চলে গেলেন আলিয়ার স্বনামধন্য অধ্যাপক হাফেজ শাইখ আইনুল বারি আলিয়াভী: শোকের ছায়া বিভিন্ন মহলে
নিউজ ডেস্ক :- চলে গেলেন বাংলার দিকপাল আলেম স্বনামধন্য অধ্যাপক হাফেজ শাইখ আইনুল বারি আলিয়াভী: শোকের ছায়া বিভিন্ন মহলে । আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দীর্ঘদিনের অধ্যাপক বহু গ্রন্থ প্রণেতা বহু শিক্ষকের শিক্ষক শাইখ আইনুল বারী সাহেব আজ ১৫ মে, ২০২০ শুক্রবার সন্ধ্যায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলার শিক্ষা মহলে শোকের ছায়া। তিনি কলকাতা মেটিয়াবুরুজের বাসিন্দা ছিলেন।
শাইখের মৃত্যুতে পশ্চিমবঙ্গ জমিয়তে আহলে হাদিসের সম্পাদক আলমগীর সরদার এক শোক বার্তায় বলেন প্রখ্যাত আলেম, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক, জমিয়তে আহলে হাদীস পশ্চিমবঙ্গের দীর্ঘদিনের সভাপতি ও সম্পাদক, বহু গ্রন্থ প্রণেতা হাফেজ শাইখ আইনুল বারী সাহেব কিছুক্ষণ আগে (আনুমানিক সন্ধ্যা 6:10) পরলোকগমন করেছেন, ইন্না লিল্লাহি অ ইন্না ইলাইহি র-জিঊন। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি। হে আল্লাহ! তুমি তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউস দান করো।
সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন অধ্যাপক হাফেজ শাইখ আইনুল বারী আলিয়াবীর ইন্তাকালে আমার হৃদয় ভারাক্রান্ত। আল্লাহ তাঁর জান্নাত নসিব করুন। মাদ্রাসা ছাত্র ইউনিয়নের প্রাক্তন সম্পাদক শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন আমার অত্যন্ত প্রিয় শিক্ষক জনাব আইনুলবারী (র:)আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন । আমরা শোকাহত আল্লাহ তাঁর মাগফিরাত দান করুন।
তাঁর মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়তে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে তাঁর বিভিন্ন সময়ে ছাত্র ও সহযোদ্ধাদের শোক বার্তা দেখতে পাওয়া যায়।
মুশিদাবাদে এই খবর ছিড়িয়ে পড়ার পর গোটা জেলায় আলেম মহলে শোকের ছায়া ।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: তিনি স্থানীয় ধোপাপাড়া ফ্রি প্রাইমারি স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তারপর মাত্র এক বছরে দক্ষিণ ২৪ পরগনার আখড়া মাদ্রাসা থেকে কোরআনের হাফেজ হন। ১৯৬৩’ ৬৫,৬৭ সালে কলকাতা মাদ্রাসা থেকে আলিম ফাজিল ও মমতাজুল মোহাদ্দেসীন পরীক্ষায় ১৭ লেটার মার্ক পেয়ে যার মধ্যে তিনটি বিষয়ে শতকরা ৯৫% নাম্বার পেয়ে প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কলকাতা মাদ্রাসার ইতিহাস অন্যান্য নজীর সৃষ্টি করেন
১৯৬৯-৭০ সালে আদিবে কামিল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান হয়ে রেকর্ড করেন। ১৯৭২ থেকে হাজার ১৯৯৫ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ জমিয়তে আহলে হাদিসের সম্পাদক ছিলেন তারপর থেকে সভাপতি পদ অলংকৃত করেন।
১৯৭৫ এর ৭ ই নভেম্বর থেকে ২০০৯ এর ২৮ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কলকাতা মাদ্রাসা আলিয়ার অধ্যাপনা করেন তারপরে ওখানে গেস্ট লেকচারার হিসেবে কাজ করেন।
১৯৮০ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় জমিয়তে আহলে হাদিসের পূর্বাঞ্চলের সম্পাদক ছিলেন। ১৯৯০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত তিনবার ওই জমিয়তের সহ-সভাপতি পদ অলংকৃত করেন। ১৯৮০ থেকে বেনারসের জামিয়া সালাফিয়া এবং ১৯৮২থেকে মহারাষ্ট্রের জামিয়া মুহাম্মাদিয়া ও মুম্বাইয়ের ইদারা ইসলাহুল মসজিদ ও দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সদস্য সম্পাদক ও সহ-সভাপতির পদ অলংকৃত করেন।
১৯৯৫ সালে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শতকরা ৮৬% নাম্বার পেয়ে আরবি সাহিত্যে এমএ পাস করেন। হাজার ১৯৯১ সালে তিনি মক্কার বিশ্ব মুসলিম সংস্থার দাওয়াতে হজ এবং বিভিন্ন সময়ে ওমরা জিয়ারত এবং ২০০৬ সালে হজ মোবারক সম্পন্ন করেন।
১৯৮৫ থেকে হাজার ১৯৯৬ পর্যন্ত তিনি সৌদি আরবের আইডিবি জেদ্দার সাহায্য গ্রহণকারী ভারতের পূর্বাঞ্চল কমিটির সদস্য ছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি ওই কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য পদে উন্নীত হন। তারপর ২০০১ সালে তিনি ওই কমিটির কনভেনার হন।
২০০০ সালের আগস্টে তিনি ইংল্যান্ডের লন্ডন ও বার্মিংহাম শহরে আন্তর্জাতিক ইসলামী সম্মেলনে যোগদান করেন। এবং ম্যানচেস্টার অক্সফোর্ড প্রভৃতি বিভিন্ন ঐতিহাসিক এলাকা পরিদর্শন করেন। ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি ৫৫ এর বেশি গবেষণামূলক বই লিখে ভারত ও বহিঃভারতে খ্যাতি অর্জন করেন ।
এ পর্যন্ত তার রচিত সূরা ফাতিহা সুরা ইয়াসিন সুরা রহমান সহ বিভিন্ন সুরার তাফসীর, নামাজ ও রোজা হজ ও কুরবানি, কোরআন ও হাদিসের ইতিহাস, এবং জীবনী সংক্রান্ত বই প্রকাশিত হয়েছে। দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে বাংলা ভাষায় তার অনূদিত গোটা কোরআনের অনুবাদ এর তিনটি সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে।