সফিকুল ও সুরাজকে ভুয়ো সংবাদিক তকমা লাগানোর চেষ্টা প্রশাসনের
নিজস্ব সংবাদপত্র:- আরামবাগ টিভির সম্পাদক সফিকুল ইসলাম, তাঁর স্ত্রী আলিমা খাতুন এবং তার আর এক সাংবাদিক সুরাজ আলি খানকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করার পর সমাজে, তা প্রতিষ্ঠা দিতে ময়দানে নেমেছে পুলিশ। সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন আইনজীবীরা। শনিবার হুগলি গ্রামীন জেলার পুলিশ সুপারের সাংবাদিক সম্মেলন থেকে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রথম কথা উনি এদের ভুয়ো সাংবাদিক ও প্রতারক বলতে চেয়েছেন। যে নির্দিষ্ট কেশের ভিত্তিতে এই তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেই অভিযোগকারী রাজকুমার প্রমানিককে একজন অসহায় বললেন পুলিশ। অথচ, তিনি নাকি ঠিকাদারের কাজ করেন। রাজকুমারের অভিযোগ, তিনি নাকি সফিকুল ইসলামের বাড়ি গিয়ে ১৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। অর্থাৎ ভয় দেখিয়ে তোলাবাজি করছেন সফিকুল ইসলাম। তাই, তিনি একজন প্রতারক ভুয়ো সাংবাদিক। এমনটাই বললেন পুলিশ সুপার তথাগত বসু। যদিও, সেই সাংবাদিক সম্মেলনেই , সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেন, রাজকুমার প্রমানিক যে সাংবাদিকদের টাকা দিয়েছেন, তার কোনও প্রমান দিতে পেরেছেন? সেই প্রশ্নের উত্তেরে এসপি জানান, এটা তদন্ত স্বাপেক্ষ।
এবার আসি, পুলিশ সুপার বললেন লকডাউন চলাকালীন, মার্চ মাসের ১৬ তারিখে নাকি রাজকুমার তাঁদের ১৫ হাজার টাকা দিয়েছেন। আমাদের যতদূর মনে হয়, লকডাউন শুরু হয়েছে ২৫ মার্চ থেকে। এই বিষয়টিও একজন পুলিশ সুপারের অজানা রয়ে গেল কিভাবে? তাছাড়া সফিুকল, সুরাজ ও আলিমা লকডাউন শুরু হওয়ার ১৫ দিন আগে থেকেই করোনা ভাইরাসের জেরে গৃহবন্ধি হয়েছিলেন। যেখানে করোনার জন্য তার পরিবারের সদস্যরা যাননি, সেখানে রাজকুমার বাড়িতে গিয়ে টাকা দিয়ে এসেছে, এর বাস্তব ভিত্তি কতটা রয়েছে, তা সময় হলেই বোঝা যাবে। মনে রাখতে হবে অভিযোগকারী এই রাজকুমান একজন আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সদস্য। সক্রিয় তৃণমূল কর্মী। তাঁকে ঠিকাদার বা ফার্নিচারের দোকানদার প্রমান করার চেষ্টা হলেও, আদত তিনি কিন্তু তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য।
এবার আসি, ভুয়ো সাংবাদিকের বিষয়ে। পুলিশ সুপার বলতে চাইলেন, এই তিন জন স্বীকৃত সাংবাদিক নন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, কোনও সাংবাদিক এক্রিডিয়েশন কার্ড পেতে হলে কম করে তিন বছরের সাংবাদিকের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। তাহলে, সেই কার্ড না পাওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকরা ভুয়ো। তাছাড়া বাংলায় হাজার হাজার সাংবাদিক রয়েছেন। তার মধ্যে কয়েক’শ সাংবাদিককে অ্যাক্রিডিয়েশন কার্ড দিয়েছে সরকার। একটি অফিসে যদি, ১০০ জন কর্মী থাকে, তাহলে দশ জনকে সরকার অ্যাক্রিয়েডিশন কার্ড দেয় সরকার। তাহলে হুগলি পুলিশ সুপারের কথায়, বাকিরা সকলেই ভুয়ো সাংবাদিক।
এবার আসি, আরামবাগ টিভির সম্পাদকের অন্যান্য সাপ্তাহিক প্রত্রিকা রয়েছে। সেই প্রত্রিকাগুলির আরএনআই রেজিস্ট্রেশন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার কথায়, আরএনআই রেজিস্ট্রেশন না থাকায়, এই সব সংবাদপ্রত্রের নাকি বৈধ নয়। আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এই বিষয়ে পরিস্কার জানিয়েছেন, আরএনআই আইন সম্পর্কে কোনও ধারনা নেই পুলিশ সুপারের। আরএনআই রেজিস্ট্রেশন সম্পর্কে পুলিশ সুপার কোনও পদক্ষেপ নিতে পারে না।
শেষে সিভিল বিষয় নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেছেন, আরামবাগে সফিকুলের বাড়িটি নাকি পুরসভার অনুমোদন নেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে পুরসভার মধ্যে, আবার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বর্তমান পুর-প্রশাসকের ওয়ার্ডে একটি বেআইনি নির্মান হচ্ছে, সেটা পুরসভা জানতে পারেনি। যদি, অনুমোদন ছাড়া নির্মান হয়, তাহলে পুরসভা কোনও ব্যবস্থ নিল না কেন?
যে বিষয়গুলি তুলে ধরে পুলিশ সুপার প্রেস কনফারেন্স করলেন, তার বাস্তব কোনও ভিত্তি নেই বলেই জানিয়েছেন আইনজীবীরা। আসলে চাপে পড়ে আরামবাগ পুলিশকে বাঁচাতে প্রেস কনফারেন্স করলেন পুলিশ সুপার। সেটা করতে গিয়ে সাংবাদিক সফিকুল ও সুরাজকে ভুয়ো তকমা দিতে উঠে পড়ে লেগেছে পুলিশ।