প্লাস্টিক দূষণ আজ সু স্বাস্থ্যের হানি করে চলেছে:- লিখেছেন বাংলার প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ ইয়ার আলী

Spread the love

প্লাষ্টিক: সু-স্বাস্থ্যের হানিঃ—

স্বাস্থ্য ডেস্ক,অয়ন বাংলা:- বর্তমানের যুগ যমানাকে প্লাষ্টিকের যুগ বললেও অতিরন্জন হবেনা৷ বর্তমানে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যবহৃত অধিকাংশ দ্রব্যাদির গঠণগত মূল উপাদানই হল প্লাষ্টিক৷ টুথব্রাশ থেকে টুথপেষ্টের টিউব, বাচ্চাদের খেলনার সামগ্রী, চেয়ার,টেবিল, পাণীয় জলের বোতল, জগ বালতি প্রভৃতি সবই এখন প্লাষ্টিকের দ্বারা নির্মিত৷ লৌহ বা এলুমিনিয়াম বা অন্যকোন ধাতব পদার্থের পরিবর্তে প্রত্যেকটি জায়গাতেই প্লাষ্টিক অবস্থান দখল করেছে৷ আমরা দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্নধরণের ও বিভিন্ন গুণমানের প্লাষ্টিকের সংস্পর্শে আসি৷ যে কোন প্লাষ্টিক —যেটাকেই আপনি টাচ বা স্পর্শ করবেন, তার প্রবণতা হল প্লাষ্টিকের কিছু রিসিড্যুউ বা পার্টিকল আমাদের স্কিনে বা ত্বকে লেগে যায়৷ প্লাষ্টিকের সংস্পর্শে আসা এবং ধুয়ে ফেলার মাঝে সময়টা যত বেশী হবে—ততই বেশী পরিমাণে স্কিনে লেগে থাকা ঐ রিসিড্যুউগুলো শোষিত বা এবজর্ব হয়ে সিষ্টেম বা ব্লাডে চলে আসবে৷ এই প্লাষ্টিকের রিসিড্যুউ সরাসরি আমাদের সিষ্টেমেও আসতে পারে—যখন আমরা এটাকে ভক্ষণ করি৷ আমাদের বিভিন্ন খাবারের পাত্র যেমন—প্লাষ্টিক মোড়ক, প্লাষ্টিক ফুড কনটেইনার, প্লাষ্টিকের বাসন-পত্র,থালা, জলের বোতল, জল সরবরাহের উৎসসমূহ( পাইপ, জার, গ্লাস), বিভিন্ন ঔষধের বোতল ( অধিকাংশ লিক্যুইড ঔষধ এখন প্লাষ্টিক বোতলে ফিলড্ আপ হয়), এবং প্যাকেজিং ফুডস যেগুলি প্লাষ্টিক এসেম্বলি লাইনে প্রস্তূত হয় বা প্লাষ্টিক প্যাকেটে বিক্রি হয়৷

কিছু কিছু প্লাষ্টিক “বিসফেনল ফ্রি” হয়, যেগুলি উন্নত মানের এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি অপেক্ষাকৃত কম হয়৷ কিছু কিছু প্লাষ্টিক একদম কম গুণমানের৷ যেগুলি যে কোন লিক্যুইডের সংস্পর্শে এলেই, প্লাষ্টিকের রিসিড্যুউগুলো ঔ তরলে মিশতে শুরু করে৷

এখন, আমাদের জানতে হবে প্লাষ্টিক কী ও কত রকমের৷ এই বিষয়ে আপনি গুগলে পেয়ে যাবেন৷ পড়ে নিন—https://en.m.wikipedia.org/wiki/Plastic

আমি প্লাষ্টিক কীভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে— সেটাই বলব৷

প্লাষ্টিক রিসিড্যুউগুলো ব্লাড এ থাকলে, দেহের যে কোন অঙ্গে জমতে পারে৷ সেখানে অক্সিডেসন করে প্রতিটা কোষের স্বাভাবিক কার্যকলাপে ব্যাঘাত ঘটায়৷ উপরন্তূ, কোষগুলির স্বাভাবিক সুস্থতাকে চ্যালেন্জ ছুড়ে দেয়৷ অধিকাংশ প্লাষ্টিক রিসিড্যুউগুলিকে লিভার প্রসেসিং ও ডিস আর্মিং ( Disarming) করে , লিভারের সারফেস এরিয়াগুলিতে সন্চিত বা ডিটেইন বা স্টোর করে রাখে৷

এইভাবে, প্লাষ্টিকের স্টোরিং হতে থাকলে, লিভারের সারফেস এরিয়া (Top of the liver) কনজেষ্টেড বা শ্লাগিশ হয়ে পড়ে৷ লিভারের সারফেস এরিয়া শ্লাগিশ হলে , নিম্নলিখিত সমস্যাগুলি সর্বপ্রথম দেখা দিবেঃ
১) হজম বা গ্যাসের সমস্যা
২)এসিড রিফ্লাক্স ডিজিজ
৩)পেট ফাঁপা, গ্যাস্ট্রাইটিস
৪)পেটের টানটান ভাব
৫)ইরিট্যাবিলিটি বা বিরক্তিকর মনোভাব
৬)ফ্রাস্ট্রেশন বা দুঃশ্চিন্তা
৭)ফ্রোজেন সোল্ডার
৮)কাঁধ বা সোল্ডার জয়েন্টে ব্যাথা
৯)মুখে বা জিহ্বায় ঘা
১০)ক্যাঙ্কার সোর,ঠোটের কোণে ঘা
১১)মুখের যাবতীয় ঘা
১২)গায়ের তাপমাত্রার উঠা-নামা
১৩)উপরের পেট শক্ত হয়ে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া
১৪) ভূড়ি হয়ে যাওয়া৷

এছাড়া, প্লাষ্টিক রিসিড্যুউগুলি বিভিন্ন জীবাণুর খাদ্য হিসাবে কাজ করায়, বিভিন্ন ক্রনিকরোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুগুলি ( EBV ,Shingles, Rhino, Streptococci ) বৃদ্ধি পায়৷ ফলতঃ নানা ক্রনিক অসুখ বাঁধতে পারে৷

প্লাষ্টিক একটি ট্রিগার ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করে৷ এটা দেহে টক্সিন বা বিষ হিসাবে ক্রিয়া করে৷

দেহে প্লাষ্টিক রিসিড্যুউ অত্যাধিক হলে এবং EBV এর শক্তিশালী স্ট্রেইন( ৬০ রকমের স্ট্রেইন আছে) থাকলে, বিভিন্ন ক্যান্সারও হতে পারে৷

অতএব, সুস্থ স্বাস্থ্য ও সমাজ গড়তে আমাদের প্লাষ্টিকের ব্যবহার কমাতেই হবে৷
সিঙ্গল ইউজ প্লাষ্টিক শুধুমাত্র সরকারীভাবে বন্ধ করলে হবে না৷ সমস্ত ধরণের প্লাষ্টিক ব্যবহার কমাতে হবে বা বন্ধ করতে হবে৷ নাহলে, কোন ভাল ফলাফল আশা করা বৃথা হবে৷

ইতিমধ্যে, আপনার দেহে সন্চিত প্লাষ্টিক রিসিড্যুউগুলি কীভাবে কমাবেনঃ—
১) প্লাষ্টিকের ব্যবহার কমিয়ে কাঠ বা বাঁশ বা অন্যান্য ধাতব লৌহের ব্যবহার বাড়াতে হবে৷
২)লিভারকে ডিটক্সিফিকেশন করতে হবে ৷ প্রচুর ফল-মূল, শাক-শব্জী, হিলিং ফুডস্ খেতে হবে৷
৩)নিয়মিত রেজিমেন্টাল ওয়েট কাপিং থেরাপি করেও ব্লাড বা লিম্ফ্যাটিক থেকে প্লাষ্টিক রিসিড্যুউগুলি সঙ্গে সঙ্গে বের করা যেতে পারে৷
ডিটক্সিফিকেশনের জন্য হিজামা বা RWCT খুবই ভাল পদ্ধতি৷
৪)সর্বোপরি, প্লাষ্টিকের স্বাস্থ্য-ক্ষতি সম্পর্কে আমাদের অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে৷

ধন্যবাদ৷

লিখেছেন—ডাঃ ইয়ার আলী,মেডিক্যাল অফিসার৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.