করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে আক্রান্ত পরিবারগুলির মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষে কাজ করে চলেছে ‘মনকথা’
অনুলিখনে – মনোজ কুমার সরকার :- সমাজকর্মী বর্তমান পরিস্থিতিতে সারা বিশ্ব করোনা ভাইরাস-এর দ্বিতীয় ঢেউ-এ আক্রান্ত | ভারতবর্ষ এই দ্বিতীয় ঢেউয়ে অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এবং কয়েক কোটি মানুষ এর ফলে আক্রান্ত হয়েছে | দুর্ভাগ্যবশত এর মধ্যে কয়েক লক্ষ্য মানুষ এই দ্বিতীয় ঢেউয়ে প্রাণ হারিয়েছে | সারা দেশের সাথে পশ্চিমবঙ্গও সমানভাবে এই দ্বিতীয় ঢেউয়ে ক্ষতিগ্রস্ত, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫,০০০ করে মানুষ করোনাতে আক্রান্ত হচ্ছে | হাসপাতালগুলিতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ক্রমশই বেড়ে চলেছে, সব জায়গাতেই প্রায় বেড নেই, অক্সিজেন নেই, প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই | সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষজন সাহায্যের জন্য নানাভাবে এগিয়ে এসেছেন এবং অক্সিজেন, অ্যাম্বুলেন্স, ওষুধ, রান্না করা খাবার, ইত্যাদি নিয়ে তাদেরকে যথাসাধ্য পরিষেবা দিয়ে চলেছেন | সরকারী ব্যবস্থার পাশাপাশি এই সকল পরিপূরক ব্যবস্থা মানুষকে বেঁচে থাকার জন্য অনেকটাই সাহায্য করছে | উল্লেখযোগ্যভাবে, প্রচুর ছাত্রছাত্রী এবং যুবক যুবতীরা এই সাহায্যের জন্য সর্বতোভাবে এগিয়ে এসেছেন |
এই পরিস্থিতিতে একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো যে, বাড়িতে যারা হোম আইসোলেশনে রয়েছেন বা যারা হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরিয়ে আসছেন তাদের মধ্যে শারীরিক দুর্বলতর সাথে সাথে নানা ধরণের মানসিক দ্বন্দ্ব কাজ করছে | বিশেষ করে যারা বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছে তাদের মধ্যে নানা ধরণের মানসিক দুশ্চিন্তা কাজ করছে | এক ধরণের ডিপ্রেশন ঘিরে ধরছে এই সকল মানুষকে, আর এর ফলে এই সকল মানুষের মধ্যে রাগ, পারিবারিক অশান্তি, বাড়ির বাচ্চাদের নিয়ে সমস্যা ইত্যাদি বিশেষভাবে দেখা যাচ্ছে |
এই সকল মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ‘মনকথা’, যার উদ্দেশ্য হলো যারা বাড়িতে আইসোলেশনে রয়েছে তাদের এবং যারা হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি চলে এসেছে তাদের কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে দুশ্চিন্তা মুক্ত করানো এবং নতুন করে বেঁচে থাকার জন্য মনের জোর বাড়ানো | ‘মনকথা’ – র মুখ্য মনোবিদ, শ্রীমতি চন্দ্রিমা সিনহা জানালেন যে তিনি প্রায় প্রতিদিনই ৪ থেকে ৫ টি নতুন পরিবারের লোকের সাথে কথা বলছেন এবং তাদের মানসিক ভাবে সুস্থ থাকার জন্য বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করে চলেছেন | এর মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশ মানুষ এমন আছেন যারা দুই বা তিনবারের জন্য শ্রীমতি সিনহার সাথে যোগাযোগ করেছেন | তিনি আরও জানালেন যে এই দীর্ঘ দিনের স্কুল বন্ধ থাকা, বাবা-মায়ের কাজের অনিশ্চয়তা, লক ডাউন, পরিবারের মধ্যে কারুর মৃত্যু এবং পারিবারিক হিংসা ভীষণ ভাবে পরিবারগুলির সুস্থ থাকার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে | শুধুমাত্র কাউন্সেলিং নয়, তার সাথে তিনি জানান যে এই অস্থির মুহূর্তে কিছুটা সময় গান শোনা, গল্পের বই পড়া, লেখালেখি করা এবং পারলে কিছুটা প্রাণায়াম করলে অনেকটাই ভালো থাকা যেতে পারে | ভালো সিনেমাও দেখা যেতে পারে এবং বাচ্চাদের জন্য কিছুটা সময় বের করে তাদের সাথে গল্প করা, ইন্ডোর গেমস খেলা, গান, নাচ মজা করে নিজেদেরকে সুস্থ রাখতে হবে | মনের জোর বাড়াতে হবে এবং সমস্ত নেতিবাচক চিন্তাধারা এড়িয়ে চলতে হবে | তিনি জানালেন যে ‘মনকথা’ – র পক্ষ থেকে এই সহায়তা দেওয়ার কাজ আগামীদিনেও চলতে থাকবে এবং যারা এই কাউন্সেলিং -এর সুবিধা নিতে চান তারা সরাসরি শ্রীমতি সিনহার সাথে – ৯৯০৩১৯১০৫৭ নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন এবং নিজের সুবিধা মতন সময়ে এই পরিষেবা নিতে পারেন | এই অস্থির পরিস্থিতি আমরা সকলে মিলে নিশ্চয় কাটিয়ে উঠবো এবং আগামীদিনে সুস্থ জীবনযাপন করতে পারব |