নিজস্ব প্রতিবেদন: প্যারাশুট কটাক্ষের জবাব দিলেন প্যারাশুট প্রসঙ্গ এনেই। সদ্য মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করা শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। এরই মধ্যে রবিবার ডায়মন্ড হারবারে জনসভা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এই সভার আগে থেকেই জল্পনা ছড়িয়েছিল, তবে কি শুভেন্দুকে ‘জবাব’ দেবেন অভিষেক? হ্যাঁ, বাস্তবে তাই করলেন। এদিনের সভা থেকে তৃণমূল সাংসদ বললেন, ‘নেতা হোক বা কর্মী, তৃণমূল কংগ্রেসে কেউ প্যারাশুটে নামেনি। লিফটে ওঠেনি। প্যারাশুটে নামলে ৩৫টা পদের অধিকারী হতাম। দক্ষিণ কলকাতায় লড়তাম, যেখানে আমি থাকি। কিন্তু তা হইনি, ২০১৪ সালে প্রার্থী হয়েছি ডায়মন্ড হারবার থেকে।’
অভিষেকের কথায়, ‘আপনারা কেউকেউ প্যারাশুটে নেমেছেন। তৃণমূল দলটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এটা সকলের কাছে মায়ের মতো। তৃণমূল কংগ্রেস সকলের মা। মায়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে ছেড়ে কথা বলবেন? নিজের উচ্চাকাঙ্খার জন্যে অন্য দলের হয়ে তাবেদারি করলে ছেড়ে কথা বলবেন? মায়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করা যায় না। বিশ্বাসঘাতকতা করলে কড়ায়-গণ্ডায় জবাব দেওয়া হবে। যতই নাড়ো কলকাঠি, নবান্নে আবার হাওয়াই চটি।’
ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ ছিলেন প্রয়াত সৌমেন মিত্র। তাঁর জমানায় কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ করেন অভিষেক। তাঁর কথায়,”প্রার্থী হওয়ার পর মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়েছি। কেউ বলছে জল নেই, বিদ্যুৎ নেই। তবুও ময়দান ছেড়ে যাইনি। আপনাদের ভালবাসায় ৭১ হাজার ভোটে জিতেছিলাম। সবচেয়ে কম ভোটের মার্জিন এই জেলায়। জেতার পর বুথে বুথে পৌঁছনোর চেষ্টা করেছি। সেই ডায়মন্ডবারবার গতবার ৭ লক্ষ ৯১ হাজার ভোট পেয়েছি। ৩ লক্ষ ২২ হাজার ভোটে জিতেছি।”
মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রীর নাম উল্লেখ না করেই বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ করলেন অভিষেক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যে দলের নেত্রী তা স্পষ্ট করে দিয়ে অভিষেকের বার্তা,”আপনারা যাঁরা এসেছেন ক’জন প্যারাশুটে নেমেছেন। কজন লিফটে উঠেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের নাম তৃণমূল কংগ্রেস। এটা মাথায় রাখতে হবে। দল সকলের কাছে মায়ের মতো। তৃণমূল কংগ্রেস সকলের মা। মায়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলে ছেড়ে কথা বলবেন? নিজে উচ্চাকাঙক্ষী হয়ে অন্য দলের হয়ে তাবেদারি তল্পিবাহক হলে ছেড়ে কথা বলবেন? মায়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা সহ্য করা যায় না। একটা বাংলা ছবির সংলাপ আছে, বউ হারালে বউ পাওয়া যায়, মা হারালে পাওয়া যায় না। বিশ্বাসঘাতকতা করলে কড়ায়-গণ্ডায় জবাব দেওয়া হবে। যতই নাড়ো কলকাটি নবান্নে আবার হাওয়াই চটি। পদ নয় পতাকা, নেত্রীর নাম মমতা।”
এদিন শুভেন্দুকে জবাব দিতে সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই হাতিয়ার করেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাতারাতি একদিনে তৈরি হয়ে যায়নি। তাই একে ওকে দিয়ে মন্তব্য করিয়ে লাভ হবে না। ৩৪ বছর অন্ধকার হয়ে থাকা পশ্চিমবঙ্গের সূর্য বলেন মমতা। মমতার সঙ্গে লড়াই করতে আসলে ঝলসে যাবেন। তৃণমূল কংগ্রেসে কেউ প্যারাশুটে নামেননি। লিফটেও ওঠেননি। কেউ কেউ অবশ্য অনেক কিছু বলে। গণতান্ত্রিক দেশে বলতেই পারেন।’
এদিনের সভা থেকেই ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে অভিষেক জনসংযোগের পাশাপাশি ভোট প্রস্তুতি শুরু করলেন বলে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত। ভোটকে সামনে রেখে এরপর ধাপে ধাপে রাজ্যের অন্যান্য জেলাতেও অভিষেকের সভার পরিকল্পনা রয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। যদিও আপাতত শুভেন্দুকে যে ছেড়ে কথা বলবেন না তিনি, তা স্পষ্ট।