ধর্মনিরপেক্ষ দল শক্তিশালী হলে সাম্প্রদায়িক বিজেপি এখানে মাথা তুলে দাঁড়াবে না: অধীর চৌধুরী
নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে পরাজিত করতে ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মহঃ কামরুজ্জামানের আহ্বানে বৃহস্পতিবার নিউটাউনের এক হোটেলে মুসলিম বুদ্ধিজীবি ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরীর রাউন্ড টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মহঃ কামরুজ্জামান জানান রাজ্যে সাম্প্রদায়িক বিজেপিকে রুখতে আমরা বিরোধী সমস্ত ছোট বড় ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের ময়দানে দেখতে চাই। সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে এই বৈঠক।
বৈঠকে বিভিন্ন বুদ্ধিজীবী থেকে মুসলিম নেতৃবৃন্দ বাম আমলের মতোই তৃণমূল সরকারের আমলেও রাজ্যে সংখ্যালঘুদের কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি একই রকম রয়ে গেছে বলে অভিযোগ তোলেন।
বৈঠকে আরো বলা হয় কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মতো রাজ্যের তৃণমূল সরকারও সংখ্যালঘু ও দলিতদের সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলা করেছে। আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে বিদ্বেষ ও বিভাজনের দেওয়াল তুলে ভয় দেখিয়ে ভোট নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের সাংবিধানিক অধিকার গুলো কার্যকর করার সদিচ্ছা এখনো দেখায়নি। সংখ্যালঘু নেতাদের এই ক্ষোভ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে বিগত বাম শাসকের শেষের দিকের মতো তৃণমূলের উপর থেকেও সংখ্যালঘু ভোট ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে। চারিদিক থেকে সংখ্যালঘুরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে যে ক্ষেপে উঠছে এই ঘটনায় তার প্রমান।
বেঠকে অধীর চৌধুরী বলেন বিজেপি রাজনৈতিক পরিস্থিতি হিংসা ও বিদ্বেষে ছেয়ে ফেলেছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজ্যের মমতা সরকারও হিন্দুত্বের প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গে কোনদিন বিজেপি জায়গা পেত না, মমতা ব্যানার্জি তাদের সাথে জোট করে মন্ত্রী হয়ে লাল কার্পেট বিছিয়ে বিজেপিকে জায়গা করে দিয়েছে। কেউ বিজেপি করলে তৃণমূল দলীয় ভাবে তাদের বিরোধিতা করেনা, বাম কংগ্রেস করলে তাদের বিভিন্ন ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চালু রেখেছে। বিজেপির সঙ্গে জোট করা, বিজেপির মন্ত্রী সভায় মন্ত্রীত্বকরা এই তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে যে কঠিন লড়াই দেবে না এটা আমরা পরিস্কার।
তিনি আরো বলেন মুসলিমরা গ্লোবালাইজ কমিউনিটি তাদের শেষ করা যায় না, যে রাজনৈতিক দল বিজেপির থেকে বাঁচতে নিজেদের দিকে ভোট নেওয়ার চেষ্টা করছে তাদের বলুন মুসলিমদের বাঁচানোর মালিক আল্লাহ, যদি মুসলিমদের উপর মায়া থাকে তাহলে সকলের সমান অধিকার দিন, তখন মুসলিমদের জন্য আলাদা ভাবতে হবে না। সকলের উন্নয়ন হলে মুসলিমদের ও হবে। ৭২-৭৭ সালে সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের সময় রাজ্যের মুসলিমদের চাকরির শতাংশ ছিল ৯, তারপর দীর্ঘ সময় গেছে সাচার কমিটি হয়েছে, ওবিসি এ তে ১০ শতাংশ সংরক্ষন হয়েছে, মুসলিমদের শিক্ষা আন্দোলনে রেনেসাঁ এসেছে তারপরও এখন চাকরির শতকরা ২ এর উপরে উঠেনি। তারমানে সমান অধিকার না দিয়ে পরিকল্পিত ভাবে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারের সদিচ্ছা থাকলে নিয়োগ সংস্থা থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধি, মন্ত্রী পরিষদ সর্বত্র মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব বাড়াক তাহলে চাকরিতে মুসলিমদের শতাংশ বাড়বে।
অধীর বাবু বলেন মুসলিমরা না চাইতেই উনি ঈদের জামাতে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন, মাথায় ঘোমটা দিয়েছেন, ইমাম ভাতা দিয়েছেন। যা বিজেপির বিভাজনের রাজনীতি করতে সুবিধা হয়েছে। এভাবে প্রকৃত সংখ্যালঘু উন্নয়ন না করে লোক দেখানো, ঢাক পেটানো দরদ দেখাতে গিয়ে রাজ্যে বিজেপির বিদ্বেষ রাজনীতির প্রশ্রয় দিয়েছেন। তৃণমূল কংগ্রেস যতই রাজ্যে বিজেপিকে জায়গা করে দিক রাজ্যের ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি যদি নির্ণয়ক শক্তি হয়ে দাঁড়াতে পারে তাহলে সাম্প্রদায়িক বিজেপি এখানে কখনোই মাথা তুলে দাঁড়াবে না।
এদিন তিনি আরও বলেন তৃণমূল কংগ্রেসের যে নেতারা আমাকে বলতো আমি বিজেপিতে চলে যাব তারাই আজ বিজেপি তে যাবে বলে লাইন লাগিয়ে বসে আছে। আমি যেখানে ছিলাম সেখানেই দাঁড়িয়ে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। তৃণমূল দল থেকেই নেতা গিয়ে গিয়ে এ রাজ্যে বিজেপি শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
এদিন গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্টজনদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুর্শিদাবাদের কান্দির বিধায়ক সফিউল আলম খান, মাইনেটি কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ইন্তাজ আলী শাহ, জমিয়তে আহলে হাদিসের আলমগীর সরদার, মুসলিম থিংক ট্যাংকের শাহ আলম, দিশার আব্দুল মোমেন, সমাজকর্মী নুরুদ্দিন, অধ্যাপক সাইদুর রহমান, আহলে সুন্নাত হানাফী মাযহাবের এ হোসেন, বেঙ্গল মাদ্রাসা এডুকেশন ফোরামের আশিকুল আলম, আইনজীবী মাসুদ করিম, মাদ্রাসা ছাত্র ইউনিয়নের রাকিব হক, সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন এর আনোয়ার হোসেন কাসেমী, সাজাহান, লস্কর, বাবর হোসেন, নাজমুল আরেফীন, নূর হোসেন, মাহমুদুল হাসান, ওয়েলফেয়ার পার্টির আবু তাহের সহ অন্যান্যরা।