আন্তজার্তিক নিউজ ডেস্ক,অয়ন বাংলা;- শান্তিপূর্ণ নিউজিল্যান্ড আজ অসান্ত,বর্ণবাদ ধর্মীয় মেরুকরনে আজ নিউজিল্যান্ড অশান্ত।
গত কাল নিইজিল্যান্ডের সাউথ আইল্যান্ডে দু’টি মসজিদে জুমার নামাজের সময় বন্দুকধারীর হামলায় ৪৯ জন নিহত হওয়ার ঘটনাটি হতভম্ব দেশটির সর্বস্তরের মানুষ। বিশ্বের অনেক দেশের মতো নিউজিল্যান্ডে বর্ণবাদের সমস্যা তেমন ছিল না। শান্তিপূর্ণভাবেই বিভিন্ন জাতি দেশটিতে বসবাস করত। নিউজিল্যান্ডে মুসলমানরা শান্তিপূর্ণ ও সহানুভূতিশীল হিসেবেই পরিচিত। ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে ভয়াবহ হামলার পর দেশটির এখন মুসলমানদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও আতঙ্ক।১৮৭০ সালে দেশটিতে ইসলাম ধর্মের বিকাশ শুরু হয়।
ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর ইউরোপ, এশিয়া, মিডলইস্ট ও আফ্রিকাসহ নানা দেশের বহু মানুষ এখানে এসে বসতি স্থাপন করে। নিউজিল্যান্ডে বর্তমানে মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় লাখখানেক। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের দেশটিতে ইসলামের প্রচার ও প্রসার হয় মূলত অভিবাসীদের মাধ্যমে। সে সময় স্বর্ণ অনুসন্ধানকারী পেশার ১৫ জন চীনা মুসলমান জীবিকার অন্বেষণে পাড়ি জমিয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডে। ওটাগোর ডানস্টানের স্বর্ণক্ষেত্রে তারা কাজ করতেন।পরে ১৯০০ সালের শুরুর দিকে গুজরাটের তিনটি মুসলিম পরিবার সেখানে বসতি স্থাপন করে। তারপর ১৯৬০ সাল পর্যন্ত সময়ে পূর্ব ইউরোপ এবং ভারত থেকে আসা আরও কিছু অভিবাসী মুসলমান সেখানে বসবাস শুরু করে স্থায়ীভাবে।নিউজিল্যান্ড সরকারের হিষাবমতে, ১৯৫০ সালে নিউজিল্যান্ডে মুসলমান অধিবাসী ছিল মাত্র ১৫০ জন। ১৯৬০ সালে এ সংখ্যা উন্নীত হয় ২৬০-এ। অভিবাসী মুসলমানদের বড় আকারে বসতি স্থাপন শুরু হয় ১৯৭০ সালে। সে সময় ফিজি থেকে আসা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলমানরা নিউজিল্যান্ডে বসতি স্থাপন শুরু করে। তাদের অনুসরণ করে ১৯৯০ সালের মধ্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত অনেক দেশের উদ্বাস্তু মুসলমানরা পাড়ি জমায় নিউজিল্যান্ডে। এরপর থেকেই নিউজিল্যান্ডে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে।
বর্তমানে নিউজিল্যান্ডে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় লাখের কাছাকাছি। ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করে এ দেশে এসেছেন, এমন অনেক যোগ্য ও অভিজ্ঞ আলেমও রয়েছেন দেশটিতে। তারা নিউজিল্যান্ডে ইসলাম প্রচার ও সেখানকার মুসলিমদের ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করার পেছনে দিন রাত শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।নিউজিল্যান্ডের প্রায় ৭৭% মুসলমান বিদেশে জন্মগ্রহণ করেছে, তাদের অধিকাংশই ভারতীয়।
অনুপাত হিসেবে মুসলমানদের মধ্যে ২৯% ভারতীয়, আর মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ২১%।ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রেও মুসলমানরা এগিয়ে রয়েছে। নিউজিল্যান্ডের মুসলিম কমিউনিটিতে তাদের আবাসস্থল ঘেঁষে মসজিদগুলো গড়ে তোলা হয়েছে। মসজিদসংলগ্ন কমপ্লেক্সে শিশুদের প্রাথমিক ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও বেশি কিছু হিফজখানাও গড়ে উঠেছে। কয়েকটি মসজিদের উদ্যোগে ‘সানডে স্কুল’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ছুটির দিন শিশুদের দিনব্যাপী ধর্মীয় শিক্ষা দেওয়া হয় তাতে। মুসলমানরা নিউজিল্যান্ডে শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের ধর্মীয় কার্যক্রম পরিচালনা করলেও ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে ভয়াবহ হামলা তাদের মধ্যে আতঙ্ক ও ভয় সৃষ্টি করেছে।