#মাইগ্রেন#ক্রনিক মাথা ব্যাথা#
স্ব্যাস্থ ডেস্ক .অয়ন বাংলা:- আমি ডাঃ ইয়ার আলী, আজকে মানুষের এমন একটি স্বাস্থ্য-সমস্যা নিয়ে লিখব যে সমস্যাটার ভুক্তভোগী ছিলাম প্রায় ২০০৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত৷ নিজের অভিজ্ঞতা,উপলদ্ধি এবং মেডিক্যাল প্রফেশনাল হিসাবে কনভেনশনাল মেডিকেশনের সীমাবদ্ধতা আমি বলতে পূর্ণভাবে সক্ষম আলহামদুলিল্লাহ৷ পাশাপাশি, এই একটি সমস্যা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন এনেছে—সেটি হল কনভেনশনাল ট্রিটমেন্টের সীমাবদ্ধতা নিয়ে গভীর গবেষণা,অধ্যয়ণ এবং অন্যান্য মেডিক্যাল কমিউনিটি যেমন—আয়ুর্বেদিক,হার্বাল,ইউনানি,হোমিও,এক্যুপ্রেশার,হিজামা,ফুড সায়েন্স, লাইফ স্টাইল প্রভৃতি নিয়ে অধ্যয়ণের পরিবেশ ও বাধ্যতামূলক অবস্থা তৈরী করেছে৷ আমি ব্যক্তিগতভাবে বহু ডাক্তার,স্পেশালিষ্ট দেখিয়ে দেখিয়ে এতটাই বিরক্ত ও হতাশ হয়েছিলাম যে, আমি নিজেই MBBS পাশ করেও যখন সুরাহা খুঁজে পাচ্ছিলাম না,তখন আমার ক্রনিক ইরিটেটিং হেডেক,মাথাভার প্রভৃতির প্রকৃত কারণ ও সমাধান বের করার খোঁজে অন্যসকল মেডিক্যাল ফিল্ডকে ফান্ডামেন্টালি জানলাম,বুঝলাম৷ আরও গভীরভাবে স্টাডি করতে করতে আল্টিমেট নানাবাধা,পথ ও পদ্ধতি অতিক্রম করে প্রায় ৪-৫ বছর পর আল্লাহর রহমতে চিকিৎসা জগতের বহু ভ্রান্ত আক্বীদা,তত্ব আমার সামনে স্পষ্ট হল! উন্মোচিত হল এক অভিনব ,সত্য ও সত্যিকারের ফলপ্রসূ চিকিৎসা জগতের৷ যেখানে হলিস্টিক্যালি পূরো দেহকেই শারিরীক,মানসিকভাবে সমান্তরাল গুরুত্ব ও অনুধাবনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার বিশেষকরে বিভিন্ন ক্রনিক সমস্যা যেমন—ওবেসিটি,গ্যাসের সমস্যা,পেটের সমস্যা,সুগারের সমস্যা,প্রেসারের সমস্যা,থাইরয়ডের সমস্যা,নার্ভের সমস্যা,ব্রেনের সমস্যা,হার্টের সমস্যা,কিডনির সমস্যা,লিভারের সমস্যা, মাংশপেশীর সমস্যা,ব্যাথার সমস্যা,এলার্জির সমস্যা,হাঁপানির সমস্যা,ব্লাডের সমস্যা প্রভৃতি শরীরের যে কোন ক্রনিক সমস্যা সমূহের সত্যিকারের নির্মূলীকরণের চিকিৎসা সম্ভব ৷ দরকার সঠিক জ্ঞান,স্বাস্থ সম্পর্কে সঠিক ধারণা,একটু ধৈর্য ও সময়৷ স্বাস্থ্য-সমস্যার গতিবিধি,অবস্থানকাল প্রভৃতির নিরিখে ৩-১৮ মাস সময় লাগেই ৷
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর অশেষ রহমতে আমার এই প্রতিজ্ঞা ও সংকল্প আমাকে মুক্ত করেছে এই ক্রনিক হেডেক বা মাইগ্রেন থেকে৷ এবং আমি চিকিৎসক হিসাবে বহু রোগীকে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে আল্লাহর ইচ্ছায় সুস্থতা এনে দিতে পেরেছি৷
চলুন, আজকের বিষয়—মাইগ্রেন বা ক্রনিক হেডেক নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক যাতে আপনাদের স্বাস্থ্য সচেতন করার মাধ্যমে কিছুটা উপকার করতে পারি৷ এই বিরক্তিকর ও হতাশাজনক মাইগ্রেন থেকে আমরা নিজেদের মুক্ত রাখতে পারি৷
®সমস্যা বা সিম্পটমসঃ
যে কোন বয়সে মাথা ব্যাথা হতে পারে৷ ছেলেদের থেকে মেয়েদের বেশী হয়(কেন হয় পরে আসছে)৷ তবে, ১৫—৪০ বছরের বয়সে বেশী হয়৷ কারণ, এই বয়সে ট্রিগার ফ্যাক্টরগুলির এক্সপোজে মানুষ বেশী আসে৷ শুধু ভারতেই প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি লোক এই মাথা ব্যাথার সমস্যাই আক্রান্ত হয়৷
কপালের দুই দিকে বা একদিকে প্রচন্ড অসহনীয় দপদপ যন্ত্রনা,মাথার সিঁথিতে ঝিমঝিম করা, কানের পিছনে চাপ ধরে থাকা, চোয়ালের জয়েন্টে চাপ ধরে থাকা, কটকট করা, দুই চোখের মধ্যিখানে কপালে যন্ত্রণা করা, মাথা জ্যাম হয়ে যাওয়া প্রভৃতি হয়৷ ১-৪৮ ঘন্টা স্থায়িত্ব থাকতে পারে৷ সঙ্গে আলোর ঝলকানি,শব্দের ঝনঝনানি,ভিড় অসহ্য লাগে৷ একা একা অন্ধকার ঘরে বুঁদ হয়ে বিনিদ্র পড়ে থাকতে ইচ্ছা করে৷ কারো সাথে কথা বলতে, কোন কিছু চিন্তাভাবনা করতে,কোন কাজ করতে, জার্নি করতে একদমই ভাল লাগেনা৷ বমি বমি ভাব থাকতে পারে৷ অনেক সময়, কানের মধ্যে ঝাঁপ ধরে থাক,কানে সোঁ সোঁ শব্দ করে৷ জীবনটা আরও বিরক্তিময় হয়ে উঠে৷ ইন্টেন্সিটি প্রচন্ড হলে অজ্ঞান বা বেহুঁশও হয়ে যায়৷ দাঁতি লেগে যায়৷ বুক ধড়পড় করে, প্রশ্বাস নিতে বাধক তৈরীর অনুভূতি হয়৷
এছাড়া মাথা ব্যাথা ছাড়াও পেটের সমস্যা,এলার্জির সমস্যা, শ্বাসকষ্টের সমস্যা,ব্রঙ্কাইটিসের সমস্যা,কষ্ঠোকাঠিন্যের সমস্যা, থাইরয়েডের সমস্যা প্রভৃতি যুক্ত থাকতে পারে৷ মুটামুটি প্রায় প্রতিটা পরিবারের ১-২ জন এরকম সমস্যার রোগী বর্তমানকালে পাওয়া যাবেই৷
® প্যাথোলজিক্যাল কারণঃ
১)কনকাশন বা ব্রেন ইনজুরি হলে তার পরবর্তী প্রভাব হিসাবে মাথা ব্যাথা হতে পারে৷ স্কালের উপরে চামড়ার নিচে রক্ত গোটা হয়ে জমে থাকলে মাথা ব্যাথা হতে পারে৷
২)স্ট্রোক হলে ,প্রেশার বৃদ্ধি পেলে ব্রেনের মধ্যে রক্তক্ষরণ বা রক্তপ্রবাহ বন্ধ হলে টিস্যু ইনজুরি হলে বা ইনফার্কশন হলে মাথা ব্যাথা হয়৷ হাইপারটেনশনে স্কালের ভেসেলগুলির টেনশন বাড়লে মাশল বা ফ্যাসার স্ট্রেইন বৃদ্ধি ঘটে এবং মাথা ব্যাথা বৃদ্ধি পায়৷
৩)ব্রেনে টিউমর,ক্যান্সার,সিস্ট,এনিউরিজম প্রভৃতি হলে মাথা ব্যাথা হয়
৪)সার্ভাইক্যাল ভার্টিব্রার প্রথম ও দ্বিতীয় নার্ভের রুট কমপ্রেশন হলেও (C1& C2) মাথার পিছনগুলিতে রেফারিং পেইন হয়৷
৫)ব্রেন এবসেস বা ফোঁড়া হলেও মাথা ব্যাথা হয়৷ মেনিন্জাইটিস হলেও মাথা ব্যাথা হয়
৬)মহিলাদের সিজারের পর পরই ইন্ট্রাক্রেনিয়াল প্রেশার বৃদ্ধি হয় (CSF volume বাড়ার জন্য- অবশের ইন্জেকশনে) ৷ ফলে মাথা ব্যাথা হয়৷
৭)সাইনুসাইটিসঃ মাথার খুলির সম্মুখভাগে যে প্রকোষ্ঠগুলি আছে (ফ্রন্টাল,এথময়েড,স্ফেনয়েড,ম্যাক্সিলারি) সেগুলির ইনার লেয়ারে বা মিউকাস লিয়ারে ক্রনিক বা এক্যুট অন ক্রনিক ইনফ্লামেশন হলে মাথা ব্যাথা হয়৷ এক্ষেত্রে, মিউকাস লেয়ারে বিভিন্ন বায়বীয় জীবাণু,ধুলিকণা,কেমিক্যালস,স্মেলস, বা গন্ধ প্রভৃতি জমা হয়৷ উপরন্তূ,আগে থেকেই ঐ প্রকোষ্ঠে স্ট্রেপটোকক্বাই গ্রুপের ব্যাকটিরিয়া,এপ্সটেইন বার ভাইরাস ,সিন্জলস ভাইরাস থাকলে জীবাণুগুলির প্রলিফারেশন বৃদ্ধি পায়৷ এক্ষেত্রে, রোদ,ধূলা,বাতাস- ব্যাথা বদ্ধি ঘটায়৷ সাইনাসগুলির ইনফেকশন ও ইনফ্লামেশনে চোখের কোনে,কপালে,নাকের পাশে গালে ব্যাথা হয়৷ নাক বন্ধ হয়ে যায়৷ মাথার সামনের অংশ ভার হয়ে থাকে৷
৮)ইনসমনিয়া বা নিদ্রাহীনতাঃ যে সকল লোকেদের ঘুমের কুয়ালিটি ও পরিমাণ কম বা ভাল হয় না তাদের হেডেক বৃদ্ধি পায়৷ ব্লাডে মেলাটনিন লেবেল কমে যাওয়ার জন্য৷ ইমিউনিটি কমে যাওয়ার জন্য৷ বিভিন্ন ভাইরাল ওয়েষ্ট বৃদ্ধি ও নিউরোটক্সিন বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য৷
৯)বেল্স পলসিঃ এপ্সটেইন বার ভাইরাস +/_ সিন্জলস ভাইরাস অত্যাধিক হারে বৃদ্ধি পেলে বা অনুকূল পরিবেশ পেলে ব্রেন থেকে মাথার খুলির যে ছিদ্র দিয়ে (স্টাইলোম্যাষ্টয়েড ফোরামেন) ক্রেনিয়াল নার্ভ সপ্তম বা ফেসিয়াল নার্ভ নির্গত হয়,সেই ছিদ্রের স্থলে (লোয়ার মটর টাইপ) নার্ভটি প্রচন্ড ইরিটেট বা ইনফেকশনে ইনফ্লামেশন হয়ে গেলেঅনার্ভটি ফুলে গিয়ে ঐ ছিদ্রতে টাইট বা আবদ্ধ হয়ে যায়৷ তখন ব্রেন থেকে ফেসিয়াল নার্ভে মটর একটিভিটি প্রোপারলি প্রোপাগেট করেনা৷ ফলে, মুখমন্ডলের একদিকে ( যেদিকে ইনফেকশন হবে) প্যারালাইসিস হয়ে যায় যেটা ০-৪৮ ঘন্টার মধ্যে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে৷ চোখের পাতা বন্ধ করতে অক্ষমতা, মুখের ভাঁজ,হাঁসি বেনিয়ম হয়৷ মুখ একদিকে বেঁকে যায়৷ নার্ভের ফুলাটা কমার সাথে সাথে বেলস্ পল্সি কমতে শুরু করে৷ সেটা সপ্তাহ থেকে ৬ মাস লাগতে পারে৷ এক্ষেত্রেও, চোয়ালের জয়েন্টে ব্যাথা হয়৷কানের পিছনে ব্যাথা হয়৷ মাথা ব্যাথা হয়৷
১০)ডিএনএস( DNS): ডেভিয়েটেড ন্যাসাল সেপটাম বা নাকের মধ্যিখানের হাড়টি একদিকে ( সাধারনতঃবাঁমদিকে) অত্যধিক বাঁকা থাকলে—দুই নাকের ছিদ্র দিয়ে সমান হারে প্রশ্বাস-নিশ্বাস হয় না৷ ফলে, ন্যাসাল টার্বিনেট হাইপারট্রফি হয়৷ একদিকের সাইনাসগুলিতে বেশী বায়ু প্রবাহিত হয়৷ অন্যদিকে কম৷ এরকম অসামন্জস্য বায়ুপ্রহাহের জন্য যে দিকে হাড় বেশী বাঁকা ঐ দিকের সাইনাসগুলিতে জীবাণুগুলির অনুকুল পরিবেশ তৈরী হয়৷ সাইনাসের সমস্যা তৈরী হয়৷ মাথা ব্যাথা হয়৷
১১) রেপ্রডাক্টিভ এজের মহিলাদের মাথা ব্যাথা একটু বেশী হয়৷ কারণ, মহিলাদের প্রজনন তন্ত্রের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে মাসে দুই বার ( অভুউলেশনের সময়, মাসিকের সময়) ইস্ট্রোজেন,প্রজেষ্টেরন,LH,FSH প্রভৃতি হরমোনের ফ্লাকচুয়েশন হয়৷ যে কোন হরমোনই মূলগতভাবে স্টেরয়েড৷ আর স্টেরয়েড সর্বদা বিভিন্ন জীবাণুর বিশেষকরে ভাইরাসের অতি উত্তম খাদ্য ও পুষ্টি৷ ফলে, মহিলাদের মাসিকের সময় বা আগে পরে মাথা ব্যাথা বাড়ে৷
১২)স্ট্রেস বা কাজকর্মের চাপ,মানসিক চাপঃ স্ট্রেস সর্বদা সুপ্রারেনাল গ্লান্ড থেকে এপিনেফ্রিন বা এড্রিনালিন সিক্রেশন বাড়িয়ে দেয়৷ ক্রনিক স্ট্রেসে এই এড্রিনালিন এক্সজষ্টেড হয়ে যায়৷ করোসিভ ও ক্ষতিকর এড্রিনালিন সিক্রেশন করে৷ আর এড্রিনালিনও হরমোন৷ অতএব, মাথা ব্যাথা বা মাইগ্রেনের মূল কালপ্রিট এপস্টেইন বার ভাইরাস বা সিন্জলস ভাইরাস বৃদ্ধি হবে৷ ট্রাইজেমিন্যাল ,ভেগাস বা ফ্রেনিক নার্ভে ইনফেশন ও ইনফ্লামেশন বৃদ্ধি পাবে৷ এবং শেষমেষ, মাথাব্যাথা বাড়বে৷
১৩)বিভিন্ন স্মেলস বা গন্ধ বা আলোর রশ্মিতে নার্ভটি অভারস্টিমুলেট হয়৷ কারণ, অলরেডি ইনফ্লেমড নার্ভ গন্ধের কেমিক্যাল বা আলোক রশ্মিতে অতি উত্তেজিত হয়ে যায়৷ ফলে, মাথা ব্যাথা বাড়ে৷
১৪)পেটের গ্যাসঃ লিভার থেকে নিঃসৃত বাইল এসিডের কোয়ালিটি ও কোয়ান্টিটি নিম্নমানের হলে পেটে অপাচিত খাবারে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত বিভিন্ন ব্যাক্টিরিয়া দ্বারা যে এমোনিয়া গ্যাস ফর্ম করে সেটি ইন্টেস্টিনাল ওয়াল পারমিয়েট করে ক্রেনিয়াল নার্ভ গুলি উত্তেজিত করে৷ তখন,মাথা ব্যাথা হয়৷
® প্যাথোফিজিওলোজিঃ
A)১,২,৩,৪,৫,৭,১০ পয়েন্টে উল্লখিত কারণগুলি CT scan বা MRI of Brain করে প্যাথোলজি চেনা যায়৷ ইটিওলোজি ভিন্ন ভিন্ন থাকতে পারে৷
B) ৬,৮,১১,১২,১৩,১৪ পয়েন্টের ক্ষেত্রে, কোন রিপোর্টেই প্রবলেম পাওয়া যায়না৷ বা রিপোর্টের রেন্জ সেই সমস্যা ধারণ করতে সক্ষম নয়৷
মাইগ্রেনে ক্রেনিয়াল নার্ভ বিশেষ করে ট্রাইজেমিন্যাল নার্ভ (কখনও কখনও ভেগাস নার্ভ ও ফ্রেনিক নার্ভ) বিভিন্ন স্ট্রেইনের( ৬০ ধরণের) এপস্টেইন বার ভাইরাস , বিভিন্ন স্ট্রেইনের সিন্জলস (৩০ ধরণের) ভাইরাস দ্বারা ইনফেক্টেড হয়৷ ইনফ্লামেশন হয় ৷বিভিন্ন ইমিউনোলজিক্যাল রিয়াকশন হয়৷ বিভিন্ন ইমিউনোলজিক্যাল রিয়েজেন্ট বিশেষ করে হিষ্টামিন প্রচুর তৈরী হয়৷ দুই রকম ভাইরাস একসঙ্গেও থাকতে পারে৷ অধিকাংশ ক্ষেত্রে, কো-ফ্যাক্টর হিসাবে স্ট্রেপটোকক্বাই ব্যাকটিরিয়া থাকেই৷ দেহের মধ্যে, ব্লাডে বা লিম্ফে বা বিভিন্ন টিস্যুতে,সাইনাসে,অর্গানে হেভি মেটাল থাকলে জীবাণুগুলি আরও শক্তিশালী হয়৷ হেভি মেটাল ও ভাইরাল ওয়েষ্ট মেটারে কম্বাইন্ড করে বিভিন্ন যৌগ তৈরী হয়৷ যেগুলি প্রচন্ড নিউরোটক্সিক৷ এই নিউরোটক্সিন বেশী হলে আরও বেশী বেশী মাথা ব্যাথা হয়৷ ভেগাস নার্ভ,ফ্রেনিক নার্ভ উত্তেজিত হলে প্রশ্বাসে কষ্ট,প্যালপিটেশন, বুক ধড়পড়, হিচকি প্রভৃতি হতে পারে৷ অনেক সময় মূর্ছাও যেতে পারে৷
তাহলে, মূল কারণ দুটি
১> EBV & Shingles Virus
২>Heavy Metals( Mercury, Copper,Aluminium,Arsenic, Lead,Cadmium etc)
® ডায়াগনোসিসঃ সিম্পটমস দিয়েই অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি নির্ণয় করা সম্ভব৷ এবং রোগী নিজেই বুঝতে পারবেন৷ A পয়েন্টে উল্লেখিত কারণগুলি ডায়োগনোস করতে CBC,Lipid profile,ECG,TSH,LFT, CSF study,CT scan or MRI of brain করতে হতে পারে৷
B পয়েন্টে উল্লেখিত কারণগুলি সিম্পটমস ও সাইন দ্বারা নির্ণয় সহজ৷ বিশেষ কোন রিপোর্টের প্রয়োজন নেই৷
মাইগ্রেনের ক্ষতিকর প্রভাবঃ ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত জীবনের শারিরীক সমস্যা তো হচ্ছেই! উপরন্তূ, পরিবারে নানা কাজে,ছেলে মেয়েদের সঠিকভাবে দেখাশুনা করা,প্রতিপালন করা,পড়াশুনা করানো প্রভৃতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই মাইগ্রেনের জন্য৷ ভূক্তভোগী নিজেকে হতাশায় এমনভাবে ডুবিয়ে দেয় যে অনেক সময় ডিপ্রেশন,এনজাইটি চরমে যায়৷ এমনকি আত্মহত্যার প্রবণতাও তৈরী হয়৷ আবার,বিভিন্ন কম্পানী বা চাকরীর ক্ষেত্রে এই মাথা ব্যাথার সমস্যা বহুল ক্ষতি করে৷ অনেকের জব চলে যায়৷ ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের পড়াশুনা ঠিকমত করতে পারেনা৷ রেজাল্ট খারাপ করে৷ জীবনের বহু লক্ষ্য ও টার্গেটকে হাতছাড়া করতে হয় শুধুমাত্র এই মাথা ব্যাথার জন্য৷
রোগটি রোগীকে মারেও না অথচ সুস্থভাবে ,শান্তিপূর্ণ,পূর্ণ সক্ষমতার জীবনোপভোগ করতেও দেয় না৷
চিকিৎসাঃ
A পয়েন্টে উল্লেখিত বিভিন্ন কারণগুলি অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে৷ এক্ষেত্রে, কনভেনশনাল ট্রিটমেন্ট বেশ কার্যকরী৷
এমার্জেন্সি হলে হাসপাতালে ভর্তি করে প্রোপার ট্রিটমেন্ট করতে হবে৷
সাইনুসাইটিসঃ এক্যুট —
1) Tab. Amoxycillin+Clavulanic acid
2)Tab. Anti histamine
3) Mucolitic
4)Menthol inhalation with steam
5)Tab. Paracetamol or Diclofenac
6)Lemon Balm or Licorice Root
©©©ক্রনিক—সাইনুসাইটিস ও মাইগ্রেন©©©
১) মিউকাস ফর্মিং খাবার দুধ ও দুধজাতীয় সকল খাদ্য দ্রব্য খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে৷
২)ভাইরাল ফুয়েল ও ডাইজেষ্টিভ HCL lowering agent ডিম খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে৷
৩)গ্লুটেন (গমজাতীয় দ্রব্য,বার্লি,রাই প্রভৃতি) যেটি হিষ্টামিন বৃদ্ধি করে,ইমিউনিটি দূর্বল করে এবং মাইগ্রেনকে বৃদ্ধি করে৷ এই জাতীয় খাদ্য বাদ দিতে হবে৷
৪)মাংস-যে কোন মাংসই ডাইজেষ্টিভ সিস্টেমকে দূর্বল করে,প্রচুর এমোনিয়া তৈরী করে৷ এগুলি বাদ দিতে হবে৷
৫)ফার্মেন্টেড ফুড-যেমন বিভিন্ন আচার, বাসি ভাত, বা ভিনেগার মিশ্রিত খাবার খেলে খাদ্যনালীতে pH কমে যায়৷ পূরো বডিকে, ব্লাডকে এসিডিক করে৷ যা মাইগ্রেন ট্রিগার করে৷ এগুলো বাদ দিতে হবে৷
৬)লবন-টেবল সল্ট মাইগ্রেন ট্রিগার করে৷
৮)তেল-ক্যানোলা,কর্ন,কটনসিড,পাম ,সানফ্লোয়ার বা যে কোন সাদাতেল প্রচন্ড ইনফ্লামেটরি৷ মাইগ্রেনকে ট্রিগার করে৷ এগুলো বাদ দিতে হবে৷ বেষ্ট হল হিলিং অয়েল যায়তুন বা পারতঃপক্ষে খাঁটি শরসার তেল ব্যবহার করতে হবে৷
৯)এডিটিভস-বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাবারে ব্যবহৃত আর্টিফিসিয়াল ফ্লেভার বা কালার হিসাবে MSG ,Aspertame থাকেই থাকে৷ বিভিন্ন হোটেল বা রেষ্টুরেন্টে MSG ব্যবহৃত হয়ে থাকে -রান্নাকে সুস্বাদু করতে৷ এগুলো প্রচন্ড নিউরোটক্সিক৷ মাইগ্রেন ট্রিগার করে৷ এগুলো বাদ দিতে হবে৷
১০)মদ বা এলকোহল-প্রচন্ড ডিহাইড্রেটিং এবং লিভারকে খুবই স্ট্রেঈনড করে৷ মাইগ্রেন ট্রিগার করে৷ বিভিন্ন নেশার মধ্যে থাকা বিষ বা হেভি মেটালসও মাইগ্রেন ট্রিগার করে৷ ধূমপাণে নিকোটিন সাময়িক ভ্যাসোডাইলেশন করে বলে কিছুক্ষণের জন্য মাথা ব্যাথা কমে বটে৷ তবে এড্রিনালিন বৃদ্ধি করে বলে আবার কিছুক্ষন পর আরও বেশী মাথা ব্যাথা শুরু হয়৷ এগুলো বাদ দিতে হবে৷
১১)চকোলেট-খুবই এগ্রেসিভভাবে নার্ভকে উত্তেজিত করে৷ মাইগ্রেন ট্রিগার করে৷ অনেক ক্ষেত্রে, ক্যাফেইনের জন্য সাময়িক মাথাব্যাথার স্বস্তি হলেও স্থায়ি হয়না৷ বরং নিকোটিনের মতই আবার মাথা ব্যাথা শুরু হয়৷
১২)হিলিং ফুড-ফ্রেশ সেলেরি জ্যুস,ধনে পাতার জ্যুস,পেপে,লঙ্কা,লবঙ্গ,দারুচিনি,রসুন,আদা,আপেল, প্রভৃতি বেশী বেশী খাদ্যতালিকায় এড করতে হবে৷
১৩)ম্যাগনেশিয়াম খেতে হবে৷
১৪)ভিটামিন C বেশী খেতে হবে৷
১৫)Lemon Balm – anti viral and nerve soothing.
১৬)জিঙ্ক ও বি ২ ভিটামিন
১৭)Licorice Root- Anti viral and anti bacterial
১৮)Spirulina
heavy metals remover
১৯)হেভি মেটালস ডিটক্সিফিকেশন
২০)হিজামাঃ পেইনফুল এরিয়াতে বিশেষ করে কপালের দুই সাইডে,মধ্যিখানে,মাথার সিথিতে হিজামা করলে ব্লাডে,লিম্ফে,নার্ভে জমে থাকা ইনফ্লামেটরি রিয়েজেন্ট,ভাইরাস,ভাইরাল ওয়েষ্ট,নিউরোটক্সিন ইমেডিয়েট বের করা যায়৷ ফলে,ব্যাথা সঙ্গে সঙ্গে অনেকটা উপশম হয়৷ তাছাড়া , সকল চিকিৎসা ও নিয়মের পাশাপাশি হিজামা করলে হিলিং দ্রুত হয়৷ অনেক কম সময়ে সুস্থ হওয়া যায়৷
২১) এক্যুপ্রেশার পয়েন্টে চাপ দিলেও পেইন মডিউলেশন হয় এবং পেইন গেট ওয়েতে ইনহিবিটরি একশনে সাময়িক উপশম হয়৷ ম্যাসেজ এও একইভাবে কাজ করে৷ তাছাড়া লোকাল সার্কুলেশন ভাল হয় বলে কিছুটা ব্যাথার উপশম হয়৷
উপরোক্ত সকল পদ্ধতি ও নিয়ম মেনে চললে, যত দিনেরই মাইগ্রেন হউক না কেন -ইনশাল্লাহ ১-৬ মাসের মধ্যে নির্মূল হয়ে যাবে৷
২১) এছাড়া, সিম্পটোম্যাটিক ট্রিটমেন্ট হিসাবে—
॰Flunarizine
॰Amytryptalline
॰Paracetamol
প্রভৃতি ব্যবহার করা যেতে পারে৷
বিঃদ্রঃ—আমার জানা মতে, অনেকেই মাথা ব্যাথা হলেই সেরিডন বা এই জাতীয় ঔষধ খেয়ে অভ্যস্ত থাকে৷ এতে ক্যাফেইন থাকে৷ মাথা ব্যাথা কিছুক্ষন বা একদিনের জন্য কমলেও সমস্যা আরও জটিল হয় এবং বহু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়৷ অতএব, এগুলো এড়িয়ে চলবেন অবশ্যই৷
আশা করি আপনাদের বুঝাতে পেরেছি৷ সকলকে আল্লাহ সুস্থ রাখুক৷ স্বাস্থ্য সম্পর্কে সকলকে সঠিক জ্ঞান ও বুঝ দান করুক৷
লিখনে—Dr. Md Year Ali Sk
Medical Officer ( WBHS)
MBBS( WBUHS),
MD in Alternative medicine ( non MCI)
Holistic Medical Practitioner