আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ – সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামীকে গ্রেফতার করল মুম্বই পুলিশ
নিউজ ডেস্ক :- দু’বছরের পুরনো মামলা। ঋণ শোধ না করা এবং আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ। আর তাতেই সাংবাদিক অর্ণব গোস্বামীকে (Arnab Goswami) একপ্রকার টেনে-হিঁচড়ে থানায় নিয়ে গেল মহারাষ্ট্র সিআইডি। সূত্রের খবর, রিপাবলিক টিভির এডিটর-ইন-চিফকে গ্রেপ্তার করেছে মুম্বই পুলিশ।
ঋণ শোধ না করা এবং আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করা হল রিপাবলিক টিভির সম্পাদক অর্ণব গোস্বামীকে। বুধবার সকালে মুম্বইয়ে তাঁকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে আলিবাগ থানার পুলিশ।
জানা গেছে, বুধবার সাতসকালে কোনওপ্রকার আগাম নোটিস ছাড়াই অর্ণবের বাড়িতে হানা দেয় মুম্বই পুলিশের একটি বড়সড় দল। সিআইডি এবং মুম্বই পুলিশের ১০-১২ জন আধিকারিক অর্ণবের বাড়িতে প্রবেশ করে। বাকি অন্তত ৪০-৪৫ জন পুলিশ আধিকারিককে দেখা যায় তাঁর বাড়ির বাইরে অপেক্ষা করতে। এর কিছুক্ষণ পর দেখা যায় অর্ণবকে একপ্রকার টানতে টানতে থানায় নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। রিপাবলিক টিভির দাবি, অর্ণবকে একপ্রকার জোর করে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরও অভিযোগ, তাঁর শ্বশুর, শাশুড়ি, স্ত্রী এবং ছেলেকেও হেনস্তা করেছে পুলিশ।
যে মামলায় অর্ণবকে আটক করা হয়েছে সেটি বছর দুয়েকের পুরনো। রিপাবলিক টিভির সম্পাদকের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে শোধ না করা এবং আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ ছিল। আসলে ২০১৮ সালে মুম্বইয়ের এক ইন্টেরিয়র ডিজাইনার এবং তাঁর মা আত্মহত্যা করেন। মুম্বই পুলিশের দাবি, তাঁদের সুইসাইড নোটে নাকি বলা হয়েছিল, অর্ণব গোস্বামী ৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা শোধ না করায় আর্থিক অনটনে পড়তে হয়েছে, এবং সেকারণেই তাঁরা আত্মহত্যা করছেন। তারপরই অর্ণবের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপি এবং আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ দায়ের করেন ওই ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের ছেলে। গতবছর অবশ্য প্রাথমিক তদন্তের পর মামলাটি বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু নতুন সরকার আসার পর তা আবার চালু হয়। এবার এই মামলায় সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ। বুধবার সিআইডিই অর্ণবকে গ্রেপ্তার করেছে বলে খবর।
উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরেই আইনি জটিলতায় জড়িয়ে আছেন অর্ণব। টিআরপি কেলেঙ্কারিতে ইতিমধ্যেই তাঁর এবং তাঁর চ্যানেলের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। সম্প্রতি পালঘর সাধু হত্যা এবং বান্দ্রার পরিযায়ী শ্রমিক বিক্ষোভ মামলায় রিপাবলিক টিভির সম্পাদককে নতুন করে নোটিস পাঠিয়েছে মুম্বই পুলিশ। এবার আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় তাঁকে গ্রেফতার করা হল।
অর্ণবের গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি (Smriti Irani) বললেন,”যারা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা বলেন, আবার অর্ণবের গ্রেপ্তারি নিয়ে নীরব, তাঁরা আসলে অবদমনকে সমর্থন করছেন। হতেই পারে ওকে আপনাদের পছন্দ নয়, হতেই পারে ও আপনার চক্ষুশূল। কিন্তু এখন যদি আপনি মুখ না খোলেন, তাহলে আপনি ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করছেন। এরপর যদি আপনার সঙ্গে এমন হয়, তাহলে কী হবে?” আরেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর আবার বললেন,”মহারাষ্ট্রে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর এই হামলার প্রতিবাদ করছি আমরা। এভাবে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আচরণ করা ঠিক নয়। এটা আমাদের জরুরি অবস্থার কথা মনে করাচ্ছে। সেসময় সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে এই ধরনের আচরণ করা হত।” খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলছেন,”কংগ্রেস এবং সঙ্গীরা আরও একবার গনতন্ত্রকে লজ্জায় ফেলল। অর্ণব গোস্বামীর উপর আক্রমণ ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভের উপর হামলা। এটা আমাকে জরুরি অবস্থার কথা মনে করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করা হবে।”