উচ্চমাধ্যমিকে মাদ্রাসা সেরা বৈজয়ন্ত ভট্টচার্য
অপপ্রচারকারীর কড়া জবাব নদিয়ার এই ছাত্রের
নিজস্ব প্রতিবেদক: মাদ্রাসা সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনা, নাকি অপ্রচার করার উদ্দেশ্যে কু-কথা। সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ মাদ্রাসা নিয়ে লাগাতার অপ-প্রচার করে থাকেন। মাদ্রাসা মানে মুসলিমদের একটি ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেখানে নাকি সন্ত্রাসবাদিদের আতুঁর ঘর। সেখানে নাকি জঙ্গী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এক শ্রেণীর মানুষ এভাবেই মাদ্রাসাকে খাটো করে আসছে। মাদ্রাসা হল আরবি শব্দ। এর মানে হল যে কোনও ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সেটা ধর্মরিপেক্ষ হতে পারে, আবার ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও হতে পারে। দুই ধরণের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই আরবি ভাষায় মাদ্রাসা বলা হয়ে থাকে। এটা ঠিক মুসলিম স¤প্রদায়ের শিক্ষায় অগ্রগতির জন্য মাদ্রাসা নাম দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়। তার মানে সেটা কোনও ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। এটা সরকার পোষিত এডেড মাদ্রাসা। যেখানে সব ধর্মের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করতে পারে। যা পরিচালন ক্ষমতায় থাকেন সরকারি প্রতিনিধি। এমনই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বারবার জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদী তকমা দিয়ে খাটো করা হচ্ছে। যত এমন প্রচার হচ্ছে, ততই মাদ্রাসা থেকে অমুসলিম ছেলে মেয়েরা ভালো রেজাল্ট করছে।
মাধ্যমিক সমতুল্য হাইমাদ্রাসার পর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতেও মেধা তালিকায় জায়গা পেয়েছে অমুসলিম পরীক্ষার্থী। ৪৯৪ নম্বর পেয়ে ষষ্ট স্থান দখল করেছে নদিয়া জেলার ইসলামগঞ্জ হাইমাদ্রাসার ছাত্র বৈজয়ন্ত ভট্টাচার্য। উচ্চমাধ্যমিকে ফলাফলে নিরিখে মাদ্রাসা সেরা নির্বাচিত হয়েছে বৈজয়ন্ত। পিতৃহীন বৈজয়ন্ত মাদ্রাসা শিক্ষকদের সহযোগিতাতেও রাজ্যে ষষ্ট স্থান দখল করেছে। শুধু তাই নয়, ফলাফলের ভিত্তিতে দেখা গিয়েছে, রাজ্যের ৪০টি মাদ্রাসা থেকে একাধিক পড়–য়া ৯৫ শতাংশের উপর নম্বর পেয়েছে। ৯০ শতাংশের উপর নম্বর পেয়েছে ৭৪টি মাদ্রাসার পড়–য়া। শতাধিক মাদ্রাসা থেকে পড়–য়ারা ৮০ শতাংশের উপর নম্বর পেয়েছে। মালদা জেলার জগনাথপুর হাইমাদ্রাসায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছে ৪৯০। তার মানে ওই মাদ্রাসায় মেধা তালিকায় জায়গা পেয়েছে। ওই জেলার ন-মৌজা সুজাপুর সুভানিয়া হাইমাদ্রাসার সর্বোচ্চ নম্বর ৪৮৬। সর্বোচ্চ ৪৮৪ নম্বর উঠেছে মালদা জেলার রানীনগর হাইমাদ্রাসায়। মুর্শিদাবাদ জেলার মাদ্রাসা হুসানীয়া হাইমাদ্রাসার সর্বোচ্চ প্রাপকের নম্বর হল ৪৮২। নদীয়া জেলার জানকীনগর হাইমাদ্রাসা থেকে সর্বোচচ নম্বর উঠেছে ৪৮০।
উলেখ্য, রাজ্যের হাইমাদ্রাসাগুলি মাদ্রাসা পর্যদের অনুমোদিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও, রাজ্যের ২১০টি মাদ্রাসায় উচ্চমাধ্যমিক পড়ানোর জন্য সংসদের অনুমোদন রয়েছে। এই সমস্ত মাদ্রাসায় উচ্চামাধ্যমিক শিক্ষক সংসদের গাইডলাইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়। বিজ্ঞান, কলা ও বানিজ্য বিভাগ চালু করা হয়েছে।
পরিকাঠামোর দিক থেকে স্কুলের তুলনায় মাদ্রাসাগুলি অনেক পিছিয়ে রয়েছে। পর্যাপ্ত ক্লাস রুম নেই। অথচ, রাজ্যে এমন অনেক মাদ্রাসা রয়েছে, যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা চার হাজারের বেশি। কিন্তু ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ার ফলে শিক্ষক শূন্যপদ ক্রমশ বাড়ছে। তারপরেও, এই নূন্যতম পরিকাঠামো নিয়ে নজরকাড়া রেজাল্ট করছে মাদ্রাসার পড়–য়ারা। এবারে মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করে প্রায় ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রী উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় বসেছিল। যার মধ্যে কয়েক হাজার অমুসলিম পরীক্ষার্থী ছিল। ফলাফলের নিরিখে নজির বিহীন সাফল্যও পেয়েছে মাদ্রাসার পড়–য়ারা। হাইমাদ্রাসার মধ্যে প্রথম হয়েছে অমুসলিম পরীক্ষার্থী। এরপরেও এক শ্রেণীর মানুষ মনে করে দেশে মাদ্রাসার প্রয়োজন নেই। তাদের জানা দরকার নূন্যতম পরিকাঠামো, পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকা সত্বেও ভালো রেজাল্ট হয় মাদ্রাসাতেই। যেখানে অসহায় গরিব পরিবারের ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা করে। মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে এই সমস্ত ছেলে মেয়েরা শহরের নামীদামি স্কুলের সঙ্গে সমারে টক্কার দিয়ে যাচেছ। এটার জন্য অবশ্যই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়াকেই প্রাধান্য দিচ্ছে শিক্ষামহল। তাদের মতে, কমিশনের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ফলে মাদ্রাসাগুলিতে যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক পাওয়া গিয়েছে। যার ফল পরীক্ষার রেজাল্টে পাওয়া যাচ্ছে। যে কমিটির দ্বারা নিয়োগ প্রক্রিয়া হলে সম্ভব হত না। যেখ নে দক্ষ শিক্ষক রয়েছে। যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দেশে প্রয়োজন নেই বলে এক শ্রেণীর মানুষ দাবি তুলেছে। সেই সঙ্গে অপ্রচার চালানো হচ্ছে। এই সব যাবতীয় অপপ্রচারের জবাব দিয়ে চলেছে ছাত্রছাত্রীদের নজিরবিহীন ফলাফল।