নিউজ ডেস্ক :- একুশে রাম ছাব্বিশে বাম ,যেন তেন প্রকারেন তৃণমূলকেই হারাতে এই অন্ধ বিরোধীতাই কি সিপিএমের কাল হল ? বিধায়কেত সংখ্যা শূণ্যতে নেমে এল !আজ নতুন করে ভাববার বিষয় ? এক সময়ে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে বামেদের অন্ধ বিরোধিতা আজ বিজেপিকে ক্ষমতায় নিয়ে আসতে অনেকটাই সাহায্য করেছে । আসুন আজ দেখে নিই সেই চুলচেরা বিশ্লেষণ ।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের মানুষও ভারতের রাজনৈতিক নকশায় একটা ব্যতিক্রমী রাজনীতির জন্ম দিয়েছিল। বামপন্থী আদর্শের পেছনে বাংলার একটা আলাদা রাজনৈতিক পরিচয় গড়ে উঠেছিল, পশ্চিমবঙ্গ পরিচিত হয়ে উঠেছিল ভারতের ‘লাল দুর্গ’ হিসেবে
বাংলা ভাগ ধর্মের ভিত্তিতে হলেও ১৯৪৭-এর পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে ধর্মভিত্তিক দলগুলো কোনদিন মাটি পায়নি। হিন্দুসভার প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী একজন বাঙালি, কিন্তু তার দল অথবা পরে ভারতীয় জনসংঘ অথবা বিজেপি, কেউই পশ্চিমবঙ্গে কিছু করতে পারেনি।
প্রথমে কংগ্রেস (১৯৪৭-৭৭), তারপর সিপিএমএ’র নেতৃত্বে বামফ্রন্ট (১৯৭৭-২০১১), এরপর ২০১১ সাল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সবাই বলিষ্ঠভাবে ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি করেছে !
সদ্য শেষ হওয়া বিধানসভা ভোটে একটিও আসন পাননি বামপন্থি এবং কংগ্রেস প্রার্থীরা৷ স্বাধীন ভারতে পশ্চিমবঙ্গে এহেন ‘অঘটন’ এই প্রথম৷
বিজেপির তাবড় নেতা, অর্থবল, লোকবলের বিরুদ্ধে কেমন ‘একাই একশ’ হয়ে লড়ে গেলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি, সে নিয়ে কথা হচ্ছে অবশ্যই৷ কিন্তু তার থেকেও বেশি কথা হচ্ছে, এতদিন সঙ্ঘ পরিবারের প্রভাবমুক্ত এই রাজ্যে বিজেপির প্রধান বিরোধী দল হয়ে যাওয়া৷ কিন্তু তাকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে আলোচনা, যে এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বামফ্রন্ট বা কংগ্রেসের একজন বিধায়কও থাকবেন না, যারা এর আগে এই রাজ্যে ক্ষমতায় থেকেছে৷
কংগ্রেস ও বামেদের ভোটে পশ্চিমবঙ্গে পুষ্ট হয়েছে বিজেপি
২০১৬ সালে কোচবিহার লোকসভার উপনির্বাচনে প্রথম বাম ভোটের বিজেপির বাক্সে যাত্রার ছবিটা ধরা পরে। ২০১৪ সালে মোদী ওয়েভের নির্বাচনেও এই লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি ভোট পেয়েছিল ১৬.৩৪ শতাংশ। বামেরা পেয়েছিল ৩২.৯৮ শতাংশ। সেখানে, উপনির্বাচনে বামেদের ভোট কমে দাঁড়ায় ৬.৪৪ শতাংশ আর বিজেপির ভোট বেড়ে দাঁড়ায় ২৮.৩২ শতাংশ।
এর পর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন উপনির্বাচনে বাম ও কংগ্রেসের ভোট পেয়ে বিজেপি এখন রাজ্যের দ্বিতীয় রাজনৈতিক শক্তি।
বামফ্রন্ট ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর, মাত্র ১০ বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে যাদের শক্তি শূন্যে গিয়ে ঠেকেছে৷ গত লোকসভা ভোটে বামেদের ভোট কমে ছয় শতাংশে দাঁড়িয়েছিল৷ এবার বিধানসভা ভোটে আরো কিছুটা কমে সেটা ৫.৫ শতাংশ৷
আবার নির্বাচনি সংখ্যাতত্ত্ববিদ বিশ্বনাথ চক্রবর্তী জোর দিয়ে বলছেন, এবার বামেদের এবং কংগ্রেসের ভোট নিশ্চিত তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে গেছে৷ তিনি বললেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে এবার ভোটের আগে যে ‘নো বিজেপি’ প্রচার হয়েছিল, এটা তারই ফল৷ বাম, কংগ্রেস, তৃণমূল, সেই সঙ্গে বুদ্ধিজীবীরা, বাম লিবারেলরা এই নো বিজেপি প্রচার চালিয়েছিল৷ তার সুফল পেয়েছে তৃণমূল৷ বাম এবং কংগ্রেসের প্রায় সমান সমান ভোট তৃণমূলের পক্ষে পড়েছে ।
অন্ধ তৃণমূলের বিরোধিতা ,প্রভাব পড়ল নির্বাচনে । তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকেই সমর্থকদের শুধুই তৃণমূল বিরোধিতা শিখিয়ে ছিল বামফ্রন্ট
আজ রাজ্যপাট হারিয়ে তৃণমূলের আগ্রাসনের মুখে পরে সেই বিরোধিতা আরও তীব্র হয়েছে। নির্বাচনে জিতে ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার কোনও আশাই আর নেই তা বিলক্ষণ বুঝেছে বাম কর্মী সমর্থকরা। তাই না পড়া মার্ক্সবাদ লেনিনবাদ ও চর্চা না করা কম্যুনিজমের পাট চুকিয়ে তৃণমূল বিরোধিতায় তারা এখন গেরুয়া শিবিরকেই বেছে নিচ্ছেন।
১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার পরে প্রতিটি জনসভায় জ্যোতি বসু বিজেপিকে বর্বরদের দল বলতেন। এই নিয়ে অটল বিহারী বাজপেয়ী অসন্তোষের কথাও তিনি বলতেন। তাঁর সেই দলের কাছেই এখন রক্ষা করতে হয়ে দেখা দিয়েছে বিজেপি। এই দিন দেখার আগেই চোখ বুঝেছেন জ্যোতি বসু। তাঁর প্রতি অবিচার না করার জন্য ইতিহাসকে ধন্যবাদ না জানিয়ে উপায় নেই।
শেষ কথা বামরা কি আর কোন দিনই ক্ষমতা ই ফিরবে না ? না আবার স্বমহিমায় ঘুরে দাঁড়াবে এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন ?