অয়ন বাংলা,নিউজ ডেস্ক, কাটোয়া:- গোটা বাংলা আজ প্রতারণার জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে।এ রকম এক প্রতারণার কেস ধরা পড়ল । কাউকে দেওয়া হয়েছে বিমানবন্দরে কাজের প্রতিশ্রুতি, কাউকে রাজ্য সরকারের গ্রুপ ডি পদে চাকরির। আবার কারও কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়েছে কলকাতা পুলিশে চাকরি করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে৷ এভাবে দু’বছরে তোলা হয়েছে ৪০ লক্ষেরও বেশি টাকা৷ কিন্তু তারপরও প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় পুলিশের দ্বারস্থ হলেন চাকরিপ্রার্থীরা৷ পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম ও মুর্শিদাবাদ জেলায় এক বড় প্রতারণা চক্রের খোঁজ পেল প্রশাসন৷ শুক্রবার সকালে কেতুগ্রামের রাজুর গ্রাম থেকে এক তরুণী-সহ তিনজনকে গ্রেপ্তারও করল কেতুগ্রাম থানার পুলিশ৷
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম আরিফুল ইসলাম, সায়ন্তন মুখোপাধ্যায় ও পল্লবী সিংহ চৌধুরি। রাজুর গ্রামে আরিফুলের বাড়ি থেকেই পুলিশ ওই তিনজনকে পাকড়াও করেছে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে সায়ন্তনের বাড়ি হাওড়ার শিবপুর থানার ভূতনাথ মুখার্জ্জী রোডে এবং পল্লবীর বাড়ি নিউটাউনে। গত বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞা থানার এক পাহাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আসরফ মল্লিক নামে এক যুবক কেতুগ্রাম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ দায়ের করার সময় আসরফের সঙ্গে ছিলেন আরও কয়েকজন যুবক। তাঁদের প্রত্যেকের অভিযোগ, চাকরির নামে তাঁদের থেকে টাকা তোলা হয়েছে৷ কিন্তু সময় অতিক্রম করে গেলেও, চাকরি মেলেনি৷
আসরফ মল্লিকের অভিযোগ, রাজুর গ্রামে পিসির বাড়িতে যাতায়াতের সূত্রে আরিফুল ইসলামের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় তাঁর। পরে আরিফুলই তাঁর সঙ্গে সায়ন্তন মুখোপাধ্যায় ও পল্লবী সিংহ চৌধুরির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। নিজেকে বিমানবন্দরের কর্মী বলে পরিচয় দেয় আরিফুল। এরপর বিমানবন্দরে চাকরি করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৩ লক্ষ টাকা চায়। ২০১৭-র ৪ এপ্রিল আরিফুল প্রথম দফায় ২ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা দেন আসরফকে৷ কয়েকমাস পরে ফের ২৫ হাজার টাকা দেন তিনি৷ আসরফ কথায়, ‘‘টাকা নেওয়ার একমাসের মধ্যে আমাকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় সায়ন্তন, আরিফুল ও পল্লবী৷ দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে বিমানবন্দরের কাছে একটি ঘরে ইন্টারভিউয়ে আমাকে হাজির করানো হয়। এরপর আমাকে আ্যমাজন নামে একটি সংস্থায় কাজে লাগায়। সেখানে ১৭ দিন ডিউটি করানোর পর বসিয়ে দেওয়া হয়। আমি পরিবারের টাকায় ঘর ভাড়া করে দিল্লিতেই অপেক্ষা করছিলাম। রোজ ফোনে আরিফুল ও সায়ন্তনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। কিন্তু ওরা কেবল প্রতিশ্রতিই দিত। এভাবে ৯ মাস দিল্লিতে অপেক্ষা করার পর বুঝতে পারি প্রতারিত হয়েছি। আমি বাড়ি চলে আসি। তারপর চেষ্টা করেও ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আসরফ মল্লিক রাজুর গ্রামে এসে আরিফুলের বাবাকে চাপ দেয়৷ এরপরই আরিফুল, সায়ন্তন ও পল্লবী রাজুরে আরিফুলের বাড়িতে আসে। টাকা ফেরতের দাবিতে আটকে রাখা হয় তাদের। খবর দেওয়া হয় পুলিশে৷ শুক্রবার তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এদিন ধৃতদের কাটোয়া আদালতে তোলা হলে তাদের ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়। রাজুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল গফ্ফর জানিয়েছেন, গ্রুপ ডি পদে চাকরির প্রতিশ্রতি দিয়ে তার কাছ থেকে ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। কাঁদরা গ্রামের মনিরুল হক নামে এক ব্যক্তিও বলেন, ছেলের চাকরির জন্য তাঁর থেকে ৪ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। শ্যালকের চাকরির জন্য প্রতারকদের ২ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা দেন খাঁজি গ্রামের আবুল হোসেনও।
সৌজন্য:- প্রতিদিন