল খানকে ছাড়া হবে। তারপর মথুরা জেলে গিয়ে কাফিল খানকে গভীর রাতে ছাড়িয়ে আনা হয়।
উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর হাসপাতালে অক্সিজেনের এভাবে শিশুমৃত্যুর মিছিল থামিয়ে হিরো হয়ে উঠেছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. কাফিল খান। তবু তাকে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগে ও শিশু মৃত্যুর খবর চাউর করে যোগী সরকারের দুর্নাম করার দায়ে গ্রেফতার হতে হয়েছিল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের রায়ে তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও যোগী সরকারের রোষ থেকে রেহাই পাননি কাফিল খান।
সৌজন্য :- আপন জন