মন্ত্রীসভায় পরিবর্তন আগামী সপ্তাহে
দীপ্তিমান মুখোপাধ্যায়
কলকাতা, ৬ নভেম্বর : আগামী মঙ্গলবারই রাজ্য মন্ত্রীসভায় বড় ধরনের রদবদল করতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওইদিন বিকালে মন্ত্রীসভার বৈঠকও ডেকেছেন মমতা। সেখানে নবনিযুক্ত মন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন। অর্থমন্ত্রী পদে অমিত মিত্রের মেয়াদ শেষের পথে। পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরও খালি হয়েছে। এছাড়া ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পান্ডে গুরুতর অসুস্থ থাকায় তাঁর দপ্তরও সুব্রতবাবুর হাতে দেওয়া হয়েছিল। ফলে ওই দপ্তরটিও এখন খালি।
সূত্রের খবর, অর্থমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিলেও অমিত মিত্রকে রাজ্যের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা করে রাখা হতে পারে। সেক্ষেত্রে মমতা নিজের হাতেই অর্থদপ্তর রেখে দিয়ে কাউকে এই দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী করতে পারেন। পঞ্চায়েত দপ্তরও আপাতত মমতা নিজের হাতে রেখে দিতে চাইছেন। পূর্ণমন্ত্রী পদে অন্তত দুজন শপথ নিতে পারেন। প্রতিমন্ত্রী পদে আরও দুজনকে আনতে পারেন মমতা। তবে মন্ত্রীসভা থেকে কেউ বাদ যাবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।
নবান্ন সূত্রে খবর, শনিবারই মন্ত্রীসভার সম্ভাব্য রদবদল নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একপ্রস্থ আলোচনা করেছেন। ওই আলোচনায় দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বকসি ও মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার তিনি এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর দপ্তর রদবদল করার পাশাপাশি কয়েকজনকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। পঞ্চায়েত দপ্তরে দক্ষিণ কলকাতা থেকে নির্বাচিত কাউকে আনার পরিকল্পনা তার এই পদে
সম্ভাব্য বদল। মন্ত্রীসভায় স্থান পেতে পারেন উদয়ন গুহ ও জঙ্গিপুরের জাকির হোসেঅরূপ বিশ্বাস, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বাড়তি গুরুত্ব পেতে পারেনচন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণমন্ত্রী করা হতে পারে
হাওড়ার এক মন্ত্রীকেও আনার কথা চলছে। মন্ত্রীসভায় এবার স্থান পেতে পারেন দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ ও জঙ্গিপুরের বিধায়ক জাকির হোসেন। সূত্রের খবর, বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ও পুর দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বাড়তি গুরুত্ব পেতে পারেন। চন্দ্রিমাকে প্রতিমন্ত্রী থেকে
পূর্ণমন্ত্রী করা হতে পারে। শুধু তাই নয়, মমতার অত্যন্ত আস্থাভাজন এই মন্ত্রীকে পঞ্চায়েত দপ্তরের দায়িত্বেও আনা হতে পারে বলে জল্পনা রয়েছে। সেইসঙ্গে অরূপ ও শোভনদেবকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে অন্য দপ্তরের মন্ত্রীদের দপ্তর রদবদল করা হতে পারে।
তবে মন্ত্রীসভার দুটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর, অর্থ ও পঞ্চায়েত নিয়ে মমতার চিন্তা সবচেয়ে বেশি। আগামী ২০২৩ সালে রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট। এছাড়াও পঞ্চায়েত এলাকায় জনমুখী প্রকল্পগুলি সুব্রতবাবুর নেতৃত্বে দ্রুতগতিতে এগোচ্ছিল। সেই গতি ধরে রাখতে একজন পূর্ণমন্ত্রী প্রয়োজন বলেই মমতা মনে করছেন। কারণ, পঞ্চায়েত এলাকায় দলের ভিত শক্ত হওয়ার পিছনে এই দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অর্থ দপ্তর থেকে অমিত মিত্র চলে যাওয়ায় বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজা চালানো মমতার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
এখন মমতার হাতে স্বরাষ্ট্র ছাড়াও স্বাস্থ্য, পুর, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর রয়েছে। চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে স্বাস্থ্য ও পুর দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী করে এই দপ্তর দুটি চালানো হচ্ছে। কিন্তু অর্থ ও পঞ্চায়েত দপ্তরের জন্য পূর্ণমন্ত্রীর প্রয়োজন বলেই নবান্নের কর্তারা মনে করছেন। আপাতত মমতা কিছুদিন পঞ্চায়েত দপ্তর নিজের হাতে রেখে কাউকে প্রতিমন্ত্রী করে রাখলেও কয়েক মাসের মধ্যে পূর্ণমন্ত্রী করে। কাউকে এই দপ্তরে আনতে হবে। সেক্ষেত্রে কে এই দপ্তরের দায়িত্ব পাবেন তা নিয়ে তৃণমূলের মধ্যেও কৌতূহল তৈরি হয়েছে।