নিউজ ডেস্ক:-মানবিক মুখ মাননীয়া মমতা ব্যার্নাজী এবার রাজ্যে সবার জন্য রেশনের ব্যবস্থা করলেন। লকডাউনের মধ্যে মানুষকে একটু স্বস্তি দিতে গরিব-সচ্ছল নির্বিশেষে রাজ্যের সমস্ত শ্রেণির রেশন গ্রাহকদের হাতে বিনামূল্যে মাসে ৫ কেজি করে চাল তুলে দেবে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার। সোমবার খাদ্য ভবনে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা, প্রায়োরিটি হাউস হোল্ড (পিএইচএইচ), স্পেশাল প্রায়োরিটি হাউস হোল্ড (এসপিএইচএইচ), রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-১ (আরকেএসওয়াই) ছাড়াও রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-২ রেশন গ্রাহকরা পরের মাস থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে মাসে ৫ কেজি করে চাল পাবেন। এর ফলে অতিরিক্ত আরও ১ কোটি ৪৪ লক্ষ ৭২ হাজার মানুষ বিনামূল্যের রেশন পাবেন। রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন কিন্তু এখনও হাতে পাননি এমন আরও প্রায় ৭২ হাজার মানুষ কুপন দেখিয়ে বিনামূল্যে রেশন দোকান থেকে চাল সংগ্রহ করতে পারবেন। সব মিলিয়ে রাজ্যের প্রায় ৯ কোটি ৬৫ লক্ষ মানুষ আগামী ছ’মাস রাজ্য সরকারের দেওয়া রেশন পাবেন। অর্থাৎ, রাজ্যের সব রেশন গ্রাহকই এই সরকারি পরিষেবার আওতায় আসতে চলেছেন। জ্যোতিপ্রিয়র দাবি, বাংলা একমাত্র রাজ্য যেখানে কোনও বাছবিচার না-করে সমস্ত রেশন গ্রাহকের হাতে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এটা একটা ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।
দেশের কোনও মানুষ যাতে অভুক্ত না থাকে, তার জন্য চালু হয়েছে জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন। সেই মতো দরিদ্র মানুষদের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। কেন্দ্রীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনার অধীনে দরিদ্র রেশন গ্রাহকদের তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। তার প্রথমটি হল এএওয়াই। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা অতি দরিদ্র শ্রেণির মানুষরা এর আওতায় রয়েছেন। দ্বিতীয় শ্রেণি হল এসপিএইচএইচ। এঁরা এএওয়াই-র থেকে আর্থিক ভাবে কিছুটা উন্নত। এ ছাড়াও রয়েছে পিএইচএইচ। এসপিএইচএইচ-র থেকে এঁদের অবস্থা তুলনায় ভাল। এই রেশন গ্রাহকদের কম পয়সায় খাদ্য জোগানোর জন্য যে বিপুল অর্থ খরচ হয় তার সিংহভাগই দিয়ে থাকে কেন্দ্রীয় সরকার। এর পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের জন্য আলাদা খাদ্য প্রকল্প চালু করেছেন। যার নাম রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা। এতে দু’ধরনের রেশন কার্ড ইস্যু করা হয়। একটা হল আরকেএসওয়াই-১ এবং আরকেএসওয়াই-২।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ রাজ্যে এএওয়াই কার্ডের সংখ্যা ৫৪,৭০৮৬২ জন। পিএইচএইচ এবং এসপিএইচএইচ মিলিয়ে মোট ৫,৪৭,১৭৩৪২ কার্ড রয়েছে। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনার আওতাধীন মোট গ্রাহকের সংখ্যা ৬,০১,৮৮২০৪ জন।
লকডাউন ঘোষণার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে বিনামূল্যে মাসে মাথাপিছু ৫ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন তাতে একমাত্র আরকেএসওয়াই-২ কে এর আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল। যার সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি ছুঁইছুঁই। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা মেনে এএওয়াই, পিএইচইচ, এসপিএইচএইচ এবং আরকেএসওয়াই-১ শ্রেণীর রেশন গ্রাহকরা চলতি মাসে মাথাপিছু ৫ কেজি করে বিনামূল্যে রেশনের চাল পেলেও আরকেএসওয়াই-২ গ্রাহকরা লকডাউনের জন্য কোনও বাড়তি সুবিধা পাচ্ছিলেন না। এঁদের অধিকাংশই আবার মধ্যবিত্ত। দেরিতে হলেও তাঁদেরকেও বিনামূল্যে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রাজ্যের মতো কেন্দ্রীয় সরকারও প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনায় জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা যোজনার অন্তর্গত রেশন গ্রাহকদের মাথাপিছু ৫ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন নরেন্দ্র মোদী। তার সঙ্গে পরিবার পিছু এক কেজি ডাল দেওয়ার কথা। রাজ্য সরকারের দেওয়া চাল ইতিমধ্যেই রেশন দোকান থেকে তুলে নিয়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা। কিন্তু এপ্রিল মাস শেষ হতে চললেও কেন্দ্রের দেওয়া চাল এখনও হাতে পাননি রাজ্যবাসী।
খাদ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ দিন পর্যন্ত মোট ১ লক্ষ ৪০ হাজার মেট্রিক টন চাল পাঠিয়েছে কেন্দ্র। সেখানে দরকার মোট তিন লক্ষ মেট্রিক টন। সোমবার রাতে হাওড়া ও হুগলিতে ডাল নেমেছে যথাক্রমে ৮৪ ও ৪০ মেট্রিক টন। তার এখনও নমুনা পরীক্ষা হয়নি। এ অবস্থায় এপ্রিল মাসে কেন্দ্রের চাল বিলি সম্ভব হচ্ছে না। মে মাস থেকে কেন্দ্রের চাল বিলির কাজ শুরু হবে।
রেশন ডিলারদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া ফেয়ার প্রাইস শপ ডিলার্স ফেডারেশনের সম্পাদক বিশ্বম্ভর বসু বলেন, ‘করোনার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার যে রেশন দিচ্ছে তার সুবিধা আরকেএসওয়াই-১ কার্ড হোল্ডাররা পাবেন না।
আগামী পাচঁ মাস ধনী দরিদ্র সকলেই রেশন দোকান থেকে মাল পাবেন একদম বিনামুল্যে ।
সৌজন্য:- এই সময় পত্রিকা