বেলডাঙা কাণ্ডে বড়সড় সাফল্য পেল মুর্শিদাবাদ জেলা  পুলিশ ধরা পড়ল প্রধান অভিযুক্ত সায়ন হালদার

Spread the love

বেলডাঙা কাণ্ডে বড়সড় সাফল্য পেল মুর্শিদাবাদ জেলা  পুলিশ ধরা পড়ল প্রধান অভিযুক্ত সায়ন হালদার

*বেলডাঙ্গা কান্ড*

ওয়েব ডেস্ক –  বেলডাঙা কাণ্ডে বড়সড় সাফল্য পেল মুর্শিদাবাদ পুলিশ। পুলিশের হাতে ধরা পড়েছেন প্রধান অভিযুক্ত সায়ন হালদার। পুলিশের এই সাফল্যের বিষয়ে শান্তিসেতুর প্রতিবেদক নিশ্চিত হয়েছেন।

২০ বছর বয়সী ধৃত সায়ন হালদার কৃষ্ণনগর পলিটেকনিক কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বাড়ি বেলডাঙা থানার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কোনও পদে না থাকলেও সায়ন বিজেপির কট্টর সমর্থক এবং নরেন্দ্র মোদীর ভক্ত। অন্যদিকে, এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, বেলডাঙা ভারত সেবাশ্রমের মহারাজ স্বামী প্রদীপ্তানন্দ ওরফে কার্তিক মহারাজের অনুগামী এই সায়ন। পুলিশ জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমের নানারকম অপপ্রচারে প্রভাবিত হয়ে কুকীর্তিটি ঘটিয়েছেন সায়ন।

ঘটনার সূত্রপাত এ বছরের নভেম্বর মাসের ১৬ তারিখ, শনিবার। বেলডাঙার হরিমতি স্কুলের কাছে ছুতোরপাড়ার গণেশতলায় একটি কার্তিক পুজো মণ্ডপের আলোকসজ্জাকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা ৭টা ২৫ থেকে ৭টা ৩৫ নাগাদ ওই পুজো মণ্ডপের আলোকসজ্জার একটি চিনা ডিজিটাল লাইটবোর্ডে সামান্য কিছুক্ষণের জন্য মুসলিমদের উপাস্য আল্লাহ’র নামের সঙ্গে অশ্লীল কথা ভেসে ওঠে। পুজো কমিটি তৎক্ষণাৎ ডিজিটাল বোর্ডটি সরিয়ে দেয়। কিন্তু তার মধ্যেই সেই আলোকসজ্জার ভিডিও খুব দ্রুত ছড়িয়ে যায় সামাজিক মাধ্যমে। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়তেই মণ্ডপের সামনে দুই ধর্মেরই মানুষ জড়ো হতে শুরু করেন। উত্তেজনা ছড়ানোর উপক্রম হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেলডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় মুসলিম সম্প্রদায়ের যুবকরা অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।

ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে পুজো কমিটির চারজন পদাধিকারী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হলেও তাঁরা প্রত্যকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। অবশেষে, ঘটনার মূল অভিযুক্ত সায়ন হালদারকে পুলিশ পাকড়াও করেছে। পুলিশের এই বিরাট সাফল্যের বিষয়ে বলতে গিয়ে শান্তিসেতুকে এক পুলিশ কর্তা বলেন, “অভিযুক্তকে পাকড়াও করা সহজ কাজ ছিল না। ডিজিটাল বোর্ডটি ছিল একটি চিনা কোম্পানির তৈরি। সেই কোম্পানির অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপের মাধ্যমে বোর্ডে লেখা হয় এবং লেখা পরিবর্তন করা যায়। রাজ্য পুলিশের আইটি ডিপার্টমেন্টের বিশেষজ্ঞরা ব্যর্থ হলে প্রশাসনের তরফে যোগাযোগ করা হয় সেই ডিজিটাল বোর্ডের প্রস্তুতকারক চিনা সংস্থাটির সঙ্গে। দিল্লি থেকে তাদের প্রযুক্তিবিদকে পাঠায় সংস্থা। বিশেষজ্ঞ এসে ঘটনার দিন পর্যন্ত কোন কোন দিনে কোন কোন ডিভাইস থেকে লাইটটি অপারেট করা হয়েছিল সেই তথ্য উদ্ধার করেন। সমস্ত তথ্য খতিয়ে দেখা যায়, ১৬ নভেম্বর সন্ধে ৭টা ২৫ থেকে ৭টা ৩৫ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সায়ন তার মোবাইল থেকে অপকর্মটি ঘটিয়েছে্ন।

সায়ন হালদার টেকনিক্যাল বিষয়ে যথেষ্টই পারদর্শী। সংশ্লিষ্ট পুলিশকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী, “অভিযুক্ত এই অপকর্মটি করার সময় নিজের মোবাইল ফ্লাইট মোডে রেখে ওয়াইফাই ব্যবহার করেছিল। ফলে বহু কষ্ট করে তার মোবাইল আইপি সনাক্ত করা যায়। এরপর সিমের অনুসন্ধান করে অভিযুক্তের পরিচয় বের করা হয়। অভিযুক্তের কাছ থেকে মোট পাঁচটি সিম উদ্ধার করে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।”

এমন একটি কেসে অভিযুক্তকে সনাক্ত করার ক্ষেত্রে পুলিশের সফলতা পশ্চিমবঙ্গে প্রথম, সারা ভারতে দ্বিতীয়। এর আগে মহারাষ্ট্রে ডিজিটাল লাইট বোর্ডে লেখা পরিবর্তন করার অপরাধে অভিযুক্তকে সনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছিল। ধৃত সায়ন হালদারের পেছনে বড় কোনও মাথা ছিল কিনা সে বিষয়ে তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
-প্রতিবেদন , শান্তিসেতু

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.