রাজ্যে ষষ্ট স্থান অধিকার করে সম্প্রীতির বার্তা জগন্নাথের ,মাদ্রাসায় নজর কাড়ছে অমুসলিম ছাত্রছাত্রী

Spread the love

 

মাদ্রাসায় নজর কাড়ছে অমুসলিম ছাত্রছাত্রী
রাজ্যে ষষ্ট স্থান অধিকার করে স¤প্রীতির বার্তা জগন্নাথের♦

নিজস্ব প্রতিবেদক ,অয়ন বাংলা : – মাদ্রাসা মানেই সা¤প্রদায়িকতার বীজ বোপন করা হয়। মাদ্রাসা নাকি সন্ত্রাসীদের আঁতুর ঘর। এমন সব ভ্রান্ত ধারনা ব্যক্ত হয়েছে অতিতে। যা নিয়ে রাজ্য রাজনীতিও তোলপাড় হয়েছে। কিন্তু তাতে সাধারণ মানুষের কিছু যায় আসেনি। মাদ্রাসা যে একটি স¤প্রীতির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, তা ফের এক বার প্রমানিত হল। ২০১৭ সালের পর ২০২০। ফের হাইমাদ্রাসার মেধা তালিকায় জায়গা করে নিল অমুসলিম পরিক্ষার্থী। বীরভূম জেলার দুবরাজপুরের খন্ডগ্রাম ডিএস হাইমাদ্রাসার ছাত্র জগন্নাথ দাস ৭৬০ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় ষষ্ট স্থান অধিকার করেছে।
মাদ্রাসা শিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত মাদ্রাসাগুলি সঙ্গে স্কুলের কোনও পার্থক্য নেই। সিলেবাসও একইরকম। শুধু মাদ্রাসায় একটি বিষয় বেশি পড়ানো হয়। সমস্ত স্কুলে আরবি ভাষা পড়ানো হয় না। কিন্তু সমস্ত হাইমাদ্রাসায় ১০০ নম্বরের আরবি ভাষা পড়ানো হয়। তাই, বাংলা, ইংরাজি, হিন্দির সঙ্গে আরবি ভাষা শেখার জন্য বহু অমুসলিম ছেলে মেয়েরাও মাদ্রাসায় ভর্তি হচ্ছে। যার ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে অমুসলিম পড়–য়ার সংখ্যা। এর মাধ্যমেই মাদ্রাসা সম্পর্কে যে সব ব্যক্তি মাঝে মধ্যেই কু-কথা ব্যক্ত করে থাকেন, তাঁদের মুখে ঝামা ঘষে দিল জগন্নাথদের মতো কৃতি সন্তানরা।
জগন্নাথের খন্ডগ্রাম পাড়াতেই অবস্থিত এই মাদ্রাসা। তাদের পাশের পড়াতেই রয়েছে একটি বিরাট স্কুল। তারপরেও, গজগন্নাথ কেন মাদ্রাসায় পড়াশোনা করল। জগন্নাথের কথায়, আমি হিন্দু, মুসলিম বুঝি না। আমি জানি, আমি একজন মানুষ। আমার সঙ্গে, আমার বন্ধুরাও এক মত। জগন্নাথ জানায়, তিনি এক নয়, এই মাদ্রাসার অর্ধেক পরীক্ষার্থী ছিল অমুসলিম। আমাদের পড়ার সকলেই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। সকলেই আরবি ভাষা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পড়াশোনা করে। আমাদের আগ্রহ রয়েছে, আরবি ভাষায় কথা বলার। আরবি ভাষাকে জানার। বাকি সব বিষয়, স্কুলের সঙ্গে কোনও পার্থক্য নেই। তাছাড়া, এই মাদ্রাসায় পড়াশোনার সুনাম রয়েছে। জগন্নাথের বাবা দিনবন্ধু দাস বলেন, ‘আমরাও এই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছি।আমাদের পাড়ার ছেলে মেয়েরা এই মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে বড় হয়েছে। অনেকে ভালো জায়গায় চাকরিও করছে।’ এই মাদ্রাসা থেকেই নাকি ৩০ জন অমুসলিম ছাত্রছাত্রী হাইমাদ্রাসার পরীক্ষা দিয়েছে। যা স¤প্রীতির গর্ব বলেই মনে করছেন অনেকে। মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক কারিবুল হোসেন বলেন, ‘জাতি, ধর্ম, বর্ন নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ আমাদের মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। মোট ছাত্রছাত্রীর ৪০ শতাংশই অমুসলিম। উভয় ধর্মের ছাত্রছাত্রীরা ভাইবোনের মতো থাকে। সবায় একসঙ্গে ঈদ পালন করে। আবার পুজোর সময়ও সবই একইসঙ্গে মিলিত হয়।’ ফলে মাদ্রাসা মানে শুধুই মুসলিমদের, এমন ভাবনা এখন অতিত। মাদ্রাসা মানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনও ধর্ম নেই।
তবে, একা জগন্নাথ নয়, এবারে হাইমাদ্রাসায় ৫৭৩৮ জন অমুসলিম ছাত্রছাত্রী পরীক্ষায় বসেছিল। এর মধ্যে ছাত্র ১৭১৬ আর ছাত্রী ৪০২২। গত বারের তুলনায় এই সংখ্যাটা অনেকটাই বেশি। এর মধ্যে অর্থেক এসসি, এসটি ও ওবিসি স¤প্রদায় ভুক্ত। অসুমলিম পরীক্ষার্থীদের মধ্যে এবারে পাশ করেছে ৪৬৮১। শতকরা ৮১.৫৬ শতাংশ।
এর আগে ২০১৭ সালে রাজ্যে প্রথম হাইমাদ্রাসার পরীক্ষায় মেধাতালিকায় জায়গা করেছিল অমুসলিম পরীক্ষার্থী। প্রশমা শাসমল নামে ওই ছাত্রী নবম স্থান অধিকার করেছিল। এবার সেই জায়গায় উঠে এল জগন্নাথ দাস। মাদ্রাসা পর্ষদের সভাপতি আবুতাহের কামরুদ্দিন বলেন, ‘অমুসলিম ছাত্রছাত্রীরাও মেধায় তালিকায় স্থান পাচ্ছে। একটা আমাদের কাছে ভালো দিক। সেইসঙ্গে প্রতিবছরেই অমুসলিম পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও বাড়ছে। এটা আমাদের কাছে গর্বের।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.