মালদার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একইসঙ্গে এমডি করা ডাক্তারও
প্রতিবেদন :- ডাক্তার না পুলিশ? এই নিয়ে অনেকেই ধন্দে থাকেন। তবে তিনি পুলিশের ভূমিকা তো সবসময়েই পালন করছেন,সেইসঙ্গে তাঁকে নিজের বিভাগীয় কর্মীদেরও জরুরি প্রয়োজনে চিকিৎসা করতে হয়। অনেকে তাঁকে দুই ভূমিকাতেই দেখতে চান। কিন্তু তা সম্ভব নয়,কার এক্ষেত্রে হয়তো খানিকটা বাধা রয়েছে।
এই দুই পেশাতেই যিনি দক্ষ তিনি মানুষের সেবা করার জন্য অবশ্য বেছে নিয়েছেন পুলিশের কাজকেই। যাঁর সম্পর্কে এত কথা বলা হল,তাঁর নাম হোসেন মেহেদি রহমান। তাঁর নামের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে হোসেন মেহেদি রহমান,আইপিএস,এমবিবিএস, এমডি। বা সংক্ষেপে বলা যায় ডাক্তার মেহেদি হোসেন,আইপিএস। বর্তমানে তিনি মালদহের (সদর) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
৩১ বছরের মেহেদি হোসেনের বাড়ি উত্তর দিনাজপুর জেলাতে। এই জেলার কালিয়াগঞ্জ থানার ডালিমগাঁও গ্রামে। তাঁর বাবা মুজিবর রহমান প্রাক্তন স্কুল শিক্ষক, মা হসনিয়ারা বেগম গৃহবূ। মেহেদি হোসেনের প্রাথমিক ও ম্যামিক শিক্ষা নিয়েছেন কাশিয়াংয়ের একটি বোর্ডিং স্কুলে। প্রতিভার ও মোবী মেহেদি হোসেনের পর ভর্তি হন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজে। এখন থেকেই তিনি ২০১২ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি হাসিল করেন। তারপর লখনউ মেডিক্যাল কলেজ থেকে তিনি এমডি করেন।
কিন্তু হলে কি হবে? মেহেদি হোসেন রহমানের বরাবর ইচ্ছে ছিল চিকিৎসক নয়, বরং প্রশাসনিক কাজের সঙ্গেই যুক্ত থাকবেন। এমডি করার মাঝেই মেহেদি রহমান ইউপিএসসি পরীক্ষায় বসেন। আর প্রথমবারেই বাজিমাত। সুযোগ পেলেন পুলিশ সার্ভিস অর্থাৎ আইপিএস-এ। ২০১৬ সালের আইপিএস ব্যাচ তিনি। এর পর হায়দরাবাদে প্রায় দু’বছর ট্রেনিং। বেঙ্গল ক্যাডরের সদস্য হিসাবে তিনি ব্যারাকপুরে তাঁর প্রভেশনাল পিরিয়ড শেষ করেন। বর্তমানে তিনি মালদা সদরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে কর্মরত রয়েছেন।
মালদা জেলাজুড়ে এখন করোনার দাপট বাড়ছে। জেলার সবস্তরের মানুষের সঙ্গে আক্রান্ত হচ্ছেন পুলিশকর্মীরাও। কিছুটা হলেও তাঁদের সাহস জোগাচ্ছেন মালদার এই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) হোসেন মেহেদি রহমান। আইন-শৃঙ্খলা সামলানোর পাশাপাশি আবার গলায় স্টোথো ঝুলিয়ে চিকিৎসার কাজেও নেমে পড়ছেন। তাতে বাড়তি সুবিে হচ্ছে পুলিশকর্মীদের। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের পরামর্শ মতো চলছেন তাঁরা। শুধু এই ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতিতেই চিকিৎসা নয়,বছরভর কারও জ্বর, সর্দি, কাশি উপশমে আক্রান্ত পুলিশকর্মীরা তাঁর কাছে ছুটে এলে সঙ্গে সঙ্গে প্রেসক্রিপশন করে দেন। আর তাঁর দেওয়া ওষু ব্যবহার করে সুস্থ হয়ে ওঠেন পুলিশকর্মী বা তাঁদের পরিবার। এরকম এক চিকিৎসক আইপিএসকে পেয়ে গর্বিত মালদা জেলা পুলিশ প্রশাসন। বললেন পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। জানা গেছে,এখন পর্যন্ত জেলার ২৩০ জন পুলিশকর্মী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসার জন্য আলাদা আইসোলেশন বিভাগ খোলা হয়েছে। সেখানে অন্য চিকিৎসকদের সঙ্গে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হোসেন মেহেদি রহমান। জানা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে ১৭৪ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
মেহেদি বলেন ‘পরিবারের ইচ্ছে ছিল আমি চিকিৎসক হই। সেই হিসেবে আমি এমডিও করি। কিন্তু আমার নিজের ইচ্ছে ছিল আইপিএস হওয়া। তাই পুলিশের উর্দি পরা।’ তিনি আরও জানান, ‘এই পরিস্থিতিতে করোনা সন্দেহ নিয়ে ভর্তি হলে, তাঁদের পরামর্শ দেওয়ার কাজটা করছি। অন্যান্য সময় বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে এলেও আমি প্রয়োজনীয় ওষুধ লিখে দিই। এ ছাড়াও আমরা সকলে একসঙ্গে এই করোনা মোকাবিলায় ময়দানে নেমে কাজ করছি। মাস্ক বিতরণ থেকে ত্রাণ বিলির কাজেও সবাই মিলেই হাত লাগিয়েছি।’
এ সম্পর্কে মালদার পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘করোনা মোকাবিলায় এক পুলিশ অফিসারকে চিকিৎসক হিসেবে পেয়ে আমরা গর্বিত ও আপ্ল$ত। এই করোনা আবহে তাঁকে কাছে পেয়ে চিকিৎসার কাজ অনেকাটাই সহজ হয়েছে। চিকিৎসা বিষয়ে তাঁর মতামত আমাদের বিশেষভাবে কাজে লাগছে। এখন করোনাসহ সব চিকিৎসার ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা গ্রহ তাঁকে ছাড়া ভাবাই যায় না।’