গণপিটুনিতে নিহত বাসন্তীর রফিকুলের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং
নিউজ ডেস্ক বঙ্গ রিপোর্ট : মুসলিম অধ্যুষিত জেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর বুকে ঘটে গেল পয়লা আগস্ট হাড় হিম করা নারকীয় ঘটনা। আবার মনে করিয়ে দিল উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের হাতে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচার। ত্রিশ -এর মুসলিম যুবক রফিকুল মোল্লা ওরফে বাকী বিল্লাহ। ঘটনার দিন আনুমানিক সন্ধ্যা ৫ টার সময় একটি অপরিচিত ফোন নম্বর থেকে ফোন আসে এবং ফোন আসার পরে তার স্ত্রীকে একটু পরে আসছি বলে বাড়ি থেকে বাইকে বের হয়ে যায় । পরে প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে প্রথমে তারা বাকি বিল্লার হাত, পা বেঁধে নারকীয় অত্যাচার করে তারপর পায়ে দড়ি বেধে মাথা মুখ, নিচু করে ঝুলিয়ে দিয়ে নির্মমভাবে মারতে থাকে । তাতে ক্ষান্ত না হয়ে, গরম জল গায়ে ঢেলে দেয়। তারপর ইনজেকশনের সিরিঞ্জ দিয়ে নির্বিচারে গায়ে ফোটায়।
একই পরিবারের ৬ ভাই ও তাদের মা আরএসএস –এর মহিলা সংগঠনের দুর্গা বাহিনী নেত্রীর নেতৃত্বে প্রায় ৫০-৬০ জন উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের ক্যাডার বাহিনী এবং সক্রিয় সদস্যগন সম্মিলিত ভাবে মোবাইল চোরের অজুহাতে সম্মিলিতভাবে সারারাত ধরে বিভিন্ন ভাবে অত্যাচার করে বলে অভিযোগ । নারকীয় অত্যাচারের সময় মৃত ব্যাক্তি পিপাশায় কাতর হয়ে এক ফোটা জল পান করতে চাইলেও তাকে পান করার জন্য জল দেয়নি ও এই নারকীয় অত্যাচারের নারকীয় তান্ডব ভিডিও রেকর্ডিং করে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ ।
আশ্চর্যের বিষয় এলাকার হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে কোন মানুষ মৃত বাকিবিল্লা কোন ধরনের কোন অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিল কিনা বলতে পারেনি । সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেছে যে, মৃত বাকিবুল্লা একজন সাধারণ সরল সহজ নিরীহ ব্যাক্তি ছিল ।
মৃত ব্যক্তির বাইক ভেঙে চুরমার করে দেয় এবং এন্ড্রয়েড ফোনটি কেড়ে নেয়। মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর কাছ থেকে জানা যায় যে, একটি অজানা নাম্বার থেকে ফোন আসে, যে ফোন পাওয়ার পর মৃত ব্যক্তি বেরিয়ে যায়। এর থেকে একটা জিনিস বোঝা যায় প্রমাণ লোপাট করার জন্য ফোননটি আসামিরা নিয়ে নেয় এবং ফোনটির আর কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
পরে বাসন্তী থানার পুলিশ সকাল আটটার সময় খবর পেয়ে যখন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং হসপিটালে চিরদিনের মত এই দুনিয়াকে চির বিদায় জানিয়ে চলে যায় একটা অসহায় তরতাজা প্রাণ। সাক্ষী থাকলো এ বাংলা। আবার সাক্ষী থাকলো সম্প্রীতির পীঠস্থানে মৈত্রীর উর্বর ভূমি বাংলার বুকে নারকীয় লজ্জাজনক এ ঘটনা।
যে ঘটনার সরেজমিনে তদন্ত করতে গিয়ে ১০ থেকে ১৫ জনের পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিনিধি দল।সোমবার মৃত বাকিবিল্লার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ও সেই সঙ্গে বাসন্তী থানার ওসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এবং ঘটনাস্থল সাক্ষাৎ করে এলাকার নিরপেক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শী মানুষের সঙ্গে কথা বলে।
প্রতিনিধি দলের মধ্যে অন্যতম ছিলেন পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার কলকাতা জেলা কমিটির সভাপতি রেজাউল শেখ, সম্পাদক নজরুল মন্ডল।এছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীল প্রতিনিধি এ ওই ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিমে ন্যাশনাল কনফেডরেশন অফ হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের অন্যতম সদস্য হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট আইনজীবী, মানবাধিকার তথা সমাজ কর্মী আইনজীবী মোঃ আব্দুল মোমেন হালদার।
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম গত ইংরেজি 06/09/2021 তারিখ সোমবার আনুমানিক বেলা বারোটার সময় প্রথমে ভিকটিম তথা আক্রান্ত পরিবারের বাড়িতে গিয়ে মৃত রফিকুল মোল্লা ওরফে বাকী বিল্লাহ মোল্লার মা, বাবা, ভাই, দাদা, বোনদের ও তাঁর স্ত্রী এবং নাবালিকা মেয়ের সঙ্গে কথা বলে। একই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে মৃত বাকিবিল্লা ছিল পরিবারের একমাত্র আয়-উপার্জনশীল ব্যক্তি তাই পরিবারের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ উপার্জনশীল ব্যক্তিকে হারিয়ে পুরো পরিবারটি আজ দিশেহারা এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আতঙ্কিত।
ভিকটিম পরিবার পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া এবং ন্যাশনাল কনফেডরেশন অফ হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস টিম এর মাধ্যমে উপযুক্ত তদন্ত ও বিচারের মাধ্যমে দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির দাবি জানাচ্ছে । সেই সঙ্গে মৃত পরিবারের আর্থিক ভাবে পুণ্য সহায়তার দাবি জানাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে এবং মৃত বাকি বিল্লাহর নাবালিকা মেয়ের পড়াশোনার সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছে পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া । সেই সঙ্গে ভিকটিম পরিবারের লোকজন যথাযথ আইনি লড়াই করার জন্য পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়ার কলকাতা জেলা কমিটি ও ন্যাশনাল কনফেডরেশন অফ হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশনের এক ফাইন্ডিংস টিম এর উপরে লিখিতভাবে আবেদন জানানোর পরিপেক্ষিতে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে উক্ত আসামিদের যথাযথ উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার জন্য পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া এবং ন্যাশনাল কনফেডরেশন অফ হিউম্যান রাইটস অর্গানাইজেশন যৌথভাবে আইনজীবী মোঃ আব্দুল মোমেন হালদারের উপরে দায়িত্বভার অর্পণ করেন।
দায়িত্বভার পেয়ে আইনজীবী মানবাধিকার কর্মী তথা সমাজসেবী মোঃ আব্দুল মোমেন হালদার বলেন যে, “মৃত বাকি বিল্লার উপর অত্যাচারকারী অভিযুক্তদের যথাযত উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার জন্য নিরবিচ্ছিন্ন আইনি লড়াই করা হবে, যথাযথ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার জন্য ।এবং তার প্রয়োজনে সুপ্রিম কোর্টে যেতে হয়, যাওয়া হবে । কিন্তু কোন ভাবে, কোনো অবস্থাতে আসামিদের ছেড়ে দেওয়া হবে না” ।
এই ফাইন্ডিংস টিম পরে বাসন্তী থানার ইন্সপেক্টর ইনচার্জ সঙ্গে দীর্ঘক্ষন তদন্তের গতি প্রকৃতি নিয়ে কথা বলেন এবং সেখান থেকে জানা যায় যে, অত্র ঘটনার পরিপেক্ষিতে বাসন্তী থানা একটি খুনের মামলা রুজু করেন । যে কেসে মোট ১৬ জন আসামী হিসাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে, স্যোসাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়া মৃত বাকিবুল্লার নারকীয় অত্যাচারের ভিডিও ফুটেজ দেখে, যার মধ্যে বাসন্তী থানা ৬ জনকে এরেস্ট করেছেন । যারা বর্তমানে বিচার বিভাগীয় জেল হেফাজতে রয়েছে।