অয়ন বাংলা,নিউজ ডেস্ক:- এ যে উদোর পিন্ডি এ যে নুজের ঘাড়ে । এনআরসি তালিকা থেকে বাদপড়া ১৯ লক্ষের মধ্যে ১১ লক্ষ হিন্দু রয়েছেন তাই এই তালিকাটি ত্রুটিপূর্ণ। এ ব্যাপারে আসামের বিভিন্ন নেতারা মুখ খুললেও অদ্ভুতভাবে নীরব বরাক উপত্যকার বিজেপি বিধায়ক ও সাংসদরা। তাঁরা নির্বাচনের সময় হিন্দুদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ভোট পেয়েছিলেন, তাই আমরা দাবি করছি হিন্দুদের সুরক্ষার দাবিতে আপনারা পদত্যাগ করুন, এমনটাই দাবি সারা আসাম হিন্দু বাঙালি অ্যাসোসিয়েশন, গৈরিক ভারত-সহ বিভিন্ন হিন্দু সংগঠনের।
৩১ আগস্ট এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর থেকেই বিভিন্ন উপত্যকার বিভিন্ন হিন্দু সংগঠন এনআরসির কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। সোমবার বিকেলে শিলচরে পার্ক রোডের ক্ষুদিরাম মূর্তির সামনে তাঁরা ঘন্টাখানেক ধর্নায় বসেন! এই কর্মসূচিতে যোগ দেন উপত্যকার বেশ কিছু বিশিষ্ট নাগরিকরাও। প্রায় কয়েকশো মানুষ একসঙ্গে আওয়াজ তোলেন, এনআরসি নিয়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
সারা আসাম বাঙালি হিন্দু এসোসিয়েশনের সভাপতি বাসুদেব শর্মা বলেন, ১৯ লক্ষের মধ্যে মাত্র ছয় লক্ষ মুসলমান এবং এর দ্বিগুণ হিন্দু রয়েছেন। ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচন এবং ২০১৬ আসাম বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির একমাত্র প্রতিশ্রুতি ছিল হিন্দুদের সুরক্ষা দেওয়া। আমরা বারবার তাদের কথায় কান দিয়েছি এবং আজ মনে হচ্ছে আমরা এক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি।
গতবছর এনআরসির খসড়া প্রকাশের পর থেকেই আমরা বুঝতে পেরেছিলাম হিন্দুদের বাদ দেওয়ার এক বিশাল ষড়যন্ত্র চলছে। অথচ এনআরসি তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে ঢুকে পরা মুসলমানদের চিহ্নিত করা। শনিবার সকালে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা, বিজেপির সভাপতি রঞ্জিত দাস, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ-সহ বিভিন্ন নেতারা এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। অথচ বরাক উপত্যকার দুই নবনির্বাচিত সাংসদ এবং অন্যান্য বিজেপি বিধায়করা এখনও পর্যন্ত এব্যাপারে একটি কথাও বলেননি। তাঁরা নির্বাচনের প্রচারে মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে হিন্দুত্বের দোহাই দিয়ে ভোট চেয়েছিলেন। এবার যখন হিন্দুদের পাশে দাঁড়ানোর সময় এসেছে তাঁরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তাই আমরা তাঁদের পদত্যাগ দাবি করছি।
অসম চুক্তি এবং অতীতে অসমে বাঙালিদের উপর হওয়া বিভিন্ন নির্যাতনের কথা টেনে তিনি বলেন, দেশভাগের পর সিলেট আসামে থাকবে কিনা এব্যাপারে একটি ভোটাভুটি হয়েছিল। তখন এই অঞ্চলের চা জনগোষ্ঠীর মানুষকে ভোটে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। আজ তাঁরা ‘অরিজিনাল ইনহেরিটেন্স’ হিসেবে এনআরসিতে জায়গা পেয়েছেন। অথচ যে বাঙালিরা সেই ভোটেও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সর্বস্ব হারিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তাঁরা আজও বিদেশি।
১৯৮৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী সারা আসাম ছাত্র সংগঠন (আশু) নামের একটি সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে অসমের জন্য নতুন আইন বানালেন, তখনও বাঙালিদের প্রতিনিধিত্ব অস্বীকার করা হয়। এবার মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনওয়ালের নেতৃত্বে আসাম চুক্তির ৬-নম্বর ধারা চালু করার জন্য নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং এই কমিটিতে বাঙালির প্রতিনিধিত্ব নেই। আমরা আসাম চুক্তি মানি না, কারণ এতে শুধু অসমিয়া জনগোষ্ঠীর স্বার্থের কথা রয়েছে। আমরা এই দেশের বাসিন্দা এবং আমাদের বাদ দিয়ে কোনও আইন প্রণয়ন করা যাবে না। আমাদের এই কথাগুলো যাঁরা গিয়ে গুয়াহাটিতে বা দিল্লিতে বলবেন বলে দায়িত্ব নিয়েছেন, সেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা আজ নীরব। এই দুঃসময়ে তাঁরা যদি বাঙালির পাশে না থাকেন তাহলে ভবিষ্যতে তাদের ছুঁড়ে ফেলে দিতে আমাদের অসুবিধা হবে না।
বরিষ্ঠ সাংবাদিক এবং কবি অতীন দাস বলেন, আমরা এবছরের প্রথম দিকে লোকসভা নির্বাচনে একটি অদ্ভুত প্রচার শুনেছিলাম। বিজেপি দলের পক্ষে বলা হচ্ছিল, নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতা এতটাই বেশি যে একটি কলাগাছকেও যদি বিজেপির প্রার্থী করা হয়, তবুও তাঁকে হারানো সম্ভব হবে না। এবার এনআরসির তালিকা প্রকাশের পর আমাদের ভোটে জয়ী হওয়া প্রতিনিধিদের দেখে মনে হচ্ছে, ভবিষ্যতে আর যাই হোক কোনও কলাগাছকে ভোট দেবো না।
দেশভাগের পর জওহরলাল নেহেরু, সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল, মহাত্মা গান্ধীর মতো নেতারা নিজের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে দেশভাগের সম্মতি দিয়ে আমাদের এই দুর্দশায় ফেলেন। তাঁরা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে আটকাতে চেয়েছিলেন এবং একই সঙ্গে বাঙালির কোমর ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল। তাঁদের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে এবং আজও তাঁদের পরবর্তী প্রজন্ম একই কাজ করছেন। যে বাঙালিরা দেশভাগের দুর্দশা নিজের চোখে দেখেছেন তাঁদের তিন প্রজন্ম পড়েও আমাদের প্রতিনিয়ত প্রমাণ করতে হচ্ছে আমরা ভারতীয়। তবে দুর্ভাগ্য হচ্ছে আমাদের প্রতিনিধিরা এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো সাহস রাখেন না।
গৈরিক ভারতের শান্তনু নন্দন ভট্টাচার্যের দাবি, ধর্মের ভিত্তিতে যখন দেশ ভাগ হয়েছিল তাহলে ভারতবর্ষে হিন্দুদের নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিতে হবে। সংগঠনের আরেক সদস্য মণিভূষণ চৌধুরী বলেন, এবার থেকে আমরা নিজেদের সচেতন করে তুলব। আর গান্ধী বা নেহেরুর নামে কোনও দিন উদযাপন হবে না। আমি সন্তদাস কাঠিয়া বাবার বংশধর, একজন হিন্দু, তবু আমার নাম খসড়ায় ছিল না। আর হিন্দুত্বের নামে ভোট চেয়ে কেউ আমাদের ঠকাতে পারবেন না, এবার থেকে তীব্র আন্দোলন হবে।