মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণ নোবেলজয়ী অথনীতিবিদ অভিজিৎ এর ” এনআরসি এক ভয়াবহ জুয়া, মোদি সরকারকে তীব্র আক্রমণ”

Spread the love

নিউজ ডেস্ক:- সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং নাগরিকপঞ্জি ও এনআরসি নিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মন্তব্যকে সমর্থন করলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ–‌দম্পতি অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জি ও এস্থার ডুফলো। নরেন্দ্র মোদি সরকারের এনআরসি এবং সিএএ–‌‌কে ‘‌ঝুঁকিপূর্ণ জুয়া’‌র মতো মারাত্মক বলে মনে করছেন তাঁরা। একটি ইংরেজি দৈনিক সংবাদপত্রে নিবন্ধ লিখে বিতর্কিত সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে মত প্রকাশ করেছেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির এই দুই অধ্যাপক।
দেশে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি–‌‌র বিরুদ্ধে প্রথম সরব হয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। পরে তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করেছেন আরও অনেক রাজনৈতিক দল ও কয়েকটি রাজ্য। অভিজিৎ ও এস্থারের প্রকাশিত নিবন্ধ সম্পর্কে তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘‌বিশ্ব সমাদৃত অর্থনীতিবিদরা কার্যত মমতা ব্যানার্জি এবং তৃণমূলের মতকে সমর্থন করেছেন। এটা আনন্দের। গর্বের। ওঁদের ধন্যবাদ। আমরা মনে করছি, স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে আমরা ঠিক পথেই চলছি।’‌
নাগরিকত্ব প্রমাণে সঠিক তথ্য এবং নথি জোগানের প্রশ্নে আলোকপাত করে নিজেদের লেখায় অভিজিৎ ও এস্থার একটি উদাহরণ টেনে এনেছেন। লিখেছেন, কোনও এক সমীক্ষায় দক্ষিণ ২৪ পরগনায় এক কুড়ি বছর বয়সি মেয়েকে তাঁর জন্মস্থান জিজ্ঞেস করায় মেয়েটি দীর্ঘ উত্তর দিয়েছিল। কোন গ্রামে তাঁর জন্ম বোঝাতে বহু বিবরণের পর মেয়েটি বলেছিল, ‘‌আমার মা জানতেন। কিন্তু, তিনি মারা গেছেন।’‌ অবশেষে সমীক্ষার ফর্মে ‘‌তথ্য জানা যায়নি’‌ লিখতে হয়েছিল তাঁকে। অভিজিতের মতে, এনআরসি এই মেয়েটির কাছে তাঁর নাগরিকত্বের প্রকৃত প্রমাণ আশা করছে। তিনি তা দিতে না পারলে অনুপ্রবেশকারী। দোষী। দেশহীন। অন্য সব ধর্মের মানুষের জন্য সিএএ এনেছে সরকার। কিন্তু, এই মেয়েটি মুসলিম হলে তিনি বাদ!‌ এই ধরনের উদ্যোগ ঝুঁকিপূর্ণ জুয়া খেলার মতোই মারাত্মক বলে মনে করছেন তাঁরা।

এই দুই ইস্যুতে মোদি সরকারের ‘‌ন্যূনতম শাসন ও অধিকতর প্রশাসন’‌ স্লোগানের বাস্তবায়ন নিয়েও খোঁচা দিয়েছেন অভিজিৎ ও এস্থার। তাঁদের মতে, এনআরসি–‌‌র নথির জন্য সাধারণ মানুষ নাজেহাল হলে তা আর ন্যূনতম নয়, অধিকতর শাসনে পরিণত হয়। মনে রাখতে হবে, ২০১৪ সালে এই স্লোগানকে সামনে রেখেই ক্ষমতায় এসেছিল মোদি সরকার। তাঁরা মনে করছেন, সরকার চাইলেই এ নিয়ে বিতর্ক বন্ধ করতে পারে। কিন্তু, তা করা হচ্ছে না।
তাঁরা ব্যাখ্যা দিয়েছেন, অসম এবং ভারতের অন্যত্র সিএএ এবং এনআরসি–‌‌র তফাত। বলেছেন, অসমে সমস্যা ভিন্ন। যুক্তিগত সিদ্ধান্ত হিসেবে সেখানে জাত, ধর্ম নির্বিশেষে শরণার্থীদের সমস্যা বলে ধরা হয়। তাই সেখানে সিএএ অভিশাপ। এবং আশা অনুযায়ী যথার্থ সংখ্যক বিদেশি খুঁজে বের করতে না পারায় এনআরসি নিন্দনীয়।
তাঁদের সাম্প্রতিক লেখা বই ‘‌গুড ইকনমিক্স ফর হার্ড টাইমস’‌–‌‌এর উল্লেখ করে তাঁরা লিখেছেন, ‘‌যথেস্ট প্রমাণ মিলেছে যে, নিম্ন আয়ের অদক্ষ শরণার্থীরা নিম্ন আয়ের অদক্ষ ভারতীয়দের জন্য কখনওই ক্ষতিকারক নয়। বরং তারা কাজের সন্ধানে থাকবে। যা আয় করবে, তা ব্যয় করবে। প্রকৃত আর্থিক চ্যালেঞ্জ হতে পারে মধ্যবিত্তরা। তারা চাকরির সন্ধান করবে। কিন্তু, ভারতে চাকরি কোথায়?‌ ভারতীয় রেলে ৬৩ হাজার সাধারণ পদে চাকরির জন্য প্রায় দু’‌‌কোটি চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেছেন। এ থেকেই প্রমাণ হয় আমরা ভুল পথে চলেছি। এটাই খারাপ শাসনের উদাহরণ।’‌
নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনে হিন্দু–‌‌সহ ছ’‌‌টি দেশের শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হলে শ্রীলঙ্কার হিন্দু তামিল এবং পাকিস্তানের আহমেদিয়া মুসলিমরা বাদ যাবেন কেন, সেই প্রশ্ন উসকে দিয়েছেন দুই নোবেলজয়ী। সেইসঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‌যারা এ দেশের জাতীয় মিশনে শামিল হওয়ার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক, মুক্তমনা, সহনশীল এবং একাত্ম হতে চান, তাদের জন্য দেশের দরজা কেন খোলা হবে না?’‌
এদিকে, সিএএ এবং এনআরসি ইস্যুতে আন্তর্জাতিক স্তরে চাপের মুখে পড়েছে মোদি সরকার। এই প্রসঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার জানিয়েছেন, ‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন এবং এনআরসি নিয়ে ‌আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। সরকার বোঝাচ্ছে অন্য দেশ থেকে আসা নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দিতেই এই আইন। কারও নাগরিকত্ব কেড়ে নিতে নয়। তাছাড়া সংবিধানের কাঠামোয় কোনও আঘাত করা হচ্ছে না।’‌ তিনি জানিয়েছেন ক্যা–‌‌র বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জেরে গত মাসে গুয়াহাটিতে স্থগিত হয়ে যাওয়া ভারত–‌‌জাপান শীর্ষ বৈঠক খুব শিগগিরই আবার হবে।

সৌজন্য:- আজকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.