করোনা আবহে ঈদে শিশুদের জন্য প্রকাশিত হলো মোকতার হোসেন মন্ডলের ‘শিমুল ফুলের মাইক’

Spread the love

করোনা ভাইরাসের মধ্যেই ঈদে শিশুদের জন্য প্রকাশিত হলো মোকতার হোসেন মন্ডলের ‘শিমুল ফুলের মাইক’

নিজস্ব সংবাদদাতা,কলকাতা:

করোনা ভাইরাসের মধ্যেই পবিত্র ঈদুল আজহায় শিশুদের জন্য প্রকাশিত হলো কবি ও সাংবাদিক মোকতার হোসেন মন্ডলের ‘শিমুল ফুলের মাইক’ নামে একটি কাব্য। লকডাউনের এই সময় অনলাইনেই পড়া যাবে বইটি। কাব্য জুড়ে শিশুদের সাহস আর উৎসাহ দেওয়া হয়েছে। কখনো শিশুরাই নেতৃত্ব দিচ্ছে তো কখনো তারা পাড়া জাগিয়ে তুলছে। ৫২টি কবিতা নিয়ে শুক্রবার প্রকাশিত হয়েছে ‘শিমুল ফুলের মাইক’। কবি মোকতার হোসেন মন্ডল জানান, ‘বাংলা সাহিত্যে শিশুদের জন্য কবিতার অভাব নেই। শিমুল ফুলের মাইকে শিশুরাই এগিয়ে এসেছে দেশকে নেতৃত্ব দিতে। একটার পর একটা কুসংস্কারের বাঁধ ভেঙে সবাই বীরসা- ভগৎ সিং- আস্ফাকুল্লাহ, নেতাজি,তিতুমীর হয়ে উঠছে। ওদের নিজের ভবিষ্যত জীবন ওরা তৈরি করছে ভালোবাসা দিয়ে।’
‘খুকির বিয়ে’, ‘আমরা হই আমড়া’,’তোমার জগৎ পূর্ণিমা চাঁদ’, ‘আস্ফাকুল্লাহর রক্ত’, ‘মজাক মজাক যুদ্ধ’, ‘নতুন বিশ্ব জয়ের স্বপ্ন’,’সোনামনি লড়ছে’, সহ ৫২ টি বাছাইকৃত কবিতা কাব্যটিতে স্থান পেয়েছে।
মোকতার হোসেন মন্ডল কাব্যটি অনাথ শিশুদের জন্য উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু কেন কাব্যের নাম ‘শিমুল ফুলের মাইক’?
কবি জানান,’তারিখ ঠিক মনে নেই। সাল ২০১৮। একদিন আমার বাড়ির কাছে আমবাগানের ধারে বিকেলে জনা চল্লিশ ছোট ছোট ছেলেমেয়ে সভা করছে। পাটকাঠির মাইক্রোফোন এবং ছেঁড়া বস্তা সুতোর তার। বনের বিভিন্ন ফুল দিয়ে পাটকাঠির ছাউনিহীন স্টেজ সাজানো হয়েছে। একটার পর একটা ছেলেমেয়ে সেই খড়ির মাইক্রোফোনে কবিতা, ছড়া, গজল, ক্বেরাত, সংগীত বলছে। কোনও হৈচৈ নেই। সবাই যেন নিজেদের ‘দায়িত্ব’ পালন করছে। পাশেই দেখলাম কিছু মধ্যবয়স্ক, অতি বয়ষ্ক মানুষ। তারা শিশুদের সভা দেখছে। এইসব শিশুরাই অনেক দিন আগে কুড়িয়ে আনা শিমুল ফুলের মাইক করে বস্তার সুতোর তার লাগিয়ে গাছতলায় সভা করেছে।
মোকতার হোসেন মন্ডল আরও জানান,১৮ জুন ২০১৮। দুপুরের খাওয়া শেষ হয়নি। হটাৎ মাইক বেজে উঠলো। শুরু হল সংগীত-‘শিক্ষার আলো জ্বেলে দাও’। জানতে পারলাম, এক সময় যেসব শিশু শিমুল ফুলের মাইকে সভা করেছিল, আজ তারাই একটু বড় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করছে। পনেরো ষোলো বছরের কিছু ছেলে নিজেদের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে আর এলাকার কিছু লোকের কাছ থেকে চেয়ে নাকি সভা করছে। সঞ্চালক, পরিচালক, সভাপতি সব্বাই কিশোর। মাইক থেকে গ্রামের কিছু লোককে সভায় আসার জন্য ডাকা হল। আমার নাম ধরে বারবার ডাকার পর সভা স্থলে এলাম, তবে দেরিতে।’
তিনি আরও বলেন,’ তখন বিকেল বেলা। একদিন যেখানে শিমুল ফুলের মাইকে অনুষ্ঠান হয়েছিল, আজ সেখানে পাঁচটি টিনের মাইক, দুটি বড় বক্স! একটা স্টেজ হয়েছে কিছু কাঠের চৌকি, টেবিল আর বাড়ির মায়েদের পরা রঙিন কাপড় দিয়ে। প্রায় চার শতাধিক লোক। হাঁড়িভাঙা, সংগীত, তাৎক্ষণিক বক্তব্য, কবিতা আবৃত্তি, দড়িটানাটানি সহ নানা খেলা। জানতে পারলাম শিশুরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বয়ষ্ক লোকদের জন্য মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা হবে।
সেদিন খুব গরম। অনুষ্ঠান মঞ্চে একটু থেকে বাড়ি চলে এলাম। এই নিয়ে নাকি শিশুদের কী রাগ! ‘আমরা ছোট বলে মোকতার ভাই গুরুত্ব দিল না’।
মাইকে আবার নাম ধরে ডাকা হল। সন্ধ্যায় তাই ফের এলাম। দেখি আশপাশের গ্রাম থেকে প্রায় হাজার দুই লোক এসেছে। বহু মহিলাও বাড়ির ছাদের উপর থেকে শিশুদের অনুষ্ঠান দেখছে। খেলায় যারা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছে তাদের পুরস্কৃত করা হয়।
আমাকে বক্তব্য দিতে বলা হল। সেদিন শিশুদের সৃজনশীলতা দেখে মনে হয়েছে, আমাদের মতো লোকেরা ওদের তেমন কিছু দিতে পারেনি। এলাকায় সুস্থ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার দায়িত্ব আমাদের ছিল, আমরা তা করিনি। নিজের দায়িত্ব ভুলে শুধু লোকের ভুল ধরেছি, অন্যের সমালোচনা করেছি, আর আজ এই শিশুরা বড়দের দায়িত্ব পালন করছে! নীরবে সমাজের জন্য শুধু নিজের কাজটা কিভাবে করে যেতে হয় শিশুদের কাছ থেকে ফের শিখলাম। জানলাম- হাতের কাছে যা পাওয়া যাবে তাই নিয়ে সমাজের জন্য কাজ করতে হয়। শিশুদের অনুষ্ঠান হলেও সেদিন আমি ২০ মিনিট বক্তব্য দিয়েছি শুধু বড়দের উদ্দেশ্যে। আর অনুষ্ঠানের আয়োজক আগামীর নবজাতকদের কথা দিয়েছিলাম- ‘তোমাদের জন্য একটা কাব্য লিখবো- শিমুল ফুলের মাইক।’
কবি আরও জানান,’কথা দিলাম কিন্তু আজকাল করতে করতে লিখতে অনেকটা দিন দেরি হয়ে গেল। তবে করোনা ভাইরাসের দুর্যোগের লকডাউনের মধ্যে হাতে অনেক সময় চলে এলো। এই সময় খবরের মাঝে মাঝে চলতে থাকে শিমুল ফুলের মাইক লেখা।’

কিন্তু শিমুল ফুলের মাইকের সব কবিতা কী লকডাউনেই লেখা? মোকতার হোসেন মন্ডলের জবাব,’এই কাব্যের বেশ কিছু ছড়া আমার ছোটকালের লেখা। ‘পাশ্চাত্য আমার বন্ধু’ ,’দুই হাজার একুশ’ সহ অন্য বইগুলো লেখার মাঝে মাঝে যেসব কবিতা লেখা হয়েছে, তার কিছু কবিতা এই কাব্যে স্থান পেয়েছে। তবে ২০১৮ সালে শিশুদের কাছে দেওয়া আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার তাগিদে স্বাভাবিক ভাবে অনেক কবিতা এখানে জায়গা করে নিয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিও শিশুদের ভাষা হয়ে উঠে এসেছে। কিন্তু ‘শিমুল ফুলের মাইক’ যাদের জন্য লেখা আমাদের ঘরের সেই শিশু কিশোররা যদি কাব্যটি পড়ে নতুন ভাবনার স্বাদ পায় তবে সেটাই হবে আমার লেখার অন্যতম সার্থকতা।” কাব্যটি এই সাইটের ই-বুক বিভাগে পড়তে পারেন- https://www.moktertoday.com/418/

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.