মণীশ শুক্লার মৃত্যুর রাজনৈতিক তরজা নিয়ে মেরুকরণের রাজনীতি করা উচিত নয়,মন্তব্য মুহাম্মদ কামরুজ্জামানের

Spread the love

মণীশ শুক্লার মৃত্যুর রাজনৈতিক তরজা নিয়ে মেরুকরণের রাজনীতি করা উচিত নয়,মন্তব্য মুহাম্মদ কামরুজ্জামানের

নিজস্ব সংবাদদাতা:-  ব্যারাকপুরের মণীশ শুক্লার খুনের রাজনৈতিক তরজা নিয়ে মেরুকরণের রাজনীতি করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করলেন সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সম্পাদক মুহাম্মদ কামরুজ্জামান। তিনি বলেন,’সব কিছুতে সাম্প্রদায়িক রং দেওয়ার রাজনীতি কারও কারও অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতি সমাজের জন্য ভয়ঙ্কর। আমরা খুন,হিংসা, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের রাজনীতির তীব্র নিন্দা করি।”
মুহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান,”গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, এটা ব্যক্তিগত রাগের ঘটনা। পুলিশের দাবি, পুরনো শত্রুতার জেরে খুররমই খুনের ছক কষে। পেশায় ব্যবসায়ী খুররম যোগাযোগ করে পেশাদার শুটার গুলাব শেখের সঙ্গে। তদন্তে জানা গিয়েছে, মণীশ-খুররমের পুরনো ব্যক্তিগত শত্রুতা ব্যারাকপুর এলাকায়  অনেক দিন ধরেই চর্চিত। খুররমের বাবা সিপিএম করতেন। তিনিও খুন হন। সেই হত্যাকাণ্ডে উঠে এসেছিল মণীশের নাম। গোয়েন্দাদের দাবি, আক্রোশ মেটাতেই খুন করা হয়েছে মণীশকে।”
তিনি আরও বলেন,”খবরে প্রকাশ,তদন্তকারীদের সূত্রেই প্রকাশ্যে এসেছে বেশ কয়েকটি তথ্য, যা কাকতালীয় ভাবেই জুড়ে যাচ্ছে মণীশ-খুনের তদন্তের সঙ্গে। মণীশের দেহরক্ষী কেন ঘটনার দিন ছুটিতে গেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মণীশ ঘনিষ্ঠেরা জানিয়েছেন, দেহরক্ষী না থাকলে আগে মণীশ নিজের লাইসেন্সড পিস্তল সঙ্গে রাখতেন। রবিবার সেটাও ছিল না। মণীশের সঙ্গীদের দাবি, ছ’মাস আগে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পক্ষ থেকে পিস্তলের লাইসেন্স যাচাই করতে নেওয়া হয়। ওই লাইসেন্সটি ভিন্‌ রাজ্য থেকে ইস্যু করা। পুলিশ লাইসেন্সের বৈধতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এবং যত দিন যাচাই না হচ্ছে তত দিন তাঁর পিস্তল পুলিশের কাছে জমা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়,”
বিজেপিতে যোগদানের আগে অতীতে সিপিএম এবং তৃণমূল, দুই দলের সঙ্গেই যুক্ত ছিলেন মণীশ। পরিচিত ছিলেন ব্যারাকপুরের ‘ত্রাস’ হিসেবে। সেই ব্যারাকপুরেই আততায়ীর গুলিতে লুটিয়ে পড়লেন তিনি।”
কলকাতার মেয়র ও রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্য,”মণীশ বিজেপিতে স্বস্তিতে ছিল না। ও ফের তৃণমূলে ফেরার বার্তা দিয়েছিল। সেই বার্তার কারণেই কি তাকে সরিয়ে দেওয়া হল?” তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘অর্জুন একই গাড়িতে থাকার পর হঠাৎ একা কলকাতার দিকে চলে এল। তারপর কৈলাস বিজয়বর্গীয়র ফোন গেল তাঁর কাছে। আর এরপরই মণীশ খুন হল। এসবের থেকে মূল চক্রান্তকারী কে বা কারা, তা পরিষ্কার।’
যদিও অর্জুন সিং পাল্টা বলেন, ফিরহাদ হাকিমের সময় শেষ হয়ে এসেছে। মেটিয়াবুরুজ থেকে দুষ্কৃতী পাঠিয়ে খুনের রাজনীতি আর চলবে না। মণীশ খুনের প্রতিশোধ হবেই। মানুষই এর প্রতিশোধ নেবে।”
মুহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান,”৫ অক্টোবর এই সময় পত্রিকার অনলাইনে লেখা হয়,”ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের আনাচে কানাচে অনেকেই বলছেন, মণীশ শুক্লা খুনের পিছনে থাকলেও থাকতে পারে পুরনো অঙ্ক। এমনকী এও শোনা যাচ্ছে, বিজেপির সঙ্গে সম্প্রতি দূরত্ব বাড়াচ্ছিলেন মণীশ। সূত্রের খবর এমনও ,মণীশ নাকি সম্প্রতি ফিরতে চাইছিলেন তৃণমূলে। তাতেই কি রোষের মুখে খুন হতে হলো মণীশকে? এমন দাবি শুধু তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম করছেন, তাই নয়। এলাকায় এমন গুঞ্জন বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল।
এদিন ফিরহাদ হাকিম সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘মণীশের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আজকের নয়। অত্যন্ত দুঃখজনক খুন। কিন্তু অর্জুন সিং ওকে গুণ্ডা দিয়ে বিজেিপ করতে বাধ্য করায়। কিন্তু বিজেপিতে আর থাকতে পারছেন না মণীশ। তাই তৃণমূলে ফিরতে চাইছিলেন।’ রীতিমতো অর্জুনের দিকে সন্দেহের আঙুল ঘুরিয়ে দিয়েছেন ফিরহাদ। বলেন, ‘যে সময় ও পার্টি অফিসে এল, তার আগেই কৈলাস বিজয়বর্গীয় জরুরি ফোন করছিলেন অর্জুনকে। এরপরই কলকাতায় চলে এলেন অর্জুন। কী এমন জরুরি ফোন ছিল? ছোটখাটো নেতাদেরও তো বিজেপি সিআরপিএফ দেয়, মণীশকে দিল না কেন? রবিবার সকালে ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের সঙ্গে হাওড়ার পাঁচলায় গিয়েছিলেন মণীশ শুক্লা। তিনি ছিলেন ব্যারাকপুর সংসদীয় এলাকার বিজেপি যুবনেতা। হাওড়ায় দলীয় সভা সেরে অর্জুনের সঙ্গেই এ দিন ফেরেন মণীশ। তিনি টিটাগড়ে নেমে যান। অর্জুন জগদ্দলের দিকে এগিয়ে যান। এরপর অর্জুন কলকাতায় ফিরে আসেন বলে অভিযোগ করেছেন ফিরহাদ হাকিম। এর কিছুক্ষণ বাদেই মণীশ গুলিবিদ্ধ হন। সাধারণত মণীশ শুক্লার সঙ্গে সর্বদাই অন্তত ৭ জন দেহরক্ষী থাকতেন, তার মধ্যে ২ সশস্ত্র। কিন্তু গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময় কোনও দেহরক্ষীই কাছে থাকলেন না কেন, উঠছে সেই প্রশ্ন। এমনকী মণীশ শুক্লার ২ সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীই রবিবার থেকে সাতদিনের ছুটি নিয়েছিলেন। এটা কি নেহাতই কাকতালীয়? উঠছে প্রশ্ন।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.