নিউজ ডেস্ক:- চলে গেলেন ফুটবলের রাজপুত্র! ৬০ বছর বয়সে প্রয়াত মারাদোনা !প্রয়াত দিয়েগো আর্মান্দো মারাদোনা। বাড়িতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন কিংবদন্তী ফুটবলার। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০। নভেম্বরেই ৬০ তম জন্মদিন পালনের সময় হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন মারাদোনা। তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল হাসপাতালে। আর্জেন্টিনার বিখ্যাত ১০ নম্বর জার্সিধারীর শারীরিক অবস্থা বেশ কয়েক দিন ধরেই ভালো যাচ্ছিল না। মানসিকভাবেও ভালো জায়গায় ছিলেন না কিংবদন্তী ফুটবলার। এমনই জানিয়েছিলেন মারাদোনার চিকিৎসকও। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের প্রয়াণে শোকাহত ফুটবল ভক্তরা। শোকার্ত ক্রীড়া-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের ব্যক্তিত্বরা। ফুটবলের রাজপুত্রের প্রয়াণে সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকপ্রকাশ করেছেন মারাদোনা ভক্তরা।
নভেম্বরের শুরুতেই মারাদোনাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। নিজের ৬০তম জন্মদিন পালনের পরই প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন এই ফুটবল কিংবদন্তি। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধায় অস্ত্রোপচার হয়েছিল আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়কের। সেই অস্ত্রোপচার সফলও হয়েছিল। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল না। বুধবার প্রয়াত হলেন মারাদোনা! সূত্রের খবর, ব্যুনোজ় এইরেজে নিজের বাসভবনেই মারা যান তিনি।
মারাদোনার হয়ে কাজ করেন একজন স্টাফ সে সময়ে সংবাদমাধ্যম দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস-এর কাছে বলেছিলেন যে, ‘খুব সিরিয়াস কিছু নয়।’ পাশাপাশিই তিনি আরও জানিয়েছিলেন যে, এই মুহূর্তেই মারাদোনার শারীরিক অবস্থা নিয়ে এর থেকে বেশি কিছু সংবাদমাধ্যমের কাছে বলার অনুমতি তাঁকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু সেই সিরিয়াস কিছু নয়ই যে, এমনতর সিরিয়াস হয়ে ধরা দেবে তা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি সারা বিশ্বের ফুটবল প্রেমীরা।
১৯৮৬ সালের আর্জেন্তিনার ফুটবল বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক-কে লা প্লাতার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছিল। ব্যুনোজ় এইরেজের দক্ষিণেই রয়েছে এই লা প্লাতা। গত বছরের শেষ থেকে এখানেই থাকেন মারাদোনা। ফার্স্ট ডিভিশন টিম জিমনাসিয়া ওয়াই এসগ্রিমা-র হয়ে কোচিং করার জন্যই ব্যুনোজ় এইরেজে থাকেন ফুটবলের রাজপুত্র।
কিছু দিন আগেই ৬০ বছরে পা দেন ডিয়েগো মারাদোনা। আর সে দিনই ছিল পাত্রোনাতোর বিরুদ্ধে জিমনাসিয়ার ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচ। সেই ম্যাচে ৩-০ গোলে জিতে যায় ডিয়েগোর দল জিমনাসিয়া। তবে ফার্স্ট হাফ শেষ হওয়ার আগেই মাঠ ছেড়ে চলে যান তিনি। আর তাতেই তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে করোনা আক্রান্ত হননি মারাদোনা, সে কথা নিশ্চিত করে জানিয়েছিলেন তাঁর ডাক্তার লিউক। যদিও সূত্রের খবর, তাঁর কাছে কর্মরত এক ব্যক্তি কিছু দিন আগেই কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন। তারপর বেশ কিছুদিন নিজেকে আইসোলেশনে রেখেছিলেন ডিয়েগো।
বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা মারাদোনা বার্সেলোনা, নাপোলি এবং সেভিলা ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলেছেন। ফুটবলের এই গোল্ডেন বয় ৯১ ইন্টারন্যাশনাল ফিক্সচার্সে আর্জেন্তিনাকে রিপ্রেজেন্ট করেছিলেন। চার বার আর্জেন্তিনার জার্সি গায়ে FIFA World Cup খেলেছেন মারাদোনা। ১৯৮৬ সালে আর্জেন্তিনার বিশ্বকাপ জয়ের অধিনায়ক ছিলেন তিনিই। সে বার মারাদোনা গোল্ডেন বলও জিতেছিলেন।
১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম গোলটি করার পরই ফুটবল বিশ্ব মারাদোনাকে ‘হ্যান্ড অফ গড’ আখ্যা দিয়ে দেয়। তার পরে সেই ম্যাচেই আবার যেই তিনি দ্বিতীয় গোলটি করলেন, তখন বলা হল, ‘গোল অফ দ্য সেঞ্চুরি’। তার কারণ হল এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার সেই বলটি ইংল্যান্ডের ৫ জন প্লেয়ারের থেকে ড্রিবল করে সোজা নেটে পাঠিয়েছিলেন।
নিজের ফুটবল জীবনে যেমন দাপিয়ে খেলে গিয়েছেন, তেমনই আবার ২০০৮ সাল থেকে ২০১০ সাল অবধি আর্জেন্তিনার জাতীয় দলের কোচিংও করেছিলেন ডিয়েগো মারাদোনা। তবে এহেন ফুটবল কিংবদন্তিকে ব্যক্তিগত জীবনে বহু যুদ্ধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। একটা সময়ে তিনি চরম পর্যায়ের মাদকাসক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। আর সেখান থেকেই স্থূলত্ব রোগেও আক্রান্ত হয়েছিলেন মারাদোনা। অ্যালকোহলের নেশা ছাড়ানোর জন্য ২০০৭ সাল থেকে চিকিৎসাও করাচ্ছিলেন ফুটবলের রাজপুত্র। শেষমেশ সব যুদ্ধের অবসান হল ২৫ নভেম্বর, ২০২০ সালে এসে।
সৌজন্য :- এই সময় পত্রিকা