দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ কান্দি রনগ্রাম ব্রীজ! ভোগান্তিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ, সমাধান কবে?
জৈদুল সেখ, অয়ন বাংলা , কান্দী:-
ভোট আসে ভোট যায় প্রতিশ্রুতির প্রহেলিকায়,
সামনে ভোট, কিন্তু সাধারণ মানুষের ভোগান্তির শেষ কোথায়?
মুর্শিদাবাদের কান্দি বহরমপুর যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম রনগ্রাম ব্রিজ কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এই ব্রিজের উপর যান চলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে কয়েক লক্ষ মানুষ। বাস ও লরি চলাচল আগেই বন্ধ হয়েছিল, তার পর গত তিন মাস ধরে বন্ধ হয়ে গেছে ছোট চার চাকার গাড়িও। কেবলমাত্র মোটরসাইকেল ও অ্যাম্বুল্যান্সের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়েছে কান্দির রণগ্রাম ব্রিজের উপর দিয়ে। ফলে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে।
বহরমপুর শহরের সঙ্গে কান্দি মহকুমার সালার , ভরতপুর, কান্দি ও খরগ্রাম ব্লকের প্রধান ভরসা দ্বারকা নদীর উপর রণগ্রাম ব্রিজ। কিন্তু সেই ব্রিজ দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল। পাশেই তৈরি হচ্ছে নতুন ব্রিজ। সেই কাজ চলার জন্য সমস্ত গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত বহরমপুর থেকে বীরভূম ও বর্ধমান যাওয়ার জন্য কান্দি- বহরমপুর রাজ্য সড়কের উপর নির্ভর করতে হয়। বর্তমানে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
কান্দি সাঁইথিয়া সহ দক্ষিণবঙ্গের একমাত্র পরিবহণ যোগাযোগ প্রধান ব্যাবস্থা এই রনগ্রাম ব্রীজ। সেতুর শেষ প্রান্তে প্রায় ১২ মিটার এলাকা জুড়ে ভেঙে যায় সেতু। দ্বারকা নদীর উপর অবস্থিত ১৯৩৮ সালে স্বাধীনতা আগে ইংরেজ আমলে লোহার এই ব্রীজ নির্মান করা হয়। রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে ব্রীজ অবস্থা বর্তমানে বেহাল হয়ে পড়েছে, ব্রীজ টি লোহার হলেও ব্রীজে দুপাশে কংক্রিটের পিলার আছে যার রক্ষনাবেক্ষণের অভাবে হাড় কঙ্কাল দেখা দিয়েছিল বসে গিয়েছিল ব্রীজের একটা অংশ। কান্দি রনগ্রাম ব্রীজ বেহাল অবস্থা জন্য ব্রীজ মেরামতির কারনে ২০১৮ সালে ও ২০১৯ সালে পূজো আগে সেপ্টেম্বর মাসে একমাস বন্ধ থাকে রনগ্রাম ব্রীজ। ফলে যান চলাচল বিপর্যস্ত হয় । ২০১৯ সালে মে মাসে পুর্ত দফতর আধিকারিকরা ব্রীজ পরিদর্শন পর ফের ত্রুটি খুঁজে পান ফলে নির্দেশিকা জারি করেন এবং যান চলাচল বন্ধ করা হয়। মটর বাইক ছোট গাড়ি বাদে কোন ভারী যান বাহন চলছে না বলে নির্দেশিকা দেওয়া হয় ।
রনগ্রাম এই ব্রীজে বন্ধ রেখে ৭নং রাজ্য সড়ক ধরে যান চলাচল করানো হচ্ছে বলে জানানো হয় মহকুমা প্রশাসন পক্ষ থেকে। ২০১৮সালে জানুয়ারি মাসে দৌলাতাবাদে বাস দুর্ঘটনা মৃত্যু হয় ৪৪ জনের। তারপর ব্রীজ মেরামতির কথা থাকলেও তা হয়নি সেপ্টেম্বর মাসে মাঝেরহাট দুর্ঘটনা তিনজন মৃত্যু পর টনক নরে প্রশাসনের। মাঝেরহাট ব্রীজের দুর্ঘটনা এড়াতে ব্রীজ রক্ষণাবেক্ষণ কাজ শুরু করে পুর্ত দফতর। তবে ফের সাত মাসের মাথায় ব্রীজের যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পরার ফলে বন্ধ করা হল যান চলাচল । ব্রীজ বন্ধ ফলে সমস্যায় পরেছেন কান্দি শহরের ব্যাবসায়ীরাও।
প্রশাসনের দাবি, খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান হবে। কান্দি পৌরসভার প্রশাসক অপূর্ব সরকার বলেন, ” রণগ্রাম ব্রিজের মেরামতির জন্য মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে ব্রিজের পাশে নতুন ভাবে উন্নত ব্রিজ তৈরি হচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি যেন ব্রিজের কাজ শেষ হয় তার চেষ্টা চলছে।”
কিন্তু এখান থেকে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন এতোদিন ধরে সরকার কী ঘুমিয়ে আছে? কান্দী থেকে বহরমপুর যাওয়ার খরচ যেখান ৩০ থেকে চল্লিশ টাকা হয় ব্রিজ বন্ধের জন্য প্রতিদিন এপার থেকে ওপারে গাড়ি পরিবর্তন করার জন্য খরচ হচ্ছে প্রায় ১০০ টাকারও বেশি তার সঙ্গে সময় এবং হয়রানি হতে হচ্ছে দ্বিগুণ!
জোটের বাম কংগ্রেসের বিদায়ী বিধায়ক এবং বর্তমানের প্রার্থী শফিউল আলম খান বলেন
“রাজ্য সরকারের গাফিলতি এবং তৃণমূল নেতাদের
দলাদালিতে এবং কাটমানি জন্য ব্রিজের কাজ করতে পারছে না কন্ট্রাক্টর! ফলে সাধারণ মানুষ আজ বঞ্চিত তাই নয় এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষকে আজ কষ্টের স্বীকার হতে হচ্ছে, যার জবাব সামনে বিধানসভায় কান্দীর মানুষ দিবে।”
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ১৯৩৮ সালে কান্দি ও বহরমপুর শহরের যোগাযোগ তৈরি করতে দ্বারকা নদীর উপর ওই সেতু নির্মাণ করা হয়েছিল। শুধু কান্দি-বহরমপুর নয়, ওই সেতু জুড়ে দিয়েছে, পড়শি বীরভূম ও বর্ধমান জেলাকেও। এখন প্রশ্ন, তিন বছর আগে সংস্কার হলেও ফাটল কেন চোখে পড়ল না? আর নতুন ব্রিজের কাজ হতে এতো দেরি হচ্ছে কেন?