প্রতিবেদন, অয়ন বাংলা:- সপ্তম দফার ভোট গ্রহণ পর্ব শেষ হতেই বিভিন্ন চ্যানেলে বিভিন্ন সংস্থাহার করা সমীক্ষা প্রকাশ হল। গতকাল শেষ হল ২০১৯ লোকসভা ভোটের ভোট গ্রহণ। সঙ্গে সঙ্গে প্রকাশিত হয়েছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের এক্সিট পোল। প্রায় সব এক্সিট পোল-ই বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর জয়ের পূর্বাভাস দিচ্ছে। কিন্তু অতীতে দেখা গিয়েছে এক্সিট পোল অনেক ক্ষেত্রেই ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আজ আমরা সাম্প্রতিক সময়ে হয়ে যাওয়া কিছু নির্বাচনী ফলাফল এবং এক্সিট পোলের বিষয়টা তুলর ধরছি।
২০০৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের: -২০০৪ সালে সমস্ত এক্সিট পোল পূর্বাভাস দেয় যে প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী অধীনে ক্ষমতাসীন এনডিএ ২৩০ থেকে ২৭৫ আসন পেয়ে আবার সরকার গঠন করবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গিয়েছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ পেয়েছে ১৮১ টি আসন, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ পেয়েছে ২১৮ টি আসন। সেবার বামেদের সমর্থনে ইউপিএ সরকার গঠন করেছিল।
২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচন: -যদিও এক্সিট পোল ইউপিকে ১৮৫ থেকে ২০৫ টি আসনের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা গিয়েছিল ইউপিএ অনেক ভালো ফল করেছে। সেবার ইউপিএ ২৬২ টি আসন পেয়েছিল।
২০১১ আসাম বিধানসভা নির্বাচন: -প্রায় সব এক্সিট পোল বলেছিল আসামে এবার কংগ্রেসদ ক্ষমতা হারাবে। কেউ কেউ বলেছিল আসামে কংগ্রেস সর্বোচ্চ ৪৬ টি আসন পেতে পারে। কিন্তু কংগ্রেস ৭৮ টি আসন পেয়ে তৃতীয় বারের মতো ক্ষমতা ধরে রেখেছিল।
২০১২ পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচন: -যদিও সমস্ত এক্সিট পোল ৬০ থেকে ৬৮ আসন দিয়ে কংগ্রেসের জয়ের পূর্বাভাস দিয়েছিল, বাস্তবে দেখা যায় বিজেপি-আকালি জোট ৬৮ টি আসন পেয়ে ক্ষমতা দখল করেছে।
২০১২ উত্তরাখণ্ড বিধানসভা নির্বাচন: -বেশির ভাগ এক্সিট পোল নির্দেশ করেছিল বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে ক্লোজ ফাইট। কিছুটা এগিয়ে রাখা হয়েছিল বিজেপিকে। বাস্তবে ৩২ টি আসন পেয়ে ক্ষমতা দখল করে কংগ্রেস।
২০১৪ সাধারণ নির্বাচন:- সমস্ত এক্সিট পোল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএর জয়কে নির্দেশ করেছিল। এনডিএর আসন সংখ্যা দেওয়া হয়েছিল ২০০ থেকে ৩০০। বাস্তবে এনডিএ পেয়েছিল ৩৩৪ টি আসন। কংগ্রেসকে অধিকাংশ এক্সিট পোল দিয়েছিল ৮০-১০০ আসন। কিন্তু মাত্র ৪৪ টি আসন দখল করতে পেরেছিল কংগ্রেস।
২০১৫ দিল্লি বিধানসভা নির্বাচন: -বেশির ভাগ এক্সিট পোল আম আদমি পার্টি নির্বাচনে ৩৫-৪৫ আসন জয়ী হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৬৭ টি আসন পেয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল আপ।
২০১৬ তামিলনাড়ু বিধানসভা নির্বাচন: -প্রায় সমস্ত এক্সিট পোলে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে ডিএমকে-কংগ্রেস জোট ক্ষমতায় ফিরবে। বাস্তবে দেখা যায় জালালিতা নেতৃত্বাধীন এআইডিএমকে ১৩৪ টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা দখল করে।
২০১৭ পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচন:- যদিও বেশিরভাগ এক্সিট পোল কংগ্রেসের জয়ের পূর্বাভাস দিয়েছিল তবে প্রায় সব জরিপ ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল যে, আপ ৫১-৫৭ আসন পাবে। শেষ পর্যন্ত, কংগ্রেসের ৭৭ টি আসন নিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল আপ পেয়েছিল মাত্র ২০ টি আসন।
২০১৪ সাধারণ নির্বাচন পশ্চিমবঙ্গ: -২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এবিপি-সিএসডিএস এর যৌথ সমীক্ষা তৃণমূলকে ২৪ টি, বামফ্রন্টকে ১২ টি, কংগ্রেসকে ৫ টি এবং বিজেপিকে ১ টি আসন দেয়। বাস্তবে তৃণমূল ৩৪ টি, কংগ্রেস ৪ টি, সিপিএম ২ টি এবং বিজেপি ২ টি আসন দখল করে।
২০১৬ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন: -এক্সিট পোল গুলো তৃণমূলকে ১২৫-১৬৩ টি এবং কংগ্রেস-বামফ্রন্টকে ৭০-১২৬ আসনের পূর্বাভাস দেয়। ভোট গণনার পর দেখা যায় তৃণমূল ২১১ টি, কংগ্রেস ৪৪ টি এবং বামফ্রন্ট ২৬ টি আসন পেয়েছিল।
২০১৮ রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় বিধানসভা নির্বাচন:- এবিপি-সিএসডিএস এর যৌথ সমীক্ষা রাজস্থানে কংগ্রেসকে ১০১ টি বিজেপিকে ৮৩ টি, মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেসকে ১২৬ টি বিজেপিকে ৯৪ টি এবং ছত্রিশগড়ে কংগ্রেসকে ৩৫ টি বিজেপিকে ৫২ টি আসন দিয়েছিল। ফল ঘোষণার পর দেখা যায় রাজস্থানে কংগ্রেস ৯৯ টি বিজেপি ৭৩ টি, মধ্যপ্রদেশে কংগ্রেস ১১৪ টি বিজেপি ১০৯ টি এবং ছত্রিশগড়ে কংগ্রেস ৬৩ টি বিজেপি ১৮ টি আসনে জয় লাভ করেছে।
তবে অনেকক্ষেত্রে এক্সিট পোলের হিসাব প্রায় পুরোপুরিই মিলে গিয়েছে। যেমন মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, গুজরাট এবং ঝাড়খণ্ডে বিজেপির জয়ের অনুমান মিলে গিয়েছিল। জম্মু-কাশ্মীরের ত্রিশঙ্কু ফলের হিসাবও মিলে গিয়েছিল। সুতরাং উপরের ফল গুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এক্সিট পোলের হিসাব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাস্তবের থেকে দূরে থেকে যায়। সমীক্ষা সমীক্ষাই এর কোন বাস্তবতা নেই,এই নিয়ে মাতামাতি করাও কিছুও নেই ।শেষে অয়ন বাংলার একটা সমীক্ষা যোগ করে দিই:-এনডিএ -208 ,ইউ পি এ -182 অন্যান্য 153 টা সিট পেতে পারে। আবার পশ্চিম বাংলায় :-তৃণমূল -31 ,বিজেপি-6,কংগ্রেস 4,সিপিএম -1
তবে শেষ কথা বলবে 23 শে মের ফলাফল।