হজ্জ গাইড : হজ্জযাত্রীদের অনন্য সফরসঙ্গী
জহির-উল-ইসলাম
একজন শারীরিকভাবে সুস্থ আর্থিক দিক থেকে সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য জীবনে অন্ততঃ একবার পবিত্র হজ্জব্রত সম্পাদন করা ফরজ বা বাধ্যতামূলক। পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ্তায়ালা সূরা আল্ ই-ইমরান-এ সুস্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন, ‘নিশ্চয়ই মানবজাতির জন্য সর্বপ্রথম যে গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তা তো বাক্কাস (মক্কায়), উহা আশিস-প্রাপ্ত এবং বিশ্বজগতের দিশারী। ওতে বহু সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে, (যেমন) ইব্রাহিমের দাঁড়াবার স্থান এবং যে কেউ সেখানে প্রবেশ করে সে নিরাপদ। মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহর উদ্দেশ্যে ওই গৃহের হজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য। এবং যে অস্বীকার করবে সে জেনে রাখুক আল্লাহ্ জগতের উপর নির্ভরশীল নন।’ (৩ : ৯৫-৯৭) অন্যদিকে সূরা হজ্জ-এ আল্লাহ্তায়ালা বলেছেন, ‘এবং মানুষের কাছে তাদের হজ্জ ঘোষণা করে দাও; ওরা তোমার কাছে পদব্রজে ও সর্বপ্রকার দ্রুতগামী উটের পিঠে আসবে, আসবে দূর-দূরান্ত পথ অতিক্রম করে। যাতে ওরা ওদের কল্যাণ লাভ করে এবং নির্দিষ্ট দিনগুলোতে আল্লাহর নাম স্মরণ করে। ওদের তিনি পশু থেকে তার যবাইকালে (কুরবানী) যে জীবনোপকরণ (মাংস ইত্যাদি) দিয়েছেন তা থেকে তোমরা আহার কর এবং দুঃস্থ অভাবগ্রস্তকে আহার করাও। তারপর তারা যেন তাদের দৈহিক অপরিচ্ছন্নতা দূর করে এবং তাদের মানত পূর্ণ করে এবং প্রাচীন গৃহ (কাবা) তাওয়াফ (প্রদক্ষিণ) করে।’ (২২ : ২৭-২৯)
অন্যদিকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মুখনিঃসৃত বাণী থেকেও উপলব্ধি করা যায় পবিত্র হজ্জের অপরিসীম গুরুত্ব ও তাৎপর্যের কথা। কঠোর ভাষায় তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহর ঘরে পৌঁছবার জন্য যার পাথেয় ও বাহন আছে অথচ সে হজ্জ করে না সে ইহুদি বা খ্রিষ্টান হয়ে প্রাণত্যাগ করল কিনা তাতে কিছু এসে যায় না।’ (তিরমিজি) এক ব্যক্তি তাঁর পবিত্র দরবারে উপস্থিত হয়ে জানতে চাইলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সা.), কিসে হজ্জ ফরজ হয়?’ জবাবে তিনি জানালেন, ‘পাথেয় ও যানবাহনের সুবিধা।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজা। বর্ণনায়ঃ ইবনে উমার রা.)
মানুষের আর্থিক সামর্থ্য বা শারীরিক শক্তি সবসময় একরকম থাকে না। যেকোন সময় আল্লাহর এই মহানিয়ামত হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। এমনকি যেকোন মুহূর্তে পার্থিব এই ক্ষণস্থায়ী জীবনের অবসানও ঘটে যেতে পারে। তাই মহানবী (সা.) দ্রুত হজ্জ সম্পাদনের ব্যাপারে কঠোর তাগিদ দিয়েছেন। বলেছেন, ‘দ্রুত হজ্জ পালন কর, কারণ কেউ জানে না যে কখন সে প্রাণত্যাগ করবে।’ (সগির) ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশগুলোতে তরুণ-তরুণীরা বিবাহের পূর্বে অর্থাৎ জীবন সংগ্রামের শুরুতেই শারীরিক ও মানসিকভাবে চূড়ান্ত সক্ষম থাকা অবস্থায় হজ্জব্রত সম্পন্ন করে থাকেন। আমাদের দেশের মানুষেরা ঠিক এর উল্টোটাই করেন। এদেশ থেকে যাঁরা হজ্জে যান তাঁরা অধিকাংশই নবী (সা.)-র উপরোক্ত নির্দেশনার আলোকে আমল করেন না। বরং জীবনের সব কাজ শেষ করে জীবনসায়াহ্নে শারীরিক ও মানসিকভাবে পঙ্গু হয়ে পড়লে সেই অবসরে অবসাদগ্রস্ত শরীর নিয়ে হজ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। এই বয়সে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। যেকারণে হজ্জের আনুসঙ্গিক প্রয়োজনীয় দোয়াসমূহ তাঁরা যথাযথভাবে আয়ত্ত করতে পারেন না। অন্যদিকে হজ্জ পালনের সঠিক নিয়মকানুনও অনেকের ক্ষেত্রে অজানা থেকে যায়। ফলে প্রভূত অর্থ খরচ ও কষ্টদায়ক দীর্ঘ সফর করে হজ্জ সম্পাদন করলেও অনেক সময় তা ত্রুটিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
এমন একটা ভাবনাকে সামনে রেখে আল্লাহ্ভীরু হজ্জ গমনেচ্ছু বাংলাভাষী মানুষজন যেন খুব সহজেই হজ্জের যথাযথ নিয়মকানুন ও অত্যাবশ্যক দোয়াসমূহ আয়ত্ত করে বিধিসম্মতভাবে পবিত্র হজ্জব্রত সম্পাদন করতে পারেন সেই লক্ষ্যে বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ জনাব মহিউদ্দিন সরকার ‘হজ্জ গাইড’ শীর্ষক পুস্তিকাটি প্রণয়ন ও প্রকাশ করেছেন। রুচিশীল প্রকাশন সংস্থা ‘উদার আকাশ’ থেকে প্রকাশিত মাত্র ১৬ পৃষ্ঠার এই পুস্তিকাটিতে হজ্জ বিষয়ক অবশ্য পালনীয় বিষয়াদিসহ যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ দোয়াসমূহ লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। উল্লেখ্য মহিউদ্দিন সরকার নিজেই ২০০০ সালে পবিত্র হজ্জব্রত সম্পাদন করেছেন। যে-কারণে এ-সংক্রান্ত বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। হজ্জ সম্পাদন শেষে হজ্জের অভিজ্ঞতা নিয়ে দুই দশক আগে তিনি ‘মক্কা-মদীনার পথে-প্রান্তরে’ বইটি লিখে প্রকাশ করেছিলেন, যা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আগ্রহী পাঠকমহলে যথেষ্ট সাড়া ফেলেছিল।
আলোচ্য গ্রন্থে লেখক মহিউদ্দিন সরকার হজ্জ কয় প্রকার ও কী কী, হজ্জ ও ওমরার কয়েকটি জরুরি আমল, ইহরামের কয়টি অংশ এবং ইহরাম বাঁধার পদ্ধতি, তালবিয়া কী, এর অর্থই-বা কী, তাওয়াফ করার নিয়ম, তাওয়াফের দোয়াসমূহ, তাওয়াফ শেষে কয়েকটি দোয়া, সায়ী করার নিয়মকানুন, জিলহজ মাসের ৯-১৩ তারিখে কোন্ দিন কোন্ কাজ কিভাবে করতে হয় তার বিবরণ, কঙ্কর নিক্ষেপ করার নিয়ম ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়াবলী নিয়ে সহজ-সরল ভাষায় খুব সংক্ষিপ্ত সহজবোধ্য আলোচনা করেছেন। এছাড়াও পুস্তিকাটির শুরুতেই হজ্জযাত্রীদের জানার কিছু জরুরি বিষয় নিয়ে আলোচনা, মহিলা হজ্জযাত্রীদের জ্ঞাতব্য বিষয়সমূহ, বদলি হজ্জ কী তৎসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা, সফরকালে যেসব জায়গায় হাজিদের অবস্থান করা জরুরি তার নামোল্লেখসহ যাত্রাকালে কী কী সামগ্রী সঙ্গে নিতে হবে তার একটা তালিকাও তুলে ধরেছেন।
১০ম হিজরির ৯ জিলহজ আরাফাত ময়দানে প্রদত্ত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক অভিভাষণ সংযোজন গ্রন্থটির মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে। মুদ্রণজণিত সামান্য কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলেও হেরেম শরীফের সুদৃশ্য ছবি সংবলিত মখমল প্রচ্ছদ, উন্নত কাগজে ঝকঝকে মুদ্রণ পাঠকদের যথেষ্ট পরিতৃপ্তি দেবে। হজ্জযাত্রীদের সফরসঙ্গী এই ‘হজ্জ গাইড’ বইটির কোন বিনিময়মূল্য রাখা হয়নি। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় আল্লাহর পথে আত্মসমর্পণকারী পূণ্যলোভাতুর মানুষদের বিনামূল্যে বিতরণের জন্য লেখক মহিউদ্দিন সরকার নিজের পয়সায় প্রকাশ করেছেন। তাঁর এই মহৎ কাজকে আল্লাহতায়ালা কবুল করে পরকালে নাজাতের উসিলা বানিয়ে দিন এই প্রার্থনা করি।
হজ্জ গাইড
সংকলন এবং গ্রন্থনা : মহিউদ্দিন সরকার
উদার আকাশ
ঘটকপুকুর, ভাঙড়, দক্ষিণ ২৪ পরগনা-৭৪৩৫০২।