পশুর কলিজা ( লিভার বা যকৃত) খাওয়া কি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল ? লিখেছেন ডাক্তার ইয়ার আলী

Spread the love

লিভার বা যকৃত খাওয়া কতটা যুক্তিসঙ্গত?

স্বাস্থ্য ডেস্ক:-    বর্তমানের স্ট্রেসফুল জীবন-যাপন, মানসিক নানা অস্থিরতা, অত্যাধুনিক টেকনোলজির বহুল ব্যবহার, অবিরত রেডিয়েসন, বাধ্যতামূলক ক্ষতিকর হেভি মেটালের নানাবিধ এক্সপোজারে — সত্যিকার অর্থে পরিপূর্ণ সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর!
বাচ্চা থেকে বৃদ্ধ, ছেলে থেকে মেয়ে প্রায় প্রত্যেকেই কোন না কোন একটি বা ততোধিক শারিরীক বা মানসিক সমস্যায় ভূগছে৷ ভূগান্তির মাত্রাটা লঘু থেকে ভারী যে কোন ধরণেরই হোক না কেন৷ কিশরীদের মাসিকের গন্ডগোল বা তলপেটে ব্যাথা থেকে সাদাস্রাব, মহিলাদের অনিয়মিত মাসিক থেকে অতিরিক্ত রক্তস্রাব, কোমর ব্যাথা,ঘাড়ে ব্যাথা, পায়ে কামড়ানি, গ্যাসের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধির সমস্যা, থাইরয়েডের সমস্যা, চোখের নিচে কালি, মুখে মেচেতা প্রভৃতি৷

যুবকদের গ্যাস থেকে কষ্ঠোকাঠিন্য, ক্রনিক আমাশা, দূর্বলতা, মাথা ব্যাথা, যৌন সমস্যা আরও কত কি!

মাঝ বয়সীদের সুগার,প্রেসার,থাইরয়েড,ওবেসিটি, ঘুমের সমস্যা,ব্যাথার সমস্যা,গ্যাসের সমস্যা আরও কত কি!

প্রায় প্রত্যেকটা মানুষই কী পুরুষ কী মহিলা—সকলেই কমবেশ বিভিন্ন ক্রনিক অসুখে আক্রান্ত৷ বিভিন্ন ডাক্তারের বিভিন্ন চিকিৎসাতে সাময়িক স্বস্তির পরশ পেলেও মানুষটি রোগমুক্ত হয়েছে—এমন সংখ্যা নেহাতই কম! ডাক্তারের পর ডাক্তার পরিবর্তন করছে —মানুষ তার রোগমুক্তির অস্থির প্রত্যাশায়৷ সারাজীবন ঔষধিসেবনে অনেকেই স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছে এবং নিঃসন্দেহে এটি প্রশংসনীয়৷ তবে, অধিকাংশ ক্রনিক রোগের ইটিওলোজি আঁধারে ঘুরপাক খাচ্ছে! অনেকেই জানছে, সেটা তার জিনগত সমস্যা বা অটোইমিউনিটির সমস্যা৷ ফলে, মানুষ নিজের অসুখের দায়ভার নিজের দেহকেই সাব্যস্ত করে ক্ষান্ত হয়েছে৷ কিন্তূ, মহাবিশ্বের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষের সর্বস্তরের,সর্বঅঙ্গের,সর্বদিকের সৃষ্টি-আল্লাহর নিজ হাতের সংস্পর্শে তৈরী৷ আর সেই সৃষ্টির মধ্যেই এমন কতকগুলি ত্রুটি রয়ে গেছে যে, নিজ দেহের জিন অটোমেটিক চেন্জ হয়ে গিয়ে অসুখ তৈরী করে(জিনতত্ব) অথবা নিজ দেহের ইমিউনিটি নিজের দেহের কোষগুলিকে ধ্বংশ করে যেটা কিনা সর্বদা রক্ষা ও প্রতিরোধ করত৷ ( নাউযুবিল্লাহ)

তাই, জিনতত্বের মূল কারণ ও অটোইমিউনিটির মূল ঘটনাবলীর পিছনে এখনও অনেক গবেষণা ও ইনভেষ্ট করা জরুরী৷ জেনেটিক তত্ব ও অটোইমিউনিটি তত্বের ভাষ্য সরাসরি আল্লাহর মর্যাদাতে আঘাত হানা হয়৷ অথচ, আল্লাহ কুরআনে বিভিন্ন আয়াতে বলেছেন, মানুষকে তিনি অতীব সুন্দর, সুপরিকল্পিত, সুপরিমিত, সুবিন্যস্তভাবে সৃষ্টি করেছেন৷ আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন৷

মূল কারণ হল — হেভি মেটাল ( যেটা সম্পর্কে আমি আগেই আলোচনা করেছি)
(https://asshifatrust.com/2020/07/23/heavy-metals-need-serious-attention/)
এবং বিভিন্ন প্যাথোজেন সেটা ভাইরাস হোক বা ব্যাকটেরিয়া৷
ল্যাব টেষ্টে ডিটেক্টেড নয় মানেই এটা নয় যে, সেটি শরীরে বিদ্যমান নাই৷ রক্তে না থাকলেও বিভিন্ন অর্গানে,কোষে ঠিকই আছে৷ আর সেটা কোন টেষ্টে ততক্ষন ধরা সম্ভব নয় যতক্ষন সেটা রক্তে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় না পৌঁছায়৷

বর্তমানে প্রত্যেকটা মানুষেরই(>৯০%) দেহে বিশেষ করে লিভারে অল্প পরিমাণ হলেও এই হেভি মেটাল জমা আছেই৷ সঙ্গে বিভিন্ন প্যাথোজেন ডর্মান্ট বা এক্টিভ স্টেজে৷

কোন একটি মানুষের শরীরে বিভিন্ন স্টেরয়েডের বা হরমোনের উপস্থিতি,তার মানসিক পরিস্থিতি, তার দৃষ্টিভঙ্গি, জীবন-যাপনের মান, খাদ্যাভ্যাস, বিভিন্ন টক্সিনের বা হেভি মেটালের এক্সপোজার,তার পূর্বপুরুষের সূস্থতা প্রভৃতির উপর নির্ভর করছে মানুষটির
কোন বয়সে,কোন অঙ্গে, কোন সমস্যাটি হবে৷

এই জন্য খেয়াল করবেন, একটি লোকের বয়স ৫০-৬০ এর কাছাকাছি এলে প্রায় সব সমস্যাগুলিই কমবেশী একসঙ্গে থাকে!

সমস্ত দেহের যাবতীয় প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্ট, মিনারেলস, ভিনামিন মানুষের দেহের কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি লিভারে তৈরী হয়৷ প্রয়োজন অনুপাতে ক্যামিক্যাল ম্যাসেন্জারের নির্দেশে ভিটামিনB12 এর সঙ্গে সকল নিউট্রিয়েন্ট বাইন্ড হয়ে নির্দিষ্ট অর্গানে বা কোষে পৌঁছায়৷ আবার ভিটামিন B12 ও বিভিন্ন কোষের জন্য অপরিহার্য৷ এই জন্য Vitamin B12 হল কোর নিউট্রিয়েন্ট৷ অনবরত হাজার হাজার কেমিক্যাল কাজ লিভার করছে৷ তারপরও ৬ টি মেজর কাজ সর্বদা করছে৷
১) ফ্যাট ডাইজেশন ও প্যাংক্রিয়াসকে রক্ষা করা৷
২)গ্লুগোজ স্টোর ও গ্লাইকোজেন জমা রাখা
৩)ভিটামিনস ও মিনারেলস জমা রাখা
৪) সমস্তরকম ক্ষতিকর বস্তূগুলিকে অক্ষতিকর (Disarming) ও নিজের মধ্যে আটক করা(Detaining)৷
৫)রক্তকে স্ক্রিনিং(Screening) করা এবং ফিল্টার করা(Filtering) ৷
৬)লিভার -এর নিজস্ব ইমিউনিটি দিয়ে পুরো দেহকে বিভিন্ন জীবানু বা ক্ষতিকর বস্তূ থেকে রক্ষা করা৷

এখন, যে কোন খাবারই খান না কেন সেটা আগে লিভারে পৌঁছাবে৷ লিভার চেক করার পর যদি সেটি শরীরের জন্য উপকারী ও প্রয়োজনীয় হয় তবে গ্রহণ করবে৷ আর ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় হলে বিভিন্ন মেটাবোলাইটের মাধ্যমে পিত্ত দিয়ে বের করে দিবে৷ খাবারে হেভি মেটাল থাকলে , পরিপূর্ণরূপে লিভার বের করতে পারেনা৷ কারণ, হেভি মেটালের নিজস্ব অক্সিডাইজ করার ক্ষমতা আছে, প্রচন্ড বায়ো এক্যুমুলেটিভ,লিপোফিলিক৷ ফলে, অল্প অল্প করে লিভারে জমতে থাকে৷ লিভারের অন্যান্য অর্গানকে রক্ষা করতে এই হেভি মেটালকে ব্লাডে নির্গত হতে বাধা দেয় এবং নিজের লবুউলেই জমা রাখে৷ নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েও ব্রেন,হার্ট,কিডনি,ব্লাড,অস্থিমজ্জা, মাসল,নার্ভ প্রভৃতিকে রক্ষা করতে পিছপা হয় না৷ এই জন্য তো লিভার PEACE MAKER.

এই ভাবে চলতে থাকলে, আমরা লিভার সম্পর্কে অসেচতন থাকলে একটা সময় গিয়ে লিভারের সমস্ত লবিউল স্যাচুরেট হয়৷ সমস্ত স্তর পরিপূর্ণ হয়৷ বিভিন্ন কাজের ব্যাঘাত হয়৷ একটা একটা করে কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়৷ ধাপে ধাপে একটার পর একটা সমস্যা তৈরী হয়৷ সেই বিষগুলি ব্লাডে,লিম্পে আসতে শুরু করে৷ আরও সমস্যা তৈরী হয়৷ উপরন্তূ, হেভি মেটালের প্রতি আসক্ত জীবাণুগুলি লিভারে ডর্মান্ট থাকলে সক্রিয় হয়ে আরও ম্যাসাকার তৈরী করে৷ আলাদাভাবে জীবাণুটি লিভার ছাড়াও সর্বাঙ্গে ক্ষমতা ও ইমিউনিটি (অর্গান স্পেসিফিক) অনুযায়ী হানা দেয়৷ শুরু হয় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রদাহ ও ইমিউনোলজিক্যাল রিয়াসন৷ তাতে অনেক ক্ষেত্রে তৈরী হয় এন্ডিবডি৷ আমরা মনে করি, সেটা অটোএন্ডিবডি৷

সুতরাং, আমাদের লিভারের কেয়ার নেওয়া প্রত্যেকরই অতীব অপরিহার্য৷

বিভিন্ন গবাদী পশু যে খাবার খায় তা সবই বিষমুক্ত নয়৷ মানুষের মতই ঐ বিষগুলি পশুর লিভারে জমা হয়৷ এখন আমরা যদি লিভারটা সুন্দরভাবে রান্না করে আয়েশে খায়—তাহলে বুঝতে পারছেন তাতে কী আছে??

অতএব, যারাই বিভিন্ন ক্রনিক অসুখে ভুগছেন তারা চেষ্টা করবেন লিভার না খাওয়ার৷ খেলে আপনার ক্রনিক সমস্যাটি বৃদ্ধি পাবেই৷ এব্যাপারে নিশ্চিৎ থাকেন৷

যদি খেতেই হয়, তবে একটু হিলিং ফুড যেমন লেবু, আপেল, কমলা, ড্যাগোন ফ্রুট, ব্লুবেরী প্রভৃতি সেদিন একটু বেশী খাবেন৷

লিখনে—ডাঃ ইয়ার আলী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.