রাজ্য পুলিশে কয়েক হাজার শূণ্যপদে নিয়োগ, যোগ্য সংখ্যালঘু প্রার্থীদের নিখরচায় প্রশিক্ষণ দেবে বিত্ত নিগম
নিউজ ডেস্ক :- পুলিশে সংখ্যালঘু ছেলে মেয়েদের উপস্থিতি একেবারেই হাতেগোনা। যারা প্রস্তুতি নেয় তারা আবার সঠিক প্রশিক্ষণের অভাবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারেনা। তবে এবার সংখ্যালঘু যুবক যুবতীদের একদম নিখরচায় পুলিশ কনস্টেবল পরীক্ষার প্রশিক্ষণ দেবে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম। সম্প্রতি ওয়েস্ট বেঙ্গল পুলিশ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড প্রায় ১০ হাজার রাজ্য পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর ও কনস্টেবলের শূন্যপদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এর মধ্যে কনস্টেবলের জন্য শূন্যপদ ৮৬৩২ টি। যেটির আবেদনের শেষ তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারী। উল্লেখ্য, বহুদিন পর পুলিশে এত বেশি পরিমাণ শূণ্য পদে নিয়োগ হতে যাচ্ছে, তাই চাকরি পরীক্ষার্থীদের কাছে চাকরি পাওয়ার এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ।
পদ সংখ্যা :
কনস্টেবল – ৭,৪৪০।
মহিলা কনস্টেবল – ১,১৯২।
সাব-ইন্সপেক্টর – ৭৫৩।
মহিলা সাব-ইন্সপেক্টর – ১৫০।
সাব-ইন্সপেক্টর (সশস্ত্র বাহিনী, শুধু পুরুষ) – ১৮৫।
বয়স :
কনস্টেবল – ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি অনুযায়ী, আবেদনকারীর বয়স ২০-র নীচে এবং ২৭-র উপর হতে পারবে না। তফসিলি জাতি এবং উপজাতি প্রার্থীদের বয়সের সর্বোচ্চ সীমায় পাঁচ বছরের ছাড় দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের ওবিসি প্রার্থীরা তিন বছরের ছাড় পাবেন।
শিক্ষাগত যোগ্যতা :
কনস্টেবল – আবেদনকারীদের স্বীকৃত কোনও বোর্ড থেকে মাধ্যমিক বা সমতুল্য কোনও পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। তাঁদের বাংলায় কথা বলতে, লিখতে এবং পড়তে জানতে হবে। তবে দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলার আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম প্রয়োজ্য নয়।
সাব-ইন্সপেক্টর – আবেদনকারীদের স্বীকৃত কোনও বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক বা সমতুল্য কোনও ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। কনস্টেবল পদের মতো এক্ষেত্রে আবেদনকারীদের বাংলায় কথা বলতে, লিখতে এবং পড়তে জানতে হবে। তবে দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলার আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম প্রয়োজ্য নয়।
আবেদন ফি :
কনস্টেবল – অনলাইনে আবেদনের জন্য অসংরক্ষিত প্রার্থীদের ১৭৫ টাকা দিতে হবে (যাঁরা ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড না নেট ব্যাঙ্কিং বা ই-ওয়ালেট বা অন্যান্য অ্যাপের মাধ্যমে টাকা জমা দেবেন)। ‘সহজ মিত্র কেন্দ্র’-এর মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার জন্য ১৯৩ টাকা ফি (জিএসটি-সহ পরিষেবা খরচ ধরে) দিতে হবে। পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের মাধ্যমেও ফি জমা দেওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে ২০৬ টাকা (জিএসটি ধরে) জমা দিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের তফসিলি জাতি এবং উপজাতি প্রার্থীদের শুধুমাত্র ‘প্রসেসিং ফি’ ২০ টাকা জমা দিতে হবে। সঙ্গে জিএসটি বাবদ ‘সহজ মিত্র কেন্দ্র’ এবং ব্যাঙ্কে বাড়তি দিতে হবে।
সাব-ইন্সপেক্টর – অনলাইনে আবেদনের জন্য অসংরক্ষিত প্রার্থীদের ২৭৫ টাকা দিতে হবে (যাঁরা ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড না নেট ব্যাঙ্কিং বা ই-ওয়ালেট বা অন্যান্য অ্যাপের মাধ্যমে টাকা জমা দেবেন)। ‘সহজ মিত্র কেন্দ্র’-এর মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন জমা দেওয়ার জন্য ২৯৩ টাকা ফি (জিএসটি-সহ পরিষেবা খরচ ধরে) দিতে হবে। পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের মাধ্যমেও ফি জমা দেওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে ৩০৬ টাকা (জিএসটি ধরে) জমা দিতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের তফসিলি জাতি এবং উপজাতি প্রার্থীদের শুধুমাত্র ‘প্রসেসিং ফি’ ২০ টাকা জমা দিতে হবে। সঙ্গে জিএসটি বাবদ ‘সহজ মিত্র কেন্দ্র’ এবং ব্যাঙ্কে বাড়তি দিতে হবে।
আবেদনের সময়সীমা : আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫ টা পর্যন্ত।
উল্লেখ্য এই নিয়োগ প্রক্রিয়া মাথায় রেখে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম আবেদনকারী চাকরিপ্রার্থীদের সম্পূর্ণ নিখরচায় পরীক্ষায় সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করবে। নিগমের তরফ থেকে প্রতিটি জেলার সদর শহরে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এর জন্য কোচিং ক্লাস করা হবে বলে জানানো হয়েছে। কোচিং ক্লাসের জন্য ইচ্ছুক সংখ্যালঘু ( মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, পারসী ও শিখ ) যুবক যুবতীদের আগামী ২৮ শে ফেব্রুয়ারির মধ্যে www.wbmdfc.org এ আবেদন করতে বলা হয়েছে। এছাড়া ৮৫৮৫৮৫৯৯৭১ এ ফোন করে অথবা ৭৪৩৯৬৮৫৭৮৫ এ হোয়াটসঅ্যাপ করেও কোচিং ক্লাস সম্পর্কে বিশদে চাকরিপ্রার্থীরা জানতে পারবে।
তবে কোচিং ক্লাসে অংশ নেওয়ার জন্য কারা যোগ্য নিগমের তরফ থেকে বিজ্ঞাপনে তা স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১ লা জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত যাদের বয়স ১৮ থেকে ২৭ এর মধ্যে ( সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বয়সের উপর ছাড় আছে ), ন্যূনতম মাধ্যমিক বা সমতুল্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, যে পুরুষদের উচ্চতা ১৬৭ সেমি, মহিলাদের ১৬০ সেমি ( গোর্খা ও গারওয়ালিদের ক্ষেত্রে পুরুষদের উচ্চতা ১৬০ সেমি ও মহিলাদের উচ্চতা ১৫২ সেমি), যে সমস্ত পুরুষদের দৌড়ের ক্ষমতা ১৬০০ মিটার, মহিলাদের ৮০০ মিটার, একমাত্র তারাই এই কোচিং ক্লাসে যোগ দেওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
২০১৯ সালে বিত্ত নিগমের প্রশিক্ষণ নিয়ে বর্তমান আসানসোলে কর্মরত পুলিশ কনস্টেবল আব্দুল আজিজ প্রতিবেদককে বলেন, বিত্ত নিগমে বিনা পয়সায় প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ না পেলে আমি হয়তো চাকরিটাই পেতাম না। কেননা নুন আনতে পান্তা ফুরোন সংসারে আমার পক্ষে অর্থ খরচ করে প্রশিক্ষণ নেওয়া সম্ভব ছিল না।” তিনি আরো বলেন,বেশিরভাগ প্রার্থী দৌড় প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে থাকেন। আর যে কারনে তারা চাকরি পাননা। সেখানে বিত্ত নিগম অভিজ্ঞ প্রশিক্ষকের মাধ্যমে ধারাবাহিক প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রার্থীদেরকে প্রতিযোগীতার উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করে থাকে।আর এর ফলে আমাদের মতো পরিবারের ছেলেদের পক্ষে আজ সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখা সম্ভব হচ্ছে।” নিয়োগের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- স্বচ্ছ নিয়োগ না হলে সরকারি চাকরি আমাদের কাছে অধরাই থেকে যেত।
বিত্ত নিগমের জেনারেল ম্যানেজার সামসুর রহমান বলেন, “গত তিন বছর ধরে সংখ্যালঘু ছেলে মেয়েদের জন্য আমরা এই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে আসছি। এবারও জেলা ভিত্তিক কয়েক হাজার ছেলে মেয়েকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে করে তারা সঠিকভাবে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেন।”