মুর্শিদাবাদের কান্দি শহরে পালিত নজরুল জয়ন্তী ।
শংকর দাস, কান্দি:
শংকর দাস,কান্দী :- ২৫ শে বৈশাখের পর আবার ১১ জ্যৈষ্ঠ, মোহনা সাহিত্য পরিবারের উদ্যোগে রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর শহর কান্দিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল নজরুল স্মরণ সন্ধ্যা। এদিনের নজরুল ইসলামের জন্ম জয়ন্তী অনুষ্ঠানটি ‘মোহনা সাহিত্য পরিবার’ এর উদ্যোগে কান্দি কমার্স কলেজের হল-ঘরে অনুষ্ঠিত হয়। কবিকে মাল্যদান ও উপস্থিত বিশিষ্টজনদের পুষ্পাঞ্জলি নিবেদনের মধ্যে দিয়ে আজকের অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। তারপরে উদ্বোধনী সংগীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পার্বতী শংকর রায়চৌধুরী। ‘নজরুল কেন প্রাসঙ্গিক’ শীর্ষক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি দেবদাস রজক, প্রাবন্ধিক শৈলেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, কবি শ্রীমন্ত সরকার, কবি ডা: দিলীপ কুমার ভট্টাচার্য, কবি হিলাল উদ্দিন শেখ, কবি শঙ্কর দাস, কবি বীরেন্দ্র নারায়ণ সিংহ। বিশিষ্টদের আলোচনায় কবি নজরুলের জীবনযাত্রার দীর্ঘ ইতিহাস প্রস্ফুটিত হয়।
কাজী_নজরুল_ইসলাম,জন্ম ২৪শে মে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে – বাংলা সন ১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬।
তাঁর জন্ম চুরুলিয়া গ্রামে,ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে পশ্চিম বর্ধমান জেলা,পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) এক গরিব পরিবারে। প্রথম জীবনে তাঁর নাম ছিল দুখু মিঞা। বিংশ শতাব্দীর আম বাঙালীর মননে বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলামের মর্যাদা,গুরুত্ব অপরিসীম। জাতিভেদ বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনিই তো লিখেছিলেন,”জাতের নামে বজ্জাতি সব,জাত জালিয়াত খেলছো জুয়া,ছুঁলেই তোর জাত যাবে? জাত ছেলের হাতের নয়তো মোয়া”……তাঁর কবিতা ও গানে ছড়িয়ে আছে সম্প্রীতির বার্তা, তাঁর জীবনবোধ আজো প্রাসঙ্গিক,তাই তিনিই বলতে পারেন,” হিন্দু, না ওরা মুসলিম,ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কান্ডারী বলো, ডুবিছে মানুষ,সন্তান মোর মার।” তিনিই গাইতে পেরেছিলেন , “গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে মহীয়ান আর কেহ নয়।” সেইসময়ে তিনিই তো তার বিদ্রোহী কবিতা লিখে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন বঙ্গ সংষ্কৃতির আঙিনায়,-” বল বীর, বলো চীর উন্নত মম শির, শির নেহারি আমার এই নত শির ওই শিখর হিমাদ্রির ” তার লেখা ‘মানুষ’ কবিতায় মানুষের প্রকৃত সংজ্ঞা পাওয়া যায়। আবার তিনিই কালি বা শ্যামা বন্দনায় লিখলেন,” বল রে জবা বল,কেমনে পেলি ওই রাঙ্গা মায়ের চরণ তল ” । প্রাবন্ধিক শৈলেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, কবি শ্রীমন্ত সরকার, প্রাক্তন বি.এম.ও.এইচ. ডা: দিলীপ কুমার ভট্টাচার্য সহ অন্যান্যরা তাদের আলোচনায় এভাবেই নজরুলের জীবন যাত্রা ও আদর্শ তুলে ধরেন। কবি নজরুল ইসলাম ছিলেন মানুষের মনকে ছুঁয়ে যাওয়া কবি, মানুষের হয়ে কথা বলার কবি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কবি, সাম্যবাদে বিশ্বাসী কবি, ধর্মনিরপেক্ষ ভাবনার কবি, নতুন ধারার শ্যামা সঙ্গীতের জনক, স্বাধীনতা সংগ্রামী কবি, তাইতো তিনি প্রতিবাদী কবি হিসেবে দুই বাংলার মানুষের হৃদয় জয় করে নিয়েছিলেন। বাংলা মাতৃভাষার দেশ বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
কবি শঙ্কর দাস তার বক্তব্যে বলেন, “কবি নজরুল ইসলাম মানুষকে নিয়েই চিন্তা করেছেন, মানুষকেই ভালোবেসেছেন, অন্যায়-শোষণ তিনি অন্তর থেকে কক্ষনো সহ্য করতে পারতেন না। সামাজিক শোষণের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা তিনি মন থেকে পেন ধরে কবিতার মধ্যে দিয়েই করেছেন এমনটা নয় অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ প্রতিবাদ করেছেন। হয়তো অন্তর থেকে এই শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রভাবশালীদের শোষণের প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই হয়তো শেষ জীবনে দীর্ঘ দিন তাকে মানসিক ও স্নায়বিক রোগে অসুস্থ হয়ে থাকতে হয়েছিল। এমন একজন প্রতিবাদী কবির ১২৪ তম জন্মদিন পালন করা আমাদের মত সাধারণ কবি লেখক শিল্পীদের কর্তব্য বলে মনে হয়। আমরা এমন কবির পুনরাবির্ভাব প্রার্থনা করি।”
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নজরুল সংগীতশিল্পী পার্বতীশংকর রায়চৌধুরী, তন্ময় চৌধুরী, কাবেরী চৌধুরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে নৃত্য পরিবেশন করে ক্ষুদে নিত্য শিল্পীরা। বিদ্রোহী কবি নজরুলের উপর স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি কবি স্বপন দাস, কবি ও চিত্র শিল্পী তরুণ দাস, কবি বিষ্ণুপদ সিংহ, কবি বীরেন্দ্র নারায়ণ সিংহ, অনুষ্ঠান সভাপতি ও বর্ষিয়ান কবি আদিত্যনাথ ঘোষ, কবি কৌশিক বরাল, কবি সাক্ষীগোপাল দেব, কবি যুথিকা ত্রিবেদী সহ আরো অনেকে। শতাধিক মানুষের সমাগমে এদিনের ‘নজরুল স্মরণ সন্ধ্যা’ শিরোনামের অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন কবি শৈলেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় ও কবি শঙ্কর দাস।