মুর্শিদাবাদ জেলা ১৮ ই আগস্ট স্বাধীন হয় ৩ দিন পাকিস্তান থাকার পর

Spread the love

নিউজ ডেস্ক :-   গোটা  দেশজুড়ে ১৫ অগস্ট দিনটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। মুর্শিদাবাদের ক্ষেত্রে গল্পটা একেবারেই আলাদা। ৭০ বছর আগে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট থেকে টানা ১৭ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিন ধরে তৎকালীন স্যার সিরিল রাডক্লিপের নেতৃত্বে বাউন্ডারি কমিশনের সুপারিশ অনুসারে মুর্শিদাবাদ জেলা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তানে৷ আর পাল্টা খুলনা জেলা যুক্ত হয়েছিল ভারতের অংশে। সেই দিন ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট জেলার সদর শহর বহরমপুরের ব্যারাক স্কোয়ার মাঠে পাকিস্তানের নামে প্রথম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান পালন হয়। সবুজের মাঝে চাঁদ তারা আঁকা সেই দেশের জাতীয় পতাকা সরকারি ভাবে তুলেছিলেন সেই সময়ের মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক আইসিএস অফিসার আইআরখান। মঞ্চে তখন মুসলিমলিগ নেতা কাজেম আলী মির্জা, বামনেতা সনৎ রাহ,আরএসপি’র নিতাই গুপ্ত, কংগ্রেসের শ্যামাপদ ভট্টাচার্য, উপস্থিত।

বহরমপুরের খাগড়া এলাকার বাসিন্দা নব্বই ছুঁই ছুঁই ভবানী রায় জানান, সেই সময় শহরের প্রধান সরকারি দফতর ছাড়াও অনেকর বাড়ির ছাদে, আজকের জেলার অন্যতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেশরী বালিকা বিদ্যালয়, লন্ডন মিশনারী স্কুল সর্বত্রই পত পত করে উড়ে চলেছিল পাকিস্তানের পতাকা। জেলা জুড়ে চাপা উত্তেজনার পরিবেশ। বাড়ির বাইরে ওই কটা দিন পা ফেলার যো ছিল না। ১৪ অগস্ট মুর্শিদাবাদ পাকিস্তানে যোগ হবার এই খবর বাতাসে বিদ্যুতের গতিতে ছাড়িয়ে পরে। রাতারাতি তৈরি হয়ে যায় পাকিস্তানের পতাকা। তার পরের দিন জেলা জুড়ে বেড়ায় বিভিন্ন স্থানে মিছিল। স্লোগান উঠে “পাক পাক পাকিস্তান, মুর্শিদাবাদ আর নেই হিন্দুস্থান৷”

নবাবের শেষ বংশ ধর লালবাগের ছোটে নবাব বলে পরিচিত ( সৈয়দ রেজা আলী মির্জা) বলেন, “সে এক কঠোর সময়, অবশ্য আমাদের পূর্বপুরুষরা সর্বধর্ম সম্প্রীতি,ভাতৃত্ব বাদে বিশ্বাসী ছিলেন,যে কারণে তারা সেই সময় মুর্শিদাবাদকে ভারত ভূমিতে যুক্তরাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিল, যার ফলেই তিন দিন মুর্শিদাবাদ পাকিস্তানের মাটি বলে পরিচিতি লাভের পরে ভারতের সাথে যুক্ত হলে এই লালবাগ শহরেই ওয়াসেফ আলী মির্জার সহযোগিতায় ‘হিন্দু মুসলিম কনফারেন্স’ নামের সভার আয়োজন করা হয়েছিল যেখানে সব ধর্মের মানুষকে ডেকে আমন্ত্রিত করে জেলা জুড়ে সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া হয়৷” ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্টের এই ঘটনার দিনই দিল্লিতে তড়িঘড়ি কংগ্রেস নেতা শশাঙ্কশেখর সান্যাল, জনসংঘের শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় মুর্শিদাবাদকে ভারতের মধ্যে ঢোকাতে তৎপর হয়। চলে মরণ পণ চেষ্টা।

রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে যুক্তি দেওয়া হয়, গঙ্গা নদীকে ধরে ভৌগলিক সীমারেখা পুনরায় সংশোধন করে মুর্শিদাবাদকে ভারত উনিয়ন ও খুলনা জেলাকে পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করার। তা নাহলে কলকাতা বন্দরের অবস্থা আশঙ্কাজনক হবে। তিন দিনের টান টান উত্তেজনার মধ্যে দিয়ে ১৭ অগস্ট ১৯৪৭-এর সরকারি খাতায় ভারত ইউনিয়নে যুক্ত হয় ‘মুর্শিদাবাদ’। তুবও যেন পুরপুরি নিশ্চিন্ত হতে পারছিলেন না অনেকেই। পরের দিন ১৮অগস্ট গোটা জেলায় শুনসান আর আতঙ্কের পরিবেশ ভেঙে মুর্শিদাবাদে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা দিবস পালিত হল। বহরমপুর শহরের বুকে আরও একবার ব্যারাক স্কোয়ার মাঠে জেলাশাসক আইআরখান নিজে হাতে তুললেন ভারতের জাতীয় পতাকা। মঞ্চে সুধীর সেনের গলায় ভেসে উঠল গান। তাই মুর্শিদাবাদ পেল তার স্বাধীনতার সুখ একটু ‘বিলম্বিত’ ভাবেই।

সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.