আগামী দিন ভয়াবহ জল সঙ্কটের কবলে পড়তে চলেছে ভারত

Spread the love

প্রতিবেদন,অয়ন বাংলা:-গোটা দেশে আজ ক্রমশ বেড়ে চলেছে জলের হাহাকার ,গ্লোবাল ওর্য়ামিং ,তাপমাত্রা বৃদ্ধি,পানীয় জলের সমস্যা ,গাছ কাটা ,অরণ্য কমে যাওয়া ,আজ গোটা পৃথিবীকে ধ্বংশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দ্রুত বিপুল পরিমাণ জল মাটির তলা থেকে তুলে নেওয়ায়
ভারতের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে জলের বিপুল চাহিদা। বাড়িতে বাড়িতে, কৃষি জমিতে, কল-কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিতে পর্যাপ্ত জলের জোগান দেওয়াই মুশকিল। এর বাইরে প্রতি দিন কোটি কোটি লিটার জল তুলে নিচ্ছে বোতলজাত পানীয় জল ও সফট- ড্রিঙ্কস কোম্পানিগুলি। একই সঙ্গে চলেছে জনসচেতনতার অভাবে বিশুদ্ধ জলের অপচয়, জলদূষণ। দেখা গেছে, প্রত্যেক বছর ভারতে হওয়া বৃষ্টিপাত ও জমা জলের চল্লিশ শতাংশ খরচ করে ফেলেন ভারতবাসী। ফলে দেশে জলের ভাণ্ডার কখনওই তার ঘাটতি পূরণ করতে পারে না।


বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পাওয়া
বিশ্ব জুড়ে উষ্ণায়নে এমনিতেই সারা পৃথিবীতে বর্ষা ভীষণ খামখেয়ালি হয়ে গেছে। ভারতের প্রতিও বর্ষার সেই মনোভাবে কোনও পরিবর্তন দেখা যায়নি। ভারতে আশঙ্কাজনক ভাবে কমে যাচ্ছে বৃষ্টিপাত। ২০০২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ভৌমজল প্রতি বছর গড়ে ১০-২৫ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়েছে।

১৯৭০ সালে খরিফ বা গরমের কৃষি মরসুমে ভারতে গড় বৃষ্টিপাত হয়েছিল ১০৫০ মিলিমিটার। ২০১৫ সালে খরিফ মরসুমে সেই গড় বৃষ্টিপাত কমে দাঁড়িয়েছে ১০০০ মিলিমিটারে। ১৯৭০ সালে রবি মরসুমে বা শীতকালীন কৃষি মরসুমে গড় বৃষ্টিপাত হত ১৫০ মিলিমিটার। তা ২০১৫ সালে কমে দাঁড়িয়েছে ১০০ মিলিমিটারে।

ভাবছেন কী আর এমন কমেছে! মাত্রই তো ৫০ মিলিমিটার! ভারতের আয়তন ৩২,৮৭,৫৯০ স্কোয়ার কিলোমিটার। এই পুরো এলাকাকে বছরে দু’বার ৫০ মিলিমিটার বা একবার ১০০ মিলিমিটার জলে ভরিয়ে দিলে কত পরিমাণ জল হবে সেটা আন্দাজ করতে পারছেন? হ্যাঁ সেই পরিমাণ ভৌমজল প্রতিবছর আমরা কম পাচ্ছি। এই পরিসংখ্যানের যে কী ভয়াবহতা বহন করছে তা হয়তো আমরা এখন কল্পনাও করতে পারছি না।
বর্ষাকালে বৃষ্টিহীন দিনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া
নামেই বর্ষাকাল, কিন্তু বৃষ্টিহীন দিনের সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। আষাঢ়-শ্রাবণ এবং বৈশাখ-জৈষ্ঠের মধ্যে কোনও তফাতই নেই প্রায়। কী গরমের তীব্রতায়, কী আবহাওয়ার চরিত্রে। ১৯৭০ সালে বর্ষার দিনগুলির চল্লিশ শতাংশ দিন থাকত বৃষ্টিবিহীন। ২০১৫ সালে এসে দেখা গেল, বর্ষাকালের ৪৬% দিনই বৃষ্টিবিহীন।

দেশের নানা স্থানে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উভয়ই বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রাও বাড়ছে। তাপপ্রবাহ স্থায়ী হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে পিছিয়ে যাচ্ছে বর্ষা। বাড়ছে বর্ষাকালে বৃষ্টিহীন দিনের সংখ্যা।

একটু ভাবুন, আর ক’দিনের মধ্যেই বর্ষা শুরু হওয়ার কথা, অথচ তাপপ্রবাহ চলছে সারা ভারত জুড়ে। গত কাল (২ জুন) জানা গিয়েছে, বর্তমানে সারা বিশ্বে যে ১৫টি স্থানে গরম সব চেয়ে বেশি, তার মধ্যে আছে ভারতেরই ১০টি শহর। রাজস্থানের চুরু ও শ্রী গঙ্গানগরে তাপমাত্রা পৌঁছেছে যথাক্রমে ৪৮.৯ এবং ৪৮.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া সংক্রান্ত ওয়েবসাইট এলডোরাডোয় বলা হয়েছে, উষ্ণতার দিক থেকে রাজস্থানের পরেই আছে পাকিস্তানের জেকোবাবাদ। সেখানে তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরপ্রদেশের বান্দায় তাপমাত্রা ৪৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হরিয়ানার নারনুয়াল নামে এক জায়গায় তাপমাত্রা ৪৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপপ্রবাহ বৃদ্ধির জন্য দায়ী পশ্চিমী বায়ু। অর্থাৎ পাকিস্তান ও রাজস্থানের মরুভূমি থেকে আসা উত্তপ্ত বাতাস। ফলে এ বছরও ভারতে বৃষ্টিপাত কম হতে চলেছে। এবং ভারতে জলসঙ্কট তীব্র থেকে তীব্রতর হতে চলেছে।
২০৫০ সালে ভারতের ৭০% জল দূষিত হয়ে যাবে
ইতিমধ্যেই ভারতের বহু রাজ্য, যেমন অন্ধ্রপ্রদেশ, ছত্তীশগড়, তামিলনাড়ু তীব্র জলসংকটে ভুগতে শুরু করেছে বর্ষার খামখেয়ালিপনায়। যদি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তা হলে ২০৫০ সালে ভারতের ৭০% জল দূষিত হয়ে যাবে। Global water quality index -এ ১২২ টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান হবে ১২০ তম। ২০৫০ সালে ভারত জলাভাবের জন্যই ৬% জিডিপি হারাবে। জলসঙ্কটের ভয়াবহ প্রভাব পড়বে খাদ্য উৎপাদনেও। দেশ জুড়ে দেখা দেবে ভয়াবহ খাদ্যাভাব।

তাই কেন্দ্রীয় নীতি আয়োগ রাজ্য সরকারগুলিকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। ভারতের প্রত্যেকটি রাজ্যকে ভৌমজল আর কৃষিকাজে ব্যবহৃত জলের বণ্টন ব্যবস্থার দিকে দ্রুত নজর দিতে বলা হয়েছে। জলের অপচয় কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে বলা হয়েছে। নইলে জলের সঙ্কটে দেশবাসীর ভয়াবহ পরিণতির কথাও জানিয়ে দিয়েছে তারা। আজ গোটা বিশ্ব জুড়ে জলের ভয়াবহতা ক্রমশ গ্রাস করছে ,পৃথিবীকে ধ্বংশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.